সাহরি ও ইফতার রোজার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাহরির মাধ্যমে রোজার সূচনা হয় এবং ইফতারের মাধ্যমে সমাপ্তি।
কিন্তু মানবিক প্রবৃত্তি, ভুল ধারণা ও স্থানীয় প্রচলনের কারণে সমাজের অনেকেই সাহরি ও ইফতারে বেশ কিছু ভুল করে বসেন। এ বিষয়গুলো পরিহার করলে রোজাগুলো আরও অনেক বেশি সুন্দর হবে।
তাই এ বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।
সাহরির ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো হয়:
১. সাহরি না করা। ঘরে খাবার থাকার পরও পানি বা অন্যকিছু দিয়ে নামমাত্র সাহরি করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহরি করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, আমাদের ও অন্যান্য কিতাবের অধিকারী জাতির (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার পার্থক্য সাহরি খাওয়া। -সহিহ মুসলিম
২. অর্ধ রাতের পূর্বে বা আজানের পূর্ব মুহূর্তে সাহরি খাওয়া। উভয়টিই সুন্নত পরিপন্থী কাজ। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাহরি বিলম্বে গ্রহণ কর। -সুনানে তিবরানি
সহিহ বোখারিতে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহরি ও নামাজের মাঝে পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত পরিমাণ সময় অবশিষ্ট থাকতো। আধুনিক যুগের ইসলামি স্কলারদের মতে পঞ্চাশ আয়াত তারতিল তথা যথা নিয়মে ধীরস্থিরভাবে তেলাওয়াত করতে বিশ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।
৩. আজান শোনার পরও খেতে থাকা। রোজা একটি ফরজ ইবাদত তাই তাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। সুতরাং আজান শোনার সাথে সাথে
খাবার পরিহার করতে হবে।
৪. সাহরিতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা। সাহরিতে অধিক খাবার গ্রহণ বান্দাকে রোজার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে দেয়। যেমন, শরীরে আলস্য তৈরি করে ফলে ইবাদতমুখী হতে পারে না, জৈবিক চাহিদা পায়, অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভব করা যায় না।
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেছেন, মানুষ স্বাভাবিক ক্ষুধায় যতোটুকু খাবার গ্রহণ করে সাহরিতে সেই পরিমাণ খাওয়া মুস্তাহাব। অর্থাৎ খুব বেশি বা কম নয়; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা।
৫. খেয়েই সাথে সাথে শুয়ে পড়া। এটাও সুন্নতের পরিপন্থী এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্তত মসজিদে যেয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা উচিৎ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে ফজরের নামাজ আদায় করে মসজিদে ইবাদত করতেন, সাহাবিদের দ্বীন শেখাতেন। সূর্যোদয়ের পর ইশরাকের নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরতেন।
ইফতারে যে ভুলগুলো হয়
১. ইফতারের সময় হয়ে যাওয়ার পরও ইফতার না করা। সাংসারিক কাজ বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দ্রুত ইফতারকারী কল্যাণ লাভ করতে থাকে। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
২. ইফতারের জন্য আজান শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা। অথচ অপেক্ষা করতে বলা হয়নি। কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান, কঠোরতা চান না।
৩. ইফতারে সময় আজানের উত্তর প্রদান না করা। রাসূলে আকরাম (সা.) রোজাদার ও রোজা নয় এমন সব ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যখন আজান শুনবে, মুয়াজ্জিন যেমন বলে তেমন বলবে। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
৪. ইফতারে অধিক সময় ব্যয় করা এবং নামাজ আদায়ে দেরি করা। জামাতে অংশগ্রহণ না করা। সহিহ মুসলিমে হজরত ইবনে আতিয়্যা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রাসূল (সা.) সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন।
৫. ইফতারের সময় দোয়া না করা। ইফতারের সময় আল্লাহতায়ালা দোয়া কবুল করেন। অথচ আমরা অনেকেই দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেই না। বিশেত নারীরা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। পিতামাতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া। ’ -মুসনাদে আহমদ
৬. ইফতারে অতিরিক্ত খাবারের আয়োজন করা এবং তা অপচয় করা। খাবারের জৌলুস রোজার সংযম ও ধৈর্যের শিক্ষার পরিপন্থী।
আল্লাহতায়ালাও অপচয় পছন্দ করেন না। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা খাও ও পান কর, অপচয় করো না। ’
আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক রোজাদারকে ইফতার ও সাহরির ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২২
এসআই