সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার চমৎকার সময় মাহে রমজান। রমজানে পরিবারের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো- সন্তানের সামনে রমজানের গুরুত্ব ও মর্যাদা তুলে ধরা।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের আগমনে সুসংবাদ তুলে ধরতেন এবং রমজানে আল্লাহ বিমুখতার ব্যাপারেও সতর্ক করতেন তার পরিবার ও সাহাবিদের।
রোজা একটি কষ্টসাধ্য শারীরিক ফরজ ইবাদত। রোজা পালনে মানুষের মাঝে ধৈর্য্য, সংযম, সহিষ্ণুতা ও ইচ্ছার দৃঢ়তার মতো মহৎ গুণাবলী সৃষ্টি করে। ছোট থেকে অভ্যস্ত না হলে বড় হয়ে রোজা রাখা কঠিন মনে হয়। তাই শৈশব থেকেই সন্তানকে রোজা রাখার প্রতি উৎসাহিত করুন।
সন্তানকে উৎসাহিত করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো- নিজে রোজা রাখা এবং রোজার আমলগুলোতে সন্তানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ইফতার, সাহরি, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাতে তাদেরকে সাথে রাখা। যেনো সে আমলগুলোর সাথে পরিচিত ও অভ্যস্ত হয়। আমলের গুরুত্ব ও মর্যাদা তার অন্তরে গ্রোথিত হয়।
সন্তানকে শৈশব থেকেই ইফতার ও সাহরিতে ডাকুন। হয়তো সে রোজা পূর্ণ করতে পারবে না; অথবা তাকে পূর্ণ করতে দেওয়া উচিৎ হবে না, তবুও সে রোজার মতো একটি আমলে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। আর এভাবেই সে রোজা সম্পন্ন করার মতো সামর্থ্য লাভ করবে। অন্তত সাহরি ও ইফতারের বরকত লাভ করবে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাহরির খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহতায়ালা ও তার ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন। -মুসনাদ আহমাদ
আধুনিক শিক্ষা কারিকুলামে কোরআন শিক্ষার উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই পবিত্র রমজানে সন্তানের কোরআন তেলাওয়াত বিশুদ্ধকরণ এবং তেলাওয়াতে অভ্যস্ত করা যেতে পারে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রমজান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখিনি। -সহিহ মুসলিম
কোরআনে নিজের পরিবার তথা সন্তান-সন্তুতি ও অধীনস্তদেরকে নামাজের নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, আপনার পরিবারকে নামাজের নির্দেশ দিন এবং তার ওপর আপনি অবিচল থাকুন। ’ -সূরা ত্বহা ১৩২
নামাজে অবহেলা করলে সন্তানকে শাসন করার নির্দেশনাও ইসলামি শরিয়তে রয়েছে। রমজানে মসজিদে যাওয়ার সময় বুঝমান শিশুকেও মসজিদে নিন। বিশেষত তারাবির জামাতে কিশোর সন্তানকে সাথে রাখুন। হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব অর্জনের আশায় রমজানে কিয়ামু লায়ল (সালাতুত তারাবি) আদায় করবে, তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। -সহিহ বোখারি
সহিহ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা প্রতিটি পুণ্যের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন এবং তিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন। সন্তানকে নেক কাজ ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থন করতে উৎসাহিত করুন। নবী (সা.) বলেছেন, এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরও অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জানো) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহতায়ালা কতো লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন -সুনানে তিরমিজি
রমজানে দানে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। নিজে দান করুন এবং সন্তানের হাতে দান করান। রমজানের আগমন উপলক্ষ্যে শিশু সন্তানকে উপহার দিন। এতে সে উৎসাহ লাভ করবে এবং মনে প্রশস্ততা সৃষ্টি হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেতো। -সহিহ বোখারি
সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় বিধি-বিধান শেখানো পিতা-মাতার দায়িত্ব। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার চাপে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। রমজানে তাকে ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে উৎসাহ দিন এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, শিক্ষা ও বিধানাবলী শিখতে পারে এমন পঠনসামগ্রী কিনে দিন।
মোটকথা পবিত্র রমজানে সন্তানকে এমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত করুন- যেমনটি তাকে আপনি সারা বছর দেখতে চান। এমনভাবে পরিচালিত করুন যেনো সে তাকওয়াপূর্ণ আদর্শ জীবনের সঙ্গে পরিচিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২২
এসআইএস