ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সফলতা থেকে লাইনচ্যুত

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সফলতা থেকে লাইনচ্যুত

ঢাকা: বাংলাদেশের হকিতে এ বছর শুরু হয়েছে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। কিন্তু বছর শেষে হতাশার চাদরে ঢেকে গেছে।

সিঙ্গাপুরে বিশ্ব হকি লিগে সফলতা দিয়ে সূচনা হয় ২০১৩। সেখানে তৃতীয় স্থ‍ানে থেকে শেষ করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

দক্ষিণ এশিয়ার হকিতে একসময়ের পরাশক্তি বাংলাদেশ রাউন্ড লিগের খেলায় গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়। সোনালী দিনের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছিল ওই টুর্নামেন্টে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ভারত ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হারে, আর ওমানকে ১-৪ গোলে উড়িয়ে দেয় জিমি-চয়নরা। শক্তিশালী চীনকে ৩-২ গোলে হারিয়ে আরেকটি চমক দেখায় তারা। বছর শুরুর এই টুর্নামেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল বড় কিছুর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড হকি লিগই হয়ে থাকল একমাত্র সফলতা।

এরপর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপ হকিতে বাংলাদেশের যুবারা বড় সাফল্য বয়ে আনেন দেশের জন্য। ফাইভ এ সাইড এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যুব হকি দল রানার্সআপ হয়ে দেশে ফেরে। সাম্প্রতিক সময়ে এটাই অনূর্ধ্ব ১৬ দলের সর্বোচ্চ সাফল্য। তরুণ প্রজন্মের এই সাফল্যে হকির প্রতি আগ্রহ বাড়ার সম্ভাবনাও হয়েছে। এই সাফল্যে যুব অলিম্পিকে সারাসরি খেলার সুযোগ পায় তারা।

দুটি টুর্নামেন্টের সফলতা শেষে দেখা দেয় বিশাল ভরাডুবির। মালয়েশিয়ার ইপোতে অনুষ্ঠিত নবম এশিয়া কাপে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শক্তিশালী কোরিয়ার কাছে ৯-০ গোলে হারের পর আশা জাগানিয়া ম্যাচে ওমানের কাছেও ৪-২ গোলে হেরে যায় তারা। ভারতের কাছে ৮-১ গোলে বিধ্বস্ত, এরপর জাপানের কাছেও ৩-০ গোলে হার। সব আশা শেষ হয়ে চাইনিজ তাইপেকে ৩-১১ গোলে হারিয়ে সপ্তম স্থানে থেকে শেষ করে হকি দল।

মাঠের ভেতরের এই হতাশা না কাটিয়ে উঠতেই বাইরের ঘটনা বিতর্কিত করে দেশের হকিকে। বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন পরিচালিত হচ্ছিল অনির্বাচিত এডহক কমিটি দ্বারা। কিন্তু এই কমিটি ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাহনী সমর্থিত প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ১৭ জুলাই খাজা রহমতউল্লাহ ফেডারেশনের দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

এই নির্বানকে ঘিরে কম জল ঘোলা হয়নি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় খবর ছিল মোহামেডান সমর্থিত ক্লাব জোট প্রার্থিতা প্রত্যহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ স্পোর্টিং, ওয়ারী ক্লাব এবং মেরিনার্স এই ক্লাব জোট একসঙ্গে কাউন্সিলরশিপ বিতর্ক এবং অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। এবং এই ক্লাব জোট ঘোষণা করে খাজা রহমতউল্লাহ এবং বর্তমান ফেডারেশনের অধীনে কোন কার্যক্রমে অংশ নেবে না। এর প্রতিবাদ স্বরুপ প্রিমিয়ার লিগের দলবদলে অংশ নেয়নি। সর্বশেষ বিজয় দিবস হকিতে খেলেনি এই চার ক্লাব।

আরও আলোচিত ছিল হকি খেলোয়াড়দের ক্যাম্প বর্জন। নানা অস্থিরতার কারণে দলবদল পেছাতে থাকলে আর্থিক সঙ্কট নিরসনে এই সময় হকি খেলোয়াড়েরা দলবলদের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এবং খেলোয়াড়েরা এশিয়া কাপের ক্যাম্পের মাঝেই ক্যাম্প বর্জন করে।

খেলোয়াড়দের ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ নাভিদ আলম নিজ উদ্যোগে খেলোয়াড়দের ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনায় বসতে গেলে তখনই বাধে বিপত্তি। খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি এবং সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের কাছে অপমানিত হন পাকিস্তানি কোচ। এই ঘটনার জের ধরে হকি ফেডারেশন বিভিন্ন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের বহিষ্কার করে। খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি রাসেল খান বাপ্পিকে আজীবন, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক প্রিন্স ১০ বছর এবং আশিকুজ্জামান, আসাদুজ্জামান চন্দন ও শামসুদ্দিন তুহিন পাঁচ বছরের জন্য ফেডারেশন থেকে বহিষ্কৃত হন।

ফেডারেশন এবং বর্তমান কমিটির বিপক্ষে সর্বদা সোচ্চার এবং দলবদলের আন্দোলনকারী দেশের সেরা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমিকে আবাহনী ক্লাবের কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ দোলন খুদে বার্তার মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে। এই ঘটনা বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনকে জিমি জানালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তাই হুমকি দাতার সন্ধান বের করে ফেডারেশন এবং শহীদুল্লাহ দোলনকে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সকল কার্যক্রম থেকে পাঁচ বছরের জন্য বহিষ্কার করে।

এই বছরে সবচেয়ে বড় আলোচিত খবর জাতীয় দলের সেরা চার খেলোয়াড়কে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মোতাবেক দেশের সেরা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমিকে জাতীয় দল থেকে তিন বছর এবং ঘরোয়া সকল টুর্নামেন্ট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং দেশসেরা গোলকিপার জাহিদ হোসেন এবং দলের সেরা ডিফেন্ডার ইমরান হোসেন পিন্টুকে জাতীয় দল থেকে তিন এবং ঘরোয়া হকি থেকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। শুধুমাত্র কামরুজ্জামান রানাকে জাতীয় দল থেকে দুই ও ঘরোয়া আসর থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

বাংলাদেশের হকিতে আরেকটি ভালো খবর হচ্ছে হাই-প্রোফাইল কোচ পাওয়া। পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত নাভেদ আলমকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় জাতীয় দলে। এর আগে বাংলাদেশে পাকিস্তানি কামাল ইব্রাহীম, আশফাকের মত কোচ এসেছিল। নাভেদ আলম ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি অলিম্পিকের মত বড় আসরে জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন। চীন জাতীয় দলের কোচিং করানো ছাড়াও পাকিস্তান জাতীয় দলের কোচিং স্টাফ ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩
সম্পাদনা: ফাহিম হোসেন মাজনুন, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।