ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সালতামামি

সর্বাধিক আলোচিত ড. ইউনূসের ‘আয়কর’ ফাঁকি

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৪
সর্বাধিক আলোচিত ড. ইউনূসের ‘আয়কর’ ফাঁকি

ঢাকা: আলোচনা, সমালোচনায় ২০১৩ সাল পার করেছে রাজস্ব আহরণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে ‘রাজস্ব’ ফাঁকি উৎঘাটন করায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার তোপে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।



সদ্য ঘোষিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বকেয়া করের জন্য ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদায়ী বছরের বাজেট ঘাটতি, বেশ কিছু গার্মেন্টস মালিক, শীর্ষ ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তার রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উৎঘাটন, ই-টিআইএন পদ্ধতি চালু ছাড়াও বেশ কিছু কারণে প্রায় আলোচনা-সমালোচনায় বছর পার করেছে এনবিআর।

চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি কাটাতে জনবল নিয়োগের সঙ্গে রাজস্ব খাতকে গতিশীল করতে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনা হয় সংস্থাটিকে।

তবে ২০১৩ সাল নিবার্চনী ও সরকারের শেষ বছর হওয়ায় হরতাল-অবরোধের কারণে বাজেট পূরণে অনেকটা আশঙ্কা প্রকাশ করছে এনবিআর ও অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। ফলে অন্য বছরে সফলতার তুলনায় বিফল পথেই হাঁটছে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত সংস্থাটি। ২০১৩ সালের সালতামামিতে এসব নানা বিষয়ের তথ্য তুলে ধরা হলো।

বাজেট ঘাটতি:
২০১২-১৩ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ ল‍াখ ৮ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা।

যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ২১ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৫.৭৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

উচ্চ বিলাসী বাজেট:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরকারের বিদায়ী বছর বিচার বিশ্লেষণ করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার খসড়া অর্থমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।

কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয় এনবিআর’র কথা অমান্য করে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করে। এ বাজেটকে এনবিআর সংশ্লিষ্ট ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা উচ্চ বিলাসী বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অব্যাহত রাজনৈতিক অস্থিরতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করা হয়েছে।

ড. ইউনূসের ‘আয়কর’ ফাঁকি:
নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বৈআইনিভাবে ‘আয়কর’ ফাঁকির অভিযোগ তোলে এনবিআর। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও বিদেশি গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে।

এনবিআর আয়কর ফাঁকির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া তা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার নিদের্শ দেন।

প্রতিবেদনে তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, ড. ইউনূস একজন সরকারি কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ইউনূস ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল অবধি ১৩৩টি বৈদেশিক প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানি, ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার ও ১৩টি বইয়ের রয়্যালিটি থেকে মোট ৫০ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৮৮ টাকা নিয়েছেন। এতে তিনি ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯৭ টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ড. ইউনূসের বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেননি। কিন্তু তিনি যেভাবে আয় করেছেন ও আয়কর অব্যাহতির সুবিধা নিয়েছেন, তা বিধিসম্মত হয়নি।

তিনি আয়কর দাখিলপত্রে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেননি। এ প্রতিবেদন নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার তোপে পড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। পরে রাজনৈতিক কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়।

গাজীপুর সিটি মেয়র মান্নানের ব্যাংক হিসাব জব্দ:
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সদ্য নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে বকেয়া ‘আয়কর’ পরিশোধ না করায় ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআর।

এ নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত এ সংস্থা। পরে সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বকেয়া কর পরিশোধ না করলে সম্পদ জব্দেরও হুমকি দেন।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, মান্নানের নিকট এনবিআর বকেয়া আয়কর ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০১ টাকা। এর মধ্যে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জন্য বকেয়া আছে ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮১ টাকা। বাকি পাওনা ২০১১-১২ অর্থবছরের।

মান্নান দাবি করেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন পদ্ধতিতে যে আয়কর বিবরণী দাখিল করেছেন তাতে ৮০ লাখ ১৪ হাজার টাকা আয় দেখিয়ে ৭০ হাজার ৪১৪ টাকা আয়কর দিয়েছেন।

২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবধি মান্নানের আয়ের পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ টাকা। এতে আয়কর ২২ লাখ ৪ হাজার ১৩৪ টাকা। এনবিআরের এ দাবির প্রেক্ষিতে আপিল করেন মান্নান।

আপিলের পর হিসাব শেষে তার মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। এতে তাকে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ টাকা আয়কর দিতে হলেও তিনি পুনরায় আপিল করেন।

২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবধি তার সংশোধিত আয় দাঁড়ায় প্রায় ৯৪ লাখ টাকা। বিপরীতে ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৮১ টাকা কর দাবি করে এনবিআর।

যার পুরোটাই বকেয়া আছে। মান্নান ২০০৭-০৮ অর্থবছরের সম্পদ বিবরণীতে যে তথ্য দিয়েছেন তার মধ্যে ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার অপ্রদর্শিত আয় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

বন্ড কেলেঙ্কারি:
শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় কিনে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে এক শ্রেণির নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। রাজস্ব বোর্ডের বন্ড কমিশনার হাফিজুর রহমান কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন করে এক বছরে ২১৭টি লাইন্সেস ইস্যু করেন।

পরে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযোগ পেয়ে ৩০টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে সাতটি অস্তিত্বহীন পায়। লাইন্সেস ইস্যুর টাকা নিয়ে স্কলারশিপের নামে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। প্রমাণ পাওয়ার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নিদের্শ দেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় পাঁচ হাজার আটশ বন্ড লাইন্সেসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে সরাসরি রপ্তানিকারক চার হাজার ১২ প্রতিষ্ঠান ও এক হাজার ৫৩৯টি প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান। বন্ড লাইন্সেসের অপব্যবহারে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।

চারটি মোবাইল কোম্পানির ৩১০০ কোটি টাকা কর ফাঁকি:
সিম রিপ্লেসমেন্টের (পরিবর্তন) নামের দেশের চারটি মোবাইল কোম্পানি প্রায় ৩১০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি উৎঘাটন করে রাজস্ব বোর্ড।

চারটি কোম্পানি রাজস্ব ফাঁকির এ টাকা না দিয়ে বাঁচতে বিভিন্ন মহল থেকে দেনদরবার শুরু করে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর দাবি, ২০০৫ সালের ১৩ জুন করা আইন অনুযায়ী সিম পরির্বতনে (রিপ্লেসমেন্ট) কোনো রাজস্ব দিতে হয় না।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণফোন সিম পরিবর্তনে নতুন গ্রাহকদের কাছে সিম বিক্রি করে ১৫৮০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, একটেল (রবি) ৬৫৫ কোটি টাকা, বাংলালিংক ৭৭৪ কোটি ৪ লাখ টাকা ও এয়ারটেল ৫২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সাল অবধি এ রাজস্ব ফাঁকি দেয়। এ নিয়ে এনবিআর মামলা করলে আদালত এডিআর’র মাধ্যমে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। তবে বকেয়া রাজস্ব আদায় না হওয়ার পেছনে চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সুবিধা নিয়েছেন বলে অনুসন্ধান করছে দুদক।

রিকন্ডিশন্ড গাড়িতে ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি:
বাজেটে রিকন্ডিশন্ড গাড়িতে অবচয় সুবিধা বাড়ানোয় সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এ নিয়ে এনবিআরকে চাপ প্রয়োগ করে সরকার।

জানা গেছে, এক শ্রেণির অসাধু রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ি বাজেটের আগে প্রায় সাত শ গাড়ি আমদানি করে। এসব গাড়িতে রাজস্ব ফাঁকি দিতে তা বন্দরে ফেলে রাখ‍া হয়। পরে এক শ্রেণির অসাধু রাজস্ব কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী অবচয় সুবিধা বাড়াতে বাধ্য করে।

সরকার চলতি বছর রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিতে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা বাড়িয়েছে। ফলে বন্দরে আগাম আমদানি করা গাড়িতে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়।

ই-টিআইএন পদ্ধতি চালু ও অটোমেশন:
২০১৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অটোমেশনের আওতায় আনা হয়। ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় অনলাইন ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ই-টিআইএন)।

এনবিআরের হিসেবে ৩৩ লাখ টিআইএনধারি হলেও সক্রিয় আছে মাত্র ১৭ লাখ। ডিসেম্বর অবধি মাত্র নয় ল‍াখ ই-টিআইএন নিবন্ধিত হয়।

ভূয়া টিআইএন শনাক্ত, আয়কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত ও টিআইএনধারির সংখ্যা বাড়াতে ই-টিআইএন চালু করে এনবিআর। সম্পূর্ণ অনলাইনে পুরোনো টিআইএন বদলে নতুন টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করা হয়।

এতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও ভোগান্তির পরিমাণ ছিল বেশি। সার্ভেয়ারে ভুল অপশন না, নিবার্চন কমিশনের সার্ভেয়ার সমস্যা, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধনের সুযোগ না থাকা, ওয়ার্ড ও থানা কোড সমস্যা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কোনো আলাদা অপশন না থাকা ছাড়াও বেশ কিছু সমস্যার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হয় করদাতারা।

ফলে সমালোচনার তোপে পড়ে এনবিআর। কারণ চলতি বছর ডিসেম্বর অবধি ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের সময় বেঁধে দেয় এনবিআর। তবে এবার সারাদেশে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় করদাতাদের মধ্যে ই-টিআইএন পদ্ধতি ব্যাপক সাড়া ফেলে।

এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অটোমেশনের অংশ হিসেবে শুল্ক ফাঁকি রোধে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে স্থাপন করা হয় ‘অটোমেটেড সিস্টেম ফর কাস্টমস ডাটা ডেভেলপমেন্ট (অ্যাসাইকুডা) সফটওয়্যার।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর):
রাজস্ব খাতে গতিশীলতা ও অনাদায়ি রাজস্ব আদায়ে ২০১২ সালের শেষ দিকে বিকল্প বিরোধী নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি চালু করে এনবিআর। এ পদ্ধতির মাধ্যমে মামলার জালে আটকে থাকা রাজস্ব মধ্যস্থতার মাধ্যমে আদায় করা যায়। ২০১৩ সালের অক্টোবর অবধি ১৯৭টি মামলা নিষ্পত্তি করে ৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে।

আরও ছয় শ কোটি টাকা আদায়ের কাজ এগোচ্ছে। আয়কর, শুল্ক ও মূসক বিভাগে প্রায় ২৮ হাজার মামলায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব অনাদায়ি আছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে অনাদায়ি রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করছে এনবিআর।

ঢাকা ওয়াসার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ:
বকেয়া কর ১৭৩ কোটি ৬০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ না করায় ঢাকা ওয়াসার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ নিয়ে এনবিআর-ওয়াসার মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়।

এনবিআর সূত্র বলছে, ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জুন মাস অবধি ঢাকা ওয়াসার কাছে এ কর পাবে। বকেয়া পরিশোধের জন্য ওয়াসাকে ১৪ বার চিঠি দিলেও ওয়াসা কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তাদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। পরে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করলে সেই রায়ও এনবিআরের পক্ষে যায়।

পঁচিশ হাজার অভিজাত ফ্ল্যাট বাড়ি খোঁজ:
২০১২ সালে সারাদেশে প্রায় দুই লাখ অভিজাত ফ্ল্যাট বাড়ি বিক্রি হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সারাদেশে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব বাড়ির খোঁজ পায়। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আছে ২৫ হাজার। এসব বাড়ির মালিকের বেশি টিআইএনও নেই।

যার বেশির ভাগ মালিক সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকার, ব্যবসার্য়ি ও রাজনীতিবিদ। এ ছাড়া সারাদেশে আট ল‍াখ বাড়ি ও ফ্ল্যাটের ওপর জরিপ চালিয়ে তিন লাখ বাড়ি ও ফ্ল্যাট মালিকের কোনো টিআইএন নম্বর পায়নি। এর মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আছেন ৬০ হাজার ফ্ল্যাটের ক্রেতা।

এ ছাড়া ২০১৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেশ কিছু সফলতাও আছে। এর মধ্যে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (আরইবি) বিরুদ্ধে মিটার ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটে মোট ১১১ কোটি রাজস্ব ফাঁকি উৎঘাটন করে। সারাদেশে প্রায় ছয় হাজার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের লিয়াজোঁ অফিসকে করজালের আওতায় আনা হয়েছে।

কারনেট সুবিধার অপব্যবহার করে আনা শুল্কমুক্ত ১১৪টি গাড়ি দেশের দু বন্দরে আটক করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত এগারোটি কাস্টমস হাউস ও দুটি বিমান বন্দরে এ বছর প্রায় ২১০ কেজি স্বর্ণবার, ৫৪৮ গ্রাম ডায়মন্ড এবং বিপুল অর্থের বৈদেশিক মুদ্রা আটক করে।

২০১৩ সালেই প্রথমবার সারাদেশে আয়কর প্রদর্শনী হয়। এ ছাড়া বেশ কটি গার্মেন্টস, গার্মেন্টস মালিক, শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তার মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উৎঘাটন করে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা।

নিবার্চনী বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা কারণে রাজস্ব সংগ্রহ তুলনামূলক কমে গেছে। জুলাই-অক্টোবরে ৩৬ হাজার ৬১২ কোটি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৩ হাজার ৪৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিদিন হরতাল, অবরোধে প্রায় দুই শ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে কি-না বলে মনে করছে এনবিআর ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৪
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।