নাটোর: আমরা এখন ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
তিনি বলেছেন, আমরা একটি দুঃস্বপ্নের পর শান্তি ও স্বস্তির মধ্যে থাকতে চেয়েছি।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে নাটোর শহরের অনিমা চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। জিয়া পরিষদ নাটোর এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন ও সঞ্চালনায় ছিলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. শরিফুল ইসলাম।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের জনগণ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন দেখতে চেয়েছে, সেই সঙ্গে একটি ভালো সরকারও চেয়েছে। অবশেষে দেশের মানুষ একটি অন্তর্বর্তী সরকার পেয়েছে। এ সরকারের দায়িত্ব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। কেননা দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন জাদুঘরে চলে গেছে। সেই জাদুঘর থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের ওপর দেশের মানুষ বিশ্বাস রেখেছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ডিসেম্বর না জুন, ডিসেম্বর না মার্চ বলা হয় তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের আস্থা অনেকটাই দুর্বল হয়ে যায়।
কেউ কেউ বলছেন সংস্কার না করে নির্বাচন করলে যে দল ক্ষমতায় আসবে, হলে সেই দল পরবর্তী সময়ে সংস্কার করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সংস্কার হলো রাজনৈতিক অঙ্গীকার। যদি একটি দল একটি অঙ্গীকার করে নির্বাচিত হয় তাহলে সেই দল তা পূরণ করবে না কেন? সংস্কার তো পার্লামেন্টে গিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। পার্লামেন্টে পাস করতে হবে। তাহলে এ ধরনের ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি তৈরি করে কার উপকার বা লাভ হচ্ছে?
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রামে যে সমস্ত দল ও সর্বশেষ ছাত্র-জনতা আমরা একসঙ্গে লড়াই করেছি। এখন আমাদের মধ্যে যদি ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে তাহলে ফ্যাসিবাদ তো উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেই এবং সেটা এ দেশ, জাতি, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য মঙ্গলকর হবে না।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, দেশকে তাঁবেদারি রাষ্ট্র হিসেবে মনে করতো পার্শ্ববর্তী দেশ (ভারত)। কে তাদের আনুগত্য করবে, পক্ষে থাকবে; তাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশকে তাদের কব্জায় নিতে চেয়েছিল। এজন্যই দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এক ভয়ংকর দানবীয় ফ্যাসিস্টের পতন হলো এবং সে (শেখ হাসিনা) পালিয়ে গেল সেই দেশে (ভারতে)। এরপর সেই দেশের মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার শুরু করলেন। তারা বলতে লাগলেন—‘বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের আস্তানা’। যেই গুম-খুনের মধ্য দিয়ে রক্তগঙ্গা বয়িয়ে ক্ষমতার সিংহাসন ধরে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা, সেই তাকেই তারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে টিকিয়ে রেখে বাংলাদেশকে পুনরায় তাদের কব্জার নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের (ভারত) পররাষ্ট্রনীতি, অভ্যন্তরীণ নীতি, বাণিজ্যিক নীতি যা হবে, সেটাই বাংলাদেশকে মানতে হবে! তারা সেটাই করতে চেয়েছিল এবং অনেকটাই সফলও হয়েছিল শেখ হাসিনার মাধ্যমে। তাই শেখ হাসিনা শূন্য বাংলাদেশ তাদের (ভারত) জন্য খুবই মনো ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেমিনারের প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন— বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জিয়া পরিষদের রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, রাজশাহী জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিল্পব, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন— জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান খান বাবুল চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম আফতাবসহ পরিষদের নেতারা।
সেমিনার শেষে একটি মিছিল বের করে বাজার প্রদক্ষিণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৫
এসআরএস