বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা যেভাবে পালিয়েছেন তার দায় তার ও তার দলের নেতাকর্মীদের। কারণ তাদের অপকর্ম, স্বৈরাচারী মনোভাব ও ফ্যাসিবাদ কায়েম এত উচ্চাভিলাষী পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে মানুষকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।
যারা এখনো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। কারণ যে নেত্রী নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে তারই কথায় আবার পুনর্বাসন ও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনা ফিরে আসার জন্য যে চিন্তা করছে এই প্রজন্মের সঙ্গে লড়াই করে এটা কখনোই সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পড়ে পালিয়ে যাওয়ার দিন কয়েক লাখ মানুষকে মেরে যদি শেখ হাসিনার থাকার সুযোগ হত তাহলেও সে সেটাই করত। এমন একজন ঘৃণ্য গণহত্যাকারী ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলাদেশকে নরকে পরিণত করেছে। এত হত্যাকাণ্ডের পরও আওয়ামী লীগ ন্যূনতম কোনো অনুশোচনাবোধ প্রকাশ করেনি। একটা দল কতটা হিংস্র হলে এটি সম্ভব?
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর মহানগরীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি আমাদের নিয়মতান্ত্রিকতার বিষয়গুলো বলেছেন যে একটি মামলা হুট করে নিষ্পত্তি করে দিতে পারেন না বা সুপারিশ করতে পারেন। শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়নি। একটি বিপ্লব, আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান নিয়মকানুন মেনে হয় না। সবকিছুর বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে তারা গণঅভুত্থানকে ধারণ করে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
জুলাই আন্দোলন নিয়ে ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, কারো ইশারা-ইঙ্গিতে বাধ্য হয়ে বলেছেন কিনা বা কারো মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে বলেছেন কিনা এটা যথেষ্ট পর্যালোচনার দাবি রাখে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন আহত হয়েছেন এবং তারা সম্পৃক্ত ছিলেন এর সাথে বেঈমানি সূচক শব্দ। তবে তিনি ভুল স্বীকার করে নেওয়ায় আমরা স্বাভাবিকভাবে নিয়েছি।
শিবির সভাপতি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি পরিচালনা করতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় তাদের এই প্রজন্মের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা ও ৫ই আগস্টের চেতনাকে অনুধাবন করতে হবে। তাহলে তারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি করতে পারবেন। যারা স্বল্প সময়ের জন্য কিছু চাইবে তারা জেনারেশনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে।
রংপুর অঞ্চলের প্রতি উন্নয়ন বৈষম্য নিরসনে কাজ করার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাবো এবং পরবর্তীতে যারা সরকার গঠন করবে তাদের অনুরোধ করব এখানে শিক্ষা অবকাঠামো সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়ার। উন্নয়নের জায়গায় এখানে বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে ছাত্রশিবির সুযোগ ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিবিরের কেন্দ্রীয় দাওয়াহ সম্পাদক হাফেজ মেসবাহুল করিম, মহানগর সভাপতি নুরুল হুদা, সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সোহেল রানা, কারমাইকেল কলেজ সভাপতি মেহেদী হাসান।
এর আগে তিন দিনের সফরে রংপুরে আসেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি। সফরকালে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনারে অংশ নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
আরএ