ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

সারাদেশ

মেরে বোনের দাঁত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ প্রধান  শিক্ষকের বিরুদ্ধে 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
মেরে বোনের দাঁত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ প্রধান  শিক্ষকের বিরুদ্ধে  সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল

সিরাজগঞ্জ: পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের জন্য আপন বড় বোনকে মারধর করে দাঁত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সাইদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।  

গুরুতর আহত বড় বোন মনোয়ারা বেগম সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তার দুটি দাঁত ভেঙে গেছে।  

এ ঘটনায় গত ২০ এপ্রিল ভিকটিমের স্বামী আব্দুল মজিদ বাদী হয়ে ছয় জনকে আসামি করে বেলকুচি থানা আমলি আদালতে মামলা করেছেন।  

আসামিরা হলেন- রান্ধুনীবাড়ী আলিমুদ্দিন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম, তার ভাই সাইফুল ইসলাম, ভাতিজা শরিফুল ইসলাম (সোহান), ফজিয়া খাতুন, সাহানা খাতুন ও সুমি খাতুন।  

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চক মকিমপুর গ্রামে পৈত্রিক সম্পত্তিতে ৩০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন মনোয়ারা বেগম। কিন্তু বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে দীর্ঘদিন থেকেই ষড়যন্ত্র করছেন সাইদুল মাস্টার গং। তারা কৌশলে বোনদের বাদ দিয়ে সব সম্পত্তি নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন।  

অপরদিকে মনোয়ারাকে তার বাবার বাড়ি থেকে উচ্ছেদের জন্য হুমকি-ধামকি হামলাসহ নানা অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। নিরাপত্তার জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আদালতে শান্তি রক্ষায় মামলা করেন মনোয়ারা। এ কারণে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে পিবিআই তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। মামলাটি আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।  

এদিকে বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে ভাইয়েরা ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর হঠাৎ করে ১৯৮২ সালের একটি দলিল দেখিয়ে বলে তোমাদের অংশ ৪২ বছর আগেই আমাদের লিখে দিয়েছ। অথচ ১৯৮২ সালে মনোয়ারা বেগম ছিলেন ৭ বছর বয়সী নাবালিকা। তাকে এবং তার বড় বোন জাহানারা খাতুনকে দাতা দেখিয়ে জাল দলিল উপস্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।  

মামলাটি তদন্ত শেষে ১৯৮২ সালের ২৪১১ নম্বর দলিলটি জাল বলে প্রমাণ পায় সিআইডি। এভাবেই বোনকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন সাইদুল ইসলাম গং।  

সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ১১টার দিকে সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে অন্যান্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মনোয়ারার ওপর হামলা চালায়। গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে মাথায় কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করা হয় এবং লোহার রড দিয়ে মারধরের একপর্যায়ে মনোয়ারার ওপরের দুটি দাঁত ভেঙে যায়। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মনোয়ারাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা।  

সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মিতুল ভৌমিক বলেন, আঘাতে মনোয়ারার দুটি দাঁত ভেঙে গেছে। বর্তমানের তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।  

বেলকুচি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল বারেক বলেন, চক মকিমপুর গ্রামের একজন নারীকে মারধর করে আহত করার কথা আমরা শুনেছি। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা হয়েছে। পিটিশনটি থানায় এলে তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম বোনকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ভাবি আর ভাতিজিদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে মাত্র। তিনি বলেন, বোনকে সম্পত্তি দেওয়ার জন্য আমি অজু করে বসে আছি। আমার সাত বোনকেই জমিজমা বুঝিয়ে দিয়েছি। এই বোনটা কেস করার কারণে বুঝিয়ে দেয় নাই। তাকে বললাম কেস তুলে নিয়ে সম্পত্তি বুঝে নাও। তার কথা বাড়ির ভাগ নেব।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।