ময়মনসিংহ: প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৩) হত্যাকাণ্ডে জড়িত বৈষম্যবিরোধী নেতাদের যেন মামলায় আসামি করা না হয়, সে জন্য প্রেসার ক্রিয়েট (চাপ সৃষ্টি) করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
তিনি বলেন, ‘পারভেজ হত্যার পরপরই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি বনানী থানায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছে।
‘কিন্তু পরে যখন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ হলো, তখন দেখা গেল বৈষম্যবিরোধী নেতাদের দুজন এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এবং বেশ কয়েকজন আশপাশে ছিল। এরপর থেকে তাদের কোনো স্টেটমেন্ট নেই’, বলেন রাকিব।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরোনিয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে পারভেজের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব আরও বলেন, ‘তাদের (বৈষম্যবিরোধী) সংগঠনের যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছে, আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অভিজ্ঞতা কম। আমি বিশ্বাস করি, তারা ধীরে ধীরে নেতৃত্বের পরিপক্বতা লাভ করবে। কিন্তু তারা এ পর্যায়ে নেতৃত্বের ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে। আশা করছি, একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে এ ধরনের মিথ্যাচার করায় তাদের ওপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে সামান্যতম আস্থা ছিল, সে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। যে কোনো ঘটনায় আমি তাদের সঠিক তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানাই এবং যে কোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। তাদের নেতাকর্মী যে-ই হোক না কেন, যেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় ‘
‘তারা শুরুতে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করার ভুল করেছে, তারা যেন সেই ভুল শুধরে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে পারভেজের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখে,’ বলেন রাকিব।
তিনি বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৫ বছরে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ক্যাম্পাসে ‘মব কালচার’ তৈরি করেছিল। সে বাস্তবতায় এখনও বাংলাদেশের অনেক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কিছু অনুসারী স্বপ্ন দেখে, তারা আবার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবে। দুই হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা হত্যার পরও তাদের এমন আশা কীভাবে সম্ভব? এজন্য জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যেসব নেতৃত্ব অগ্রভাগে ছিল, তাদের অনেক বড় দায় রয়েছে। তারা যেন যে কোনো ছোটখাটো বিষয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখায়—যার ফলে ‘‘মব কালচার’’ তৈরি হয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড জাতি তাদের কাছে প্রত্যাশা করে না ‘
ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক মিছিল প্রসঙ্গে রাকিব বলেন, ‘বাংলাদেশের যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামান্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে, তাতে ছাত্রদলের কোনো সমর্থক জড়িত থাকলেও পুরো ছাত্রদলকে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়। বিগত সময়ে ছাত্রলীগের কালচারের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিগত নয় মাসে আমরা প্রমাণ করেছি। লাখ লাখ নেতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামতে এবং শিক্ষার্থীদের সহায়ক হিসেবে ছাত্ররাজনীতি প্রস্তুত করতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দেশের সব জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অথচ যারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী বা বিগত আন্দোলনের স্টেকহোল্ডার দাবি করে, তাদের উদাসীনতা ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের কারণেই আপনারা দেখেছেন-ঢাকার রাজপথে আবার ছাত্রলীগ মিছিল শুরু করেছে।
এজন্যই জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ‘‘তথাকথিত’’ স্টেকহোল্ডারদের দায় আছে। কারণ বিগত নয় মাসে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাদের কোনো কার্যকর অবস্থান ছিল না, শুধুমাত্র শাহবাগ থানায় একটি মামলা এবং ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবির বাইরে। ’
এর আগে এদিন দুপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সহসভাপতি ইজাজুল কবীর রুয়েল ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরোনিয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে পারভেজের কবর জিয়ারত করতে আসেন। এতে ময়মনসিংহ দক্ষিণ, উত্তর ও মহানগরসহ ভালুকা উপজেলা ছাত্রদলের শত শত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ছাত্রদল নেতারা নিহত পারভেজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বাবা জসীম উদ্দিন এবং মা পারভীন ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা বলেন এবং সব সময় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
এতে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি নাইমুল করিম লুইন, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেন রবিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাবরুর রহমান রানা, সাধারণ সম্পাদক দাঈদ রায়হানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৯ এপ্রিল বিকেলে বনানীর প্রাইম এশিয়া ইউনির্ভাসিটির ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়। এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছুরিকাঘাতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ খুন হন। টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বহিরাগতদের নিয়ে এসে বুকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে পারভেজকে।
এ ঘটনায় ২০ এপ্রিল পারভেজেরে চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বনানী থানায় আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়।
২৪ বছর বয়সী পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়।
আলোচিত হত্যা মামলায় প্রধান আসামিসহ মোট ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তারা হলেন-প্রধান আসামি মেহেরাজ ইসলাম (১৯), মাহাথির হাসান (২০), হৃদয় মিয়াজি (২৩), মো. আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল আমিন সানি (১৯)
আরও পড়ুন:
বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হত্যা
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় তিন আসামি সাতদিনের রিমান্ডে
শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যার প্রধান আসামি মেহেরাজ গ্রেপ্তার
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
এসআই