পঞ্চগড়: বিভিন্ন দাবিতে ভারতের অভ্যন্তরে ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে শ্রমিক ও সিঅ্যান্ডএফ সদস্যদের আন্দোলনের কারণে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ঢুকতে পারেনি ভুটান থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথরের ট্রাক।
ভারতের নতুন এ জটিলতায় স্থবিরতা দেখা গেছে বন্দরে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, ইয়ার্ড প্রায় গাড়ি শূন্য। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা অবসর সময় পার করছেন।
জানা গেছে, ঈদের ১০ দিন সরকারি ছুটি শেষে রোববার (১৫ জুন) আবার সচল হয় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।
চালুর প্রথমদিনে ভুটান থেকে ২০টি ট্রাকে বোল্ডার পাথর আমদানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে নেপালে ১১টি ট্রাকে পাট রপ্তানি করা হয় এ বন্দর দিয়ে।
তবে পুরোপুরি কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দিনে নতুন এক জটিলতা তৈরি হয়েছে এ স্থলবন্দরে। ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিক ও সিঅ্যান্ডএফ এসোসিয়েশনের সদস্যদের আন্দোলনে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভুটান থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথরের কোনো ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে পারেনি।
ব্যবসায়ী ও বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছলের গত ৪ মে ভারতীয় পাথরের ৪৬টি ট্রাক বন্দরে ঢোকে। এদিকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া ও কোয়ালিটি সম্পন্ন পাথর না দেওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরদিন ৫ মে থেকে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করেন বাংলাদেশের আমদানিকারকরা। তবে স্বাভাবিক ছিল ভুটান থেকে বোল্ডার পাথর আমদানি। এদিকে সোমবার সকাল থেকে ভারতের ফুলবাড়ী ২ বর্ডার লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও ফুলবাড়ী এক্সপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফুলবাড়ী ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশন এবং ফুলবাড়ী সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন নানা দাবি নিয়ে ফুলবাড়ী বন্দরের সড়কে অবস্থান নিলে আটক পরে ভুটানের ট্রাক।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ভারতে আন্দোলনের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভুটান গাড়ি, ফুলবাড়ী বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ভুটান গাড়ি ফুলবাড়ী পোর্টে ড্যাম করতে হবে, আর ইন্ডিয়ান গাড়িতে বাংলাদেশে মাল নিতে হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় বন্দরের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের যে আন্দোলন এটা অযৌক্তিক আন্দোলন। আমরা যখন ভুটান থেকে আমদানি করি তখন সব ধরনের ট্যাক্স দিয়েই আমদানি করি। এদিকে ভুটানের সঙ্গে ভারতের চুক্তিবদ্ধ আছে। কিন্তু ভারত যে দাবিটি তুলেছে, ভুটান থেকে আমদানি করা মালামাল ভারতে নামিয়ে সেখান থেকে তাদের গাড়িতে বাংলাদেশে আনতে হবে, সেটি অযৌক্তিক। কারণ এটি হলে আমাদের খরচ অনেকটা বেড়ে যাবে। এতে পাথরের দামটাও অনেকটা বেড়ে যাবে। লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। তাই আমরা ভারতের সরকারকে বলতে চাই ফুলবাড়ী স্থলবন্দরে দুদিন পরপর অযৌক্তিক এমন আন্দোলন বন্ধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সিবরাতুল্লা বিপু ও সুমন আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, দুদিন পরপর তারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করে। কিছুদিন আগে স্লট বুকিং নিয়ে আন্দোলন করেছে। দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা বাদ দিয়ে শুধুই তারা আন্দোলনমুখী হয়ে উঠেছে। আমরা ভুটানের কাছ থেকে যেমন পাথর আমদানি করি, তেমনি ভারত থেকেও করতে চাই। যা আগে করা হয়েছে। মূলত তারা মাটি মিক্স করা পাথর দেয় ও অতিরিক্ত দাম নেয়। এতে আমাদের লোকসান হয়। তাই খারাপ মালামাল দেওয়ায় আমরা তাদের কাছ থেকে পাথর কিনছি না। তারা যদি ভালো মানের পাথর ভুটানের মতো করে দিত, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকত না। তারাই খারাপ মাল পাঠাচ্ছে এবং উল্টো নানা দাবিতে তারা আন্দোলন করে ব্যবসায়িক লোকসান করাচ্ছে দুই বন্দরে। যেহেতু আন্তর্জাতিক বিষয় সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত যেন সমাধান হয়।
বন্দরের শ্রমিক নেতা বদিউজ্জামান বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, এ বন্দরে দুটি শ্রমিক সংগঠনের প্রায় এক হাজারের শ্রমিক কাজ করেন। সবাই বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে একের পর এক কৃত্রিম সংকট ও সমস্যা তৈরি করছে। অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। আমাদের দাবি, দ্রুত সব সমস্যা যেন সমাধান হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা যাতে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চালাতে পারেন সেজন্য উভয় দেশের সরকার যেন সচেষ্ট হয়। ।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের ছুটি শেষে বর্তমানে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। আমরা যেটা জেনেছি, ভারতের সঙ্গে পাথরের মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারতের পাথর আমদানি বন্ধ থাকলেও এর মাঝে শুধু ভুটান থেকে পাথর আমদানি হয়ে আসছিল। আজ শুনেছি, ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে না দিলে ভুটানের ট্রাক বাংলাদেশে আসতে পারবে না। এমন দাবি নিয়ে ভারতে আন্দোলন চলছে। আমরা আশা করছি, এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।
এসআই