সিলেট: সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে গাছের সঙ্গে ঝুলছিল বাংলাদেশি যুবক জাকারিয়ার (২৫) মরদেহ।
শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর ১টার দিকে ওই যুবকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
হস্তান্তর কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত পিলার ১২৫৭/১-এস এর কাছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) উপস্থিতিতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে ভারতের পিনারসালা থানা পুলিশ। পরে মরদেহের সুরতহাল করার জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সুরতহাল করার পর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।
সিলেট জেলা পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনাস্থল থেকে ভারতের পিনারসালা থানা দূরবর্তী এবং ঘটনাস্থলটি দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। যে কারণে মরদেহটি হস্তান্তর করতে বিলম্ব হয় বলে বিএসএফ কর্তৃক জানানো হয়। তবে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও সুস্পষ্ট ধারণা পায়নি পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র হতে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, জাকারিয়া আহমেদ সম্ভাব্য পারিবারিক সমস্যা জনিত কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, বলেও জানায় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বেলা পৌনে ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের উৎমা বিওপি ও ব্যাটালিয়ন বিএসএফের টোকা ক্যাম্পের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১২৫৮/২০-এস হতে আনুমানিক ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে গাছের সঙ্গে দড়িতে জাকারিয়ার মরদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত জাকারিয়া আহমদ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার লামাগ্রাম কামাল বস্তির মো. আলাউদ্দিনের ছেলে।
ঘটনার পর থেকে জাকারিয়ার মরদেহ ফেরত আনার ব্যাপারে বিজিবি কর্তৃক বিএসএফ এর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর ১টার দিকে সীমান্ত পিলার ১২৫৭/১-এস এর কাছে বিজিবি-বিএসএফ-এর উপস্থিতিতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় পুলিশ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিজিবি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এদিন দুপুর ১২টার দিকে জাকরিয়ার চাচা মো. গিয়াস উদ্দিন এসে জানান, তার ভাতিজা (জাকারিয়া) সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন। এরপর স্থানীয় লোকজন সীমান্ত পিলার ১২৫৮/২০-এস হতে আনুমানিক ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে একটি গাছের সঙ্গে তার মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে বিজিবি পুলিশি সহায়তার জন্য থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেয়।
পরে বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জাকারিয়ার বিষয়টি বিএসএফকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করলে বিএসএফ মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারতের পিনারসালা থানাকে জানায়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেখানকার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করে। বিএসএফের সহায়তায় পিনারসালা থানা পুলিশ শুক্রবার মরদেহটি সুরতহাল প্রতিবেদন করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরে বিজিবি ও বিএসএফের আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় শুক্রবার (২০ জুন) সকালে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে ভারতীয় পুলিশ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করবে।
বিজিবি জানায়, জাকারিয়া আহমেদ পারিবারিক সমস্যার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় ভারতের অভ্যন্তরে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে, বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে।
এদিকে, নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে জাকারিয়া বিয়ে করছিল বলে জানা গেছে।
সিলেট কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ জানান, বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সীমান্তের পিলারের ওপারে জাকারিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে দেশে হস্তান্তর করা হয়। নিহত জাকারিয়ার পরিবার থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনইউ/আরআইএস