সাতক্ষীরা: ব্রিজ নির্মাণের সময় অনুসরণ করা হয়নি সিএস রেকর্ড। নেওয়া হয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামতও।
মাত্র এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে ব্রিজ সাতটি ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম। জেলা সদরে আসতে চার-১০ কিলোমিটারের পরিবর্তে তাদের পাড়ি দিতে হচ্ছে ২০ কিলোমিটারেরও বেশি। এতে দুর্ভোগের পাশাপাশি সময় ও খরচও বেড়েছে স্থানীয়দের।
ভেঙে পড়া ব্রিজগুলো হলো-বাকড়া ব্রিজ, টিকেট ব্রিজ, হিজলডাঙ্গা ব্রিজ, চরগোবিন্দপুর ব্রিজ, শিমুলবাড়িয়া ব্রিজ, ডাড়ার খাল ব্রিজ ও এল্লারচর ব্রিজ। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মিত ব্রিজগুলোর দৈর্ঘ্য ১০ মিটার থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে।
এসব ব্রিজের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোনোটি ভেঙে নদীর মাঝখানে পড়ে আছে। কোনোটির এক পাশ পাড়ে ঝুলছে, তো অপর পাশ ভেঙে নদীতে পড়েছে। কোনোটির এক পাশে বাঁশ বেঁধে পার হওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ, কোনোটির ওপর চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো।
ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় যখন এসব ব্রিজ নির্মাণ করে, তখন ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছিল মরিচ্চাপ নদী। এরপর ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড মরিচ্চাপ নদী পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। এতে নদী ফিরে পায় পুরোনো রূপ, বেড়ে যায় প্রস্থ। চাপ বাড়ে জোয়ারের পানিরও। এতে দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ে।
চরগোবিন্দপুর এলাকার শুকুর আলী সরদার বলেন, নদীর তুলনায় ব্রিজগুলো এতো ছোট যে পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে। শুধু চরগোবিন্দপুর ব্রিজই নয়, এ নদীর সব ব্রিজের একই অবস্থা।
ডাড়ার খাল এলাকার আব্দুল মাজেদ জানান, ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ায় হাটবাজারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে জেলা সদরে যেতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। সময়মতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না তাদের ছেলে-মেয়েরা। একই সঙ্গে ঘের অধ্যুষিত হওয়ায় উৎপাদিত মাছ বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুজিয়ুর রহমান বলেন, স্থান ভেদে মরিচ্চাপ নদীর প্রস্থ ৫০-৭০ মিটার। কিন্তু এ নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজগুলো সর্বোচ্চ ২০ মিটার হতে পারে। এতো বড় নদীর ওপর এমন ছোট ছোট ব্রিজ টিকবে কীভাবে?
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নদী বা খালে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে এনওসি নিতে হয়, যা এসব ব্রিজ নির্মাণের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়নি। ব্রিজগুলো যখন নির্মাণ হয়েছে, তখন মরিচ্চাপ নদী ছিল সরু খালের মতো। আমরা নদীর সীমানা অনুযায়ী খনন করেছি। কিন্তু ব্রিজগুলো নদীর সীমানা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়নি।
এ কর্মকর্তার বক্তব্য মিলে যায় একই নদীর ওপর এলজিইডি নির্মিত ব্যাংদহা ব্রিজের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০২২ সালে নির্মিত এ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার। নদী খননের পর অন্যান্য ব্রিজ ভেঙে পড়লেও ব্যাংদহা ব্রিজ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলেন, ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা সোয়েব আহমেদ বলেন, ধসে পড়া সাতটি ব্রিজের মধ্যে চারটি এলজিইডির মাধ্যমে নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এসআই