কুমিল্লার মুরাদনগরে ফজর আলীর হাতে গত ২৬ জুন যৌন নির্যাতনের শিকার হন এক নারী। এটি এখন টক অব দ্য কান্ট্রি।
নির্যাতনকারী ফজর আলী মাদক, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন-এমন দাবি করেছেন এলাকাবাসী। তার অপকর্ম নিয়ে একাধিকবার সালিশের ঘটনাও ঘটেছে। যৌন নির্যাতনের শিকার নারী, পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ভুক্তভোগী নারী জানান, তিনি বিবাহিত। দুই সন্তানের জননী। স্বামী প্রবাসী। ফজর আলী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। এই টাকার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হতো। তবে তার সঙ্গে কথা হয়, এটি মেনে নিতে পারেননি ফজর আলীর ছোট ভাই শাহপরান। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। ধর্ষণচেষ্টার দিন গত ২৬ জুন রাত সাড়ে ১১টার সময় ওই নারীর বাবার বাড়িতে যান ফজর আলী। গত ১৫দিন ধরে ওই নারী তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ফজর আলী যে সময় ভুক্তভোগীর বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন, ওই সময়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বাড়ির অন্য সবাই বাইরে অবস্থান করছিলেন। সেই সুযোগে দরজার খিল ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন ফজর আলী। তিনি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। তিন মিনিটের মধ্যে চারজন যুবক এসে ওই নারী ও ফজর আলীকে বেদম মারধর করেন। এ সময় ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়।
ওই ভিডিওচিত্র ২৮ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তীব্র সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এর আগে ২৭ জুন ফজর আলীকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।
ওই নারী জানিয়েছেন, এ ঘটনায় করা ধর্ষণ মামলাটি তিনি আর পরিচালনা করতে চান না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুর রব বলেন, ফজর আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি এর আগেও একজন হিন্দু ও একজন মুসলিম নারীর সঙ্গে অপকর্মের চেষ্টা করে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সালিশ হয়। ইয়াবা ব্যবসা, ডাকাতি করে প্রচুর পয়সার মালিক হয়েছেন ফজর আলী। গত ২৬ তারিখ খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাই। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
ওই গ্রামের আরেক ব্যক্তি জানান, বিভিন্ন দলের লোকজনের সঙ্গে ছবি তুলে সুবিধা নিতে চান ফজর আলী।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন জানান, ভুক্তভোগী নারীর মামলায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার দিন মারধরের পর তিনি আহত হয়েছেন। তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া চারজনকে গ্রেপ্তার করা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ভিডিও ধারণকারীদের একজন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদেরও এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। আমরা সবগুলো বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখছি।
এদিকে এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপি। কুমিল্লা নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ আত্মগোপনে চলে যায়। স্থানীয় ওসি ও একজন উপদেষ্টার বাবার পৃষ্ঠপোষকতায় তারা আবার মাঠে সক্রিয় হয়েছে। আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা না হলে ফজর আলী এমন বর্বর ঘটনা ঘটাতে পারতেন না। আমরা স্থানীয় ওসির প্রত্যাহার চাই। যুবলীগ নেতা আরিফ ওসি জাহিদুর রহমানের সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে এটি বিএনপির কর্মকাণ্ড বলে প্রচার করে। আমাদের ধারণা, ওসি ও যুবলীগ নেতা আরিফ মিলে অপপ্রচার চালিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের খেপিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা মজিবুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, মুরাদনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক দয়ানন্দ ঠাকুর, উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক কাজী তাহমিনা আক্তার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিন রায়হান।
আরএ