ময়মনসিংহ: গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৭টার দিকে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাদার কবরের পাশে শায়িত করা হয়।
দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।
এর আগে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বাদ জুমা প্রথম জানাজা শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়।
নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম মিয়া জানান, দ্বিতীয় জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
এসময় তিনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে বলেন, আমার ভাইকে বিনা দোষে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানুষকে এভাবে কুপিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
স্থানীয় বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, তুহিন খুব ভালো ছেলে ছিলেন। সত্যিই ভালো মানুষ বেশি দিন বাঁচে না—এটাই প্রমাণ হলো। অল্প সময়ে স্বামী হারিয়ে তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। আমরা চাই, সরকার বা রাষ্ট্র তুহিনের পরিবারের পাশে দাঁড়াক।
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করছিল। সে দৃশ্য মোবাইলফোনে ধারণ করছিলেন তুহিন। তখন তাকেও ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পতির ছেলে। তিনি পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তার স্ত্রী মুক্তা আক্তারের ঘরে দুই ছেলে রয়েছে—তৌকির (৭) ও ফাহিম (৩)।
সাংবাদিক তুহিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার সকাল থেকেই আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়ায় ভিড় করতে থাকেন।
নিহতের ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে তুহিন পরশু বলেছিল, আম্মা, আগামী মাসে তোমাকে চোখের ডাক্তার দেখাবো। ডাক্তার অপারেশন করতে বললে করাবো। আম্মা, কোনো চিন্তা কইরো না।
বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল ছেলের মৃত্যু সংবাদে পাগলপ্রায়। মূর্ছা গিয়ে বারবার উঠে বলছেন, কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কেন এমন হলো? আমি খুনিদের চাই না, তোমরা শুধু আমার ছেলেকে এনে দাও।
স্বজনরা জানান, তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০২ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স সম্পন্ন করে বড় ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসায় যুক্ত হন। এরপর একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নেন। পাশাপাশি ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন এবং পরে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন।
২০০৯ বা ২০১০ সালের দিকে বড় ভাই জসিম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বর্তমানে তুহিন ও তার ভাই সেলিম গাজীপুরে বসবাস করছিলেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন। দ্বিতীয় ভাই জাহাঙ্গীর আলম পরিবার নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে এবং আরেক ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে বসবাস করেন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় গ্রামের বাড়িতে শুধু বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন, যারা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন এবং ছেলেরাই তাদের দেখভাল করতেন।
এসআরএস