যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান, সদর ফাঁড়ির সাবেক টিএসআই রফিকুল ইসলাম এবং যশোর পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মোস্তফার নামে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় আরও সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
সাঈদ ও শাওন নামে দুই যুবককে যশোর পৌরপার্ক থেকে তুলে নিয়ে হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগে রোববার (২৪ আগস্ট) আদালতে এ মামলা করেন সাঈদের পিতা কাজী তৌহিদুর রহমান।
যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহমত আলী যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমারখালী গ্রামের শ্যাম হাওলাদারের ছেলে ফুলু মিয়া, মৃত হাকিম শেখের দুই ছেলে রমিজ শেখ ও নাসির শেখ, মৃত হাই শেখের ছেলে সাইফুল শেখ, জব্বার শেখের ছেলে হারুন-অর-রশিদ শেখ, মৃত সেলিম শেখের ছেলে জাহিদুল শেখ এবং জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আল আমিন তালুকদার।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মিলন আহমেদ। বাদীর বাড়ি যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের তরফ নওয়াপাড়ায়।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন, তাদের বাড়ি পিরোজপুরের কুমারখালীতে হলেও তারা দীর্ঘদিন যশোরে বসবাস করছেন। যশোরের সাবেক এসপি আনিসুর রহমান, সাবেক টিএসআই রফিকুল ইসলাম ও সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা ছাড়া অন্য আসামিরা পিরোজপুরের অধিবাসী এবং তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
বাদীর অভিযোগ, তাদের গ্রামের সম্পত্তি পিরোজপুরের আসামিরা দখল করতে চাইলে তিনি ছেলে সাঈদকে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল সেখানে পাঠান। সেসময় আসামিরা তাকে ও তার পরিবারকে খুন জখমের হুমকি দিলে সাঈদ ফিরে আসেন।
ওই বছরের ৫ এপ্রিল সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন যশোর শহরের পৌরপার্কে ঘুরতে গেলে অভিযুক্ত সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফাসহ অন্যদের উপস্থিতিতে টিএসআই রফিক তাদের আটক করে মারধর করেন। বাদীর দাবি, এ ঘটনার নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক এসপি আনিসুর রহমান।
খবর পেয়ে বাদী কোতোয়ালি থানায় যোগাযোগ করেও কোনো সহায়তা পাননি। পরে তিনি এসপির কাছে গেলে সাঈদ ও শাওনকে আদালতে সোপর্দ করার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে টিএসআই রফিক ও গোলাম মোস্তফা তার কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা নিলেও সাঈদ ও শাওনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়নি।
বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন, সেসময় তার স্ত্রী হিরা বেগম আদালতে একটি মামলা করেছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে টিএসআই রফিক হিরা বেগমকে ধরে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক শকসহ নানা নির্যাতন চালান এবং মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেন। বাধ্য হয়ে হিরা বেগম মামলা প্রত্যাহার করেন। পরে তিনি মারা যান।
বাদীর দাবি, দীর্ঘ প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে তার সন্তান সাঈদ ও শাওন নিখোঁজ। তার ধারণা, আসামিরা তাদের হত্যা করে লাশ গুম করেছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ভয়ে সে সময় মামলা করতে পারেননি। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকূলে আসায় তিনি এ মামলা করেছেন।
এসআরএস