ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারে বড় পতন, গুজব থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারে বড় পতন, গুজব থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান

ঢাকা: পতন থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। বিদায়ী সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসজুড়েই (১০-১৪ মার্চ) সূচকের পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে।

সপ্তাহজুড়ে সূচকের সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে।

বিদায়ী সপ্তাহে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন কমেছে ৬৬ হাজার ২৮৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি ২৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বাজার মূলধন ১৭ হাজার ৯০ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকা কমেছে।  

বাজারের এমন পতনে অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এমন সময়ে নানা গুজবে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতনের দৃশ্যমান কারণ নেই। যারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে শেয়ার বিক্রি করছেন, তাদের আরও জেনে-বুঝে এবং সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্প্রতি দেশের শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজবের কারণে। প্রায় সময়ই শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলে স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল। ঠিক কয়েকদিন আগে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে গুজব ছড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছিল।  

এরপর জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা হয়। তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার নতুন গুজব ছড়িয়ে পড়ল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসইর মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান কমিশনে থাকছে না বলেও গুজব উঠেছে। এসব ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।

বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন চক্র বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এতে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার প্রভাব পড়ে বিনিয়োগকারীদের ওপর। সবসময় এসব চক্র ফায়দা লুটে নেয়। পুঁজিবাজার রক্ষায় গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আমরা বাজারের সার্বিক স্বার্থে কাজ করি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ। করোনার মধ্যে তিন বছর কঠিন সময় পার করেছি। সবকিছু বন্ধ ছিল। তখন আমরা চেষ্টা করে বাজার চালু রেখেছিলাম। কাজ করতে গেলে মতের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আইনসঙ্গতভাবে আমাদের কাজ করতে হয়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয় দুই হাজার ৭৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল চার হাজার ৫৩ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমে এক হাজার ২৫৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৩১ দশমিক ০৭ শতাংশ।

বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৪৮ হাজার ৮২৭ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৭ টাকা এবং শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৫ কোটি ৪৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৫ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে বাজার মূলধন ৪৯ হাজার ১৯২ কোটি ২৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪২৩ টাকা কমেছে।

সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৪ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৩৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৬ দশমিক ০৯ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৭০ শতাংশ কমে এক হাজার ২৯৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ০৪ শতাংশ কমে দুই হাজার ৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৪১১টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে ৩০১টির। ৩১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শেয়ার লেনদেন হয়নি ১০টি প্রতিষ্ঠানের।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ৭৪ কোটি ৯০ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮১ কোটি ১৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার শেয়ার। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ছয় কোটি ২৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন শুরুর আগে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৪২ হাজার ৮৪০ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়ায় সাত লাখ ২৫ হাজার ৭৫০ কোটি তিন লাখ ১০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে বাজার মূলধন ১৭ হাজার ৯০ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার টাকা কমেছে।

সপ্তাহ শেষে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৬০ পয়েন্ট বা দুই দশমিক ৬২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৯০ পয়েন্টে। সিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ১ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৬১ পয়েন্টে, সিএসই-৩০ সূচক এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮১১ পয়েন্টে এবং সিএসআই সূচক দুই দশমিক ১৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৮ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩২৮টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, দর কমেছে ২৪৪টির। ২১টির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
এসএমএকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।