ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজার থেকে ১৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৪
পুঁজিবাজার থেকে ১৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন

ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার থেকে গত ২১  মাসে ২৮টি কোম্পানি মোট এক হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। যার মধ্যে ২৬টি কোম্পানি ও দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে।


 
জানা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর সময়ে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির মাধ্যমে বাজার থেকে এ টাকা উত্তোলন করেছে কোম্পানিগুলো । যার মধ্যে ১১টি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম নিয়েছে। বাকি ১৭টি কোম্পানি প্রিমিয়াম ছাড়া বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করেছে।
 
অবশ্য কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার অতিরিক্ত প্রিমিয়ামে অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে বিনিয়োগকারীরা।
 
এছাড়া আরও চার কোম্পানি আইপিও মাধ্যমে বাজার থেকে আরও ৩০১ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। কোম্পানিগুলো হলো- ইফাদ অটোমোবাইল, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, ন্যাশনাল ফিড এবং শাশা ডেনিমস। তবে গত ১৮ মাস ধরে বাজারে কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ড আসেনি।
 
একাধিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সাথে আলোচনা করে জানা যায়, মূলত ২০১০-২০১১ সালে শেয়ারবাজার ধসের কারণে বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এছাড়া স্পন্সররাও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারে আনতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না।
 
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ সর্বশেষ আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফাস্ট মি. ফান্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর থেকে আর কোনো মিউচ্যুয়াল ফান্ড অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
 
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও কমিশন মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার শেয়ারের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে কমিশন নিয়মিত আইপিও অনুমোদন দিয়ে থাকে।
 
তিনি আরও বলেন, প্রাইমারি মার্কে প্রচুর আইপিও’র চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেটের চাহিদা মেটাতেও আইপিও’র প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সবসময় কয়েকটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নতুন নতুন আইপিও অনুমোদন দিয়ে থাকি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের ইস্যু ম্যানেজার ও অডিটর প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়।
 
তাই যেসব কোম্পানি বাজারে আসতে ইচ্ছুক তাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব বলে মনে করেন বিএসইসি’র এ নির্বাহী পরিচালক।
 
সাইফুর রহমান বলেন, আইপিও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কোম্পানির প্রসপেক্টাসে ভুল তথ্য দেওয়ায় সম্প্রতি কয়েকটি ইস্যু ম্যানেজার ও অডিটর প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি অডিটরদের আইনের আওতায় আনতে ফিন্যান্সিয়াল রিপোটিং অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হচ্ছে।
 
এ বিষয়ে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে আইপিও অনুমোদন দেওয়া উচিত। কিন্তু আইপিও প্রস্তাবের ভুল তথ্য চিহ্নিতকরণে শুধুমাত্র ইস্যু ম্যানেজার ও অডিটরদের উপর নির্ভর করা উচিত নয়।
 
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিএসইসিকে প্রথাগত নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য তারা কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণ করতে নিজস্ব বিশ্লেষক ও অডিটর নিয়োগ করতে পারে। এছাড়াও বিএসইসি কোম্পানির প্রতিটি তথ্য পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে।
 
এসময় তিনি বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেন, একটি কোম্পানির ইস্যু মূল্য যদি ৩০ টাকা হয় তবে মাত্র দুই/তিন মাসের মধ্যে সে কোম্পানির শেয়ার যদি কোনো বিনিয়োগকারী একশ টাকা দিয়ে ক্রয় করে লোকসান করে তবে সে দায় বিএসইসি’র নয়।
 
২০১৩ সালে বাজার থেকে যেসব কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে তার মধ্যে রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাসটিক, ফ্যামিলি টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, অ্যাপোলো ইস্পাত, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং, এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক।
 
২০১৪ সালে বাজার থেকে যেসব কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে তার মধ্যে রয়েছে- এমারেল অয়েল, হাঅয়েল টেক্সটাইল, ফার কেমিক্যাল, দি পেনিনসুলা হোটেল, শাহজিবাজার পাওয়ার, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস, তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, সাইফ পাওয়ার, রতনপুর স্টিল রিরোলিং মিল, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, খান ব্রাদার্স এবং হামিদ ফেব্রিকস।
 
বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম নিয়ে পুঁজি উত্তোলন করেছে ওরিয়ন ফার্মা ২৪০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম, অ্যাপোলো ইস্পাত উত্তোলন করেছে ২২০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১২০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম, দি পেনিনসুলা চিটাগং হোটেল বাজার থেকে উত্তোলন করেছে ১৬৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১১০ কোটি টাকা প্রিমিয়াম, ওয়েস্টার্ন মেরিন উত্তোলন করেছে ১৫৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১১২ কোটি টাকা প্রিমিয়াম, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাসটিক ৪০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২৪ কোটি টাকা প্রিমিয়াম, মতিন স্পিনিং মিল উত্তোলন করেছে ১২৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রিমিয়াম ৯২ কোটি টাকা, শাহাজিবাজার পাওয়ার ৩১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে। যার মধ্যে প্রিমিয়াম ১৯ কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।