ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

বিদেশি বিনিয়োগ খরায় শেয়ারবাজার

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
বিদেশি বিনিয়োগ খরায় শেয়ারবাজার

ঢাকা: বিদেশি বিনিয়োগ খরা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয় করছেন বিক্রয় করছেন তার থেকে বেশি।

গত তিন মাস ধরেই এ অবস্থা বিরাজ করছে। এমনকি এ সময়ে তাদের মোট লেনদেনও কমেছে ধারাবহিকভাবে।
 
বিদেশী বিনিয়োগ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসই বিদেশিরা শেয়ারবাজার থেকে টানা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এরমধ্যে মার্চে ৩২ কোটি ২৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, এপ্রিলে ৬৭ কোটি ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা এবং মে মাসে ৮৭ কোটি ২৮ ‍লাখ ৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
 
এর আগে ২০১০ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর টানা তিন মাস বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে শেয়ারবাজারের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এরপর আর কখনো টানা তিন মাস বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেনি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তবে ২০১১ সালে দুই ধাপে তিন বার বিনিয়োগ প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটে।
 
২০১১ সালের আগস্টের পর টানা ৪২ মাসে আর বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেনি বিদেশিরা। প্রতি মাসেই কিছু না কিছু বিনিয়োগ করেছেন। তবে চলতি বছরের শেষ তিন মাসে(মার্চ, এপ্রিল ও মে) হঠাৎ করেই আবার বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে অবস্থানে আছে তাতে বিনিয়োগ প্রত্যাহার হওয়ার কোন কারণ নেই। তাছাড়া বাজেটেও শেয়ারবাজারের জন্য বেশকিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে বাজারে লেনদেন ও বিনিয়োগ বাড়ার কথা।
 
কিন্তু বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর কোন যুক্তি সংগত কারণ নেই। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের শেয়ারবাজারে মুনাফা তুলে নেওয়ার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেন। এটি হয়তো গত তিন মাসে বিদেশিদের শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার কারণ হতে পারে।
 
ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী আছেন তারা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ খুব একটা করে না। লেনদেন ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেন তারা। এটি বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য খুব একটা ভালো না। তবে এ ধরনের বিনিয়োগ বাজারে তারল্য বাড়াতে সাহায্য করে।
 
টানা তিন মাস বিদেশিদের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি বলেন, হয়তো মুনাফা হওয়ার কারণে তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। তাছাড়া এ মুহুর্তে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার তেমন কোন কারণ দেখছি না।
 
প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চে ২০১০ সালের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ’র (ডিএসই) মাধ্যমে বিদেশিদের লেনদেন ছিলো সর্বোচ্চ। তবে এ লেনদেনে শেয়ার ক্রয়ের তুলনায় বিক্রয় ছিলো বেশি। মাসটিতে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় করেন ৩১৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৯ হাজার টাকার। এর বিপরীতে বিক্রি করেন ৩৫১ কোটি ৯১ লাখ ১৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ সময় ৩২ কোটি ২৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকার বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেন বিদেশীরা।
 
এরপর এপ্রিল মাসে বিদেশিরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয় ৬৭ কোটি এক লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এ সময় তারা ২৬৫ কোটি ৯৬ লাখ ৬ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। এর বিপরীতে বিক্রি করেন ৩৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। মাসটিতে বিদেশিদের মোট লেনদেনের পরিমাণ ৫৯৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। যা মার্চের তুলনায় ৭২ কোটি ৫৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা কম।
 
আর সর্বশেষ মে মাসে বিদেশিরা ৫৩৭ কোটি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। যা এপ্রিলের তুলনায় ৬১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা কম।

মে মাসে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় করে ২২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এর বিপরীতে বিক্রি করে ৩১২ কোটি ২৮ লাখ ১ হাজার টাকা। মাসটিতে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ৮৭ কোটি ২৮ লাখ ৫ হাজার টাকা।
 
শেষ তিন মাসে বিনিয়োগ প্রত্যাহার হলেও বছরের শুরুতে বিদেশিদের বিনিয়োগ ছিলো বেশ ইতিবাচক। জানুয়ারিতে শেয়ারবাজরে নিট বিদেশি বিনিয়োগ আসে ২২৮ কোটি ২০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এ সময় ৩৬৫ কোটি চার লাখ ১৮ হাজার টাকা ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রয় ছিলো ১৩৬ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
 
ফেব্রুয়ারিতে নিট বিদেশি বিনিয়োগ আসে ২২ কোটি ৮২ লাখ ৬ হাজার টাকা। মাসটিতে বিদেশিরা ২৫০ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। এর বিপরীতে বিক্রয় করেন ২১৯ কোটি ১৫ লাখ ৯ হাজার টাকা।
 
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, লাভ করতে পারলে বিদেশিরা শেয়ার ছেড়ে দেবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বর্তমান বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি না। বাজারের এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদের ভালো বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। দ্রুত মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা থাকা বিনিয়োগকারী এ মুহুর্তে বাজারের জন্য ক্ষতিকর।
 
ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশিরা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে। যে খাতে বিনিয়োগ করে দ্রুত বেশি লাভ পাওয়া যায় সাধারণত তারা সেই খাতেই বিনিয়োগ করে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিদেশিদের শেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা না। হয়তো নতুন করে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের জন্যই তারা বিক্রির চাপ বাড়িয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
এএসএস/এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।