মঙ্গলবার (১২ মে) একাধিক বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তাদের এই দাবি তুলে ধরেন।
বিনিয়োগকারীদের দাবি, পুঁজিবাজার খোলা থাকলে ক্ষতিতে হলেও শেয়ার বিক্রি করে চলতে পারতেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে আমরা বাজারে লোকসান দিয়ে এসেছি। বাজার খোলা থাকলে লোকসান দিয়ে হলেও শেয়ার বিক্রি করে আমরা চলতে পারতাম। কিন্তু বাজার দীর্ঘ বন্ধ তাকার কারণে সেটিও পারছি না। আমাদের ঘরে খাবার নেই। পরিবার নিয়ে আমরা অসহায় জীবন যাপন করছি। তাই এই মুহূর্তে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
সরকার যদি ঈদের আগে বাজার চালু না করে, তাহলে বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
রমজান চলছে। সামনে ঈদ। পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচব কিছুই বুঝতে পারছি না। এমনটিই জানালেন ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী মো. সেলিম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই মাস ধরে আমরা ঘরবন্দি। আমাদের দেখার কেউ নেই। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে আমরা কোনোরকম সহায়তা পাইনি। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তাদের নিয়েই ব্যস্ত। আমরা কারো করুণা চাই না। বাজার খুলে দিক। লোকসান হলেও শেয়ার বিক্রি করে আমরা সংসার চালাতে পারব।
তিনি আরও বলেন, শেয়ারের ব্যবসা করেই আমার সংসার চলে। সরকার শেয়ারের সার্কিট ব্রেকার ঘোষণা করায় শেয়ার বিক্রি করিনি, বাজার ভালো হবে এই আশায়। পুরো মূলধনটা আটকে আছে। এই মুহূর্তে কেউ টাকা ধার দিচ্ছেন না, বউ বাচ্চা নিয়ে কিভাবে বাঁচব সেটি বুঝতে পারছি না। সরকারের উচিত ঈদের আগে কয়েকটা দিন হলেও অনন্ত পুঁজিবাজারে লেনদেনটা চালু রাখুক।
বিনিয়োগকারীদের অনেকেই আছেন যাদের আয়ের পুরোটাই পুঁজিবাজারের ওপর নির্ভরশীল। তাই বাজার বন্ধ থাকায় লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর আয় বন্ধ রয়েছে।
ঈদুল ফিতরের আগেই লেনদেন চালুর দাবি জানান বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পুঁজিবাজার। অথচ এই মহামারিতে সব সেক্টরের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্রণোদনা নেই। আমরা অবহেলিত ছিলাম, এখনো অবহেলিতই আছি। গত দুই মাস বিনিয়োগকারীরা কি অবস্থায় আছেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা স্টেকহোল্ডার কোনো খোঁজখবর নেয়নি। আমাদের প্রণোদনার দরকার নেই। ঈদের আগেই পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করলে জীবন বাঁচাতে পারব।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে সারা বিশ্বেই লকডাউন চলছে। কোনো দেশের পুঁজিবাজার বন্ধ নেই। তাহলে আমাদের বাজার কেন বন্ধ রাখতে হবে এটাই বুঝে উঠতে পারছি না।
এদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় পুঁজিবাজারের ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীর জীবন-জীবিকা আছে উল্লেখ করে ঈদের আগে লেনদেন চালু করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মো. রকিবুর রহমান।
তিনি বলেন, চীন বলেন, আমেরিকা বলেন, বিশ্বের সব দেশেই শেয়ারবাজার খোলা।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে পুঁজিবাজার না খুললে একটি ভুল বার্তা যাবে। বিনিয়োগকারীরা হতাশ হবেন। বাইরের বিনিয়োগকারীরা হতাশ হবেন। আমরা যে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারের সঙ্গে জড়িত, সেখানে আমাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকবে না।
ডিএসইর পরিচালক বলেন, সব জায়গায় ব্যাংক খুলে দেওয়া হয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, প্রতিটি ব্রাঞ্চের ৫০ শতাংশ স্টাফকে আসতে বলা হয়েছে। ৫০ শতাংশ স্টাফ এলে তাতে ৩০-৪০ জনের কম হয় না। সকালে ব্যাংকে দেখা যায় প্রচুর ভিড়।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেন। সুতারাং অপশন থাকতে হবে। যখন খুশি বিনিয়োগকারী বিক্রি করবেন, অথবা কিনবেন। পুঁজিবাজার কি গুরুত্বপূর্ণ না? ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী, সামনে ঈদ। প্রয়োজন হলে একজন শেয়ার বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নেবেন। আবার অন্যজন প্রয়োজন অনুযায়ী শেয়ার কিনবেন।
‘কিছুদিন আগে ডিএসই সব প্রস্তুতি নিয়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সম্মতি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। যেহেতু বিএসইসির এই মুহূর্তে কমিশন সভা করার সুযোগ নেই, এ জন্য তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আবার অর্থ মন্ত্রণালয় মতামত নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এটা আমার কাছে অবাক লাগছে। এটা কী এ ধরনের আলোচনার বিষয়?’
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে। একটি ব্রাঞ্চ চালাতে ব্যাংকের মতো অত স্টাফ লাগে না। একটি ব্রাঞ্চে জন্য দুই-তিন জন হলেই যথেষ্ট। সিডিবিএল রেডি, ডিএসই রেডি, বিএসইসির সার্ভিলেন্স রেডি। লোক তো লাগে না কোথাও। বিনিয়োগকারীরা মোবাইলের মাধ্যমে, ই-মেইলের মাধ্যমে, অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের অর্ডার দেয়। আমাদের কোনো বিনিয়োগকারী অফিসে আসেন না। চেক দেওয়ার জন্যও না, চেক নেওয়ার জন্যও না।
ডিএসইর পরিচালক বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের অর্থনীতি ভারতের চেয়েও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ৮ শতাংশের বেশি জিডিপি। অথচ ভারত তার পুঁজিবাজার খোলা রাখছে। আর আমি পারছি না। ভয়টা কীসের? পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজার খুললে সমস্যা কী?
তিনি বলেন, তাহলে স্টক এক্সচেঞ্জের যারা বিনিয়োগকারী আছেন, তাদেরও তো জীবিকা ও জীবন আছে। তাদেরও তো টাকার প্রয়োজন হতে পারে। সব থেকে বড় কথা স্টক এক্সচেঞ্জে এখন আসতে হয় না। তাই লেনদেন চালুর সিদ্ধান্ত নিতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে সারা পৃথিবী লকডাউনে রয়েছে। কিন্তু কোনো দেশের পুঁজিবাজার বন্ধ হয়নি। তাহলে আমাদের দেশে পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।
তিনি বলেন, দীর্ঘ বন্ধের কারণে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটছে। তাই সরকারের উচিত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করা।
করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেই ছুটি কয়েক দফা বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়। ওই ছুটির কারণে পুঁজিবাজারও বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২০
এসএমএকে/এজে