ঢাকা, রবিবার, ২১ পৌষ ১৪৩১, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ রজব ১৪৪৬

বসুন্ধরা শুভসংঘ

ভাঙ্গুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল বিতরণ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
ভাঙ্গুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল বিতরণ

‘কয়দিন ধরে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। খুব শীত লাগে।

কয়েক বছর আগে মাইনষের দেওয়া পাতলা দুইটা কম্বল বাড়িতে আছে। এই কম্বলে শীত যাইতে চায় না। স্বামী কাজকর্ম করতে পারে না। কাজ করলেও মানুষ দাম কম দেয়। ল্যাপ বানানোর ট্যাকা নাই। খুব কষ্ট হইতেছে। তাই সবাইরে কইছিলাম একটা কম্বল দেওয়ার জন্য। আমার চাওয়া পূরণ করছে এই ছেলেগুলো। অনেক মোটা একটা কম্বল দিছে। আর শীতে আমাগো স্বামী-স্ত্রীর কষ্ট হবে না। ছেলেগুলা খুব ভালো। এদের ভালো হোক। ’

এভাবেই বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল পেয়ে আবেগঘন কথাগুলো বলেন মাফিয়া খাতুন। ভূমিহীন মাফিয়া ও তার স্বামী ফনিস দম্পতি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করেন।  

একই গ্রামের বাসিন্দা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছাবদার হোসেন। সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার। অভাবের সংসার চালাতে অসুস্থ শরীরেও ভ্যানে যাত্রী পরিবহন করেন তিনি। তবে বেশিরভাগ দিনে তাকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। ছাবদার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হলেই বাড়ি থেকে লেপ নিয়ে যান হাসপাতালে। এতে শীত নিবারণে লেপ ও কম্বলের কষ্টে রাত কাটে বাড়িতে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যদের।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল পেয়ে ছাবদার হোসেনের পরিবার খুব খুশি। ছাবদার হোসেন বলেন, ‘অসুস্থ হয়ে শরীরটা ভালো নাই। এর ওপর শীতে পরিবারের লোকজন কষ্ট পাচ্ছিল। এই কম্বল পেয়ে কিছুটা হলেও পরিবারের শীতের কষ্ট দূর হলো। ’ 

মঙ্গলবার উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামে মাফিয়া-ফনিস দম্পতি ও সাবদার হোসেনের মতো আরো ১৫টি দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।  

উপজেলার অষ্টমীণীষা ইউনিয়নের বিশাকোল গ্রামের ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ তাজু মোল্লা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাড়ে স্ত্রী নিয়ে বসবাস তার। একাধিক সন্তান থাকলেও কেউ দেখাশোনা করেন না। গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছে কম্বল পাওয়ার জন্য আবদার ছিল তার। অবশেষে বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যরা গত সোমবার বিশাকোল গ্রামে গিয়ে তাজু মোল্লার হাতে কম্বল তুলে দেন। এদিন তাজু মোল্লাসহ ওই গ্রামের আরো ৯টি দুস্থ ও অসহায় পরিবারের কাছে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হয়।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধ রহমত আলী। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। এর ওপরে টিনের ঘরে বসবাস তার। শীত এলেই তিনি কাবু হয়ে পড়েন। এক লেপে শীত যায় না তার। বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল পেয়ে এ বছর তার শীতে কষ্ট কমবে বলে আশা করছেন। রহমত আলীর মতো ভবানীপুর ও কলকতি গ্রামের আরো ৭টি পরিবারকে কম্বল দেওয়া হয়। কম্বল পেয়ে এসব পরিবারের মানুষের মুখে উষ্ণতার হাসি ফোটে।

বসুন্ধরা শুভসংঘের ভাঙ্গুড়া শাখার উপদেষ্টা প্রকৌশলী ডক্টর জাহিদ হাসানের সার্বিক সহযোগিতায় বসুন্ধরা শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক শাকিব খান, দপ্তর সম্পাদক রাকিব হাসান ও সদস্য আবদুল মালেক মধুসহ বসুন্ধরা শুভসংঘের ভাঙ্গুড়া শাখার সদস্যরা গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৩১টি দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে কম্বল পৌঁছে দেন।

সাধারণ সম্পাদক শাকিব খান বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘের সঙ্গে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে মনে তৃপ্তি পাই। ’ তাই বসুন্ধরা শুভসংঘের সব সদস্য ভালো কাজের মাধ্যমে সবার পাশে থাকতে চান।

ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহবুব উল আলম বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ একটি সামাজিক ও মানবিক সংগঠন। ভাঙ্গুড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ মানুষের জন্য কাজ করছে। আমি তাদের এসব ভালো কাজের প্রশংসা করি এবং ভবিষ্যতেও তারা তাদের এই কাজ অব্যাহত রাখবে বলে আশা করি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২৫
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।