ঢাকা, শনিবার, ৮ ভাদ্র ১৪৩২, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ২৮ সফর ১৪৪৭

বসুন্ধরা শুভসংঘ

বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি

প্রতি মাসে পাচ্ছেন ঢাবির ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৫০, আগস্ট ২৩, ২০২৫
প্রতি মাসে পাচ্ছেন ঢাবির ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাবির ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে বসুন্ধরার শিক্ষাবৃত্তি

বুকভরা সাহস ও হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়তে আসেন দেশসেরা মেধাবীরা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এসে প্রথমেই পড়েন অর্থনৈতিক সংকটে।

বর্তমান সময়ে টিউশন পাওয়াও কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। কী করবেন ভেবে দিশাহারা হন স্বপ্নদেখা তরুণরা।

ঢাবির এমনই হাজারো তরুণের ভরসা ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় মেধাবী অথচ অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়ে শুভসংঘ তৈরি করছে নতুন ইতিহাস। দরিদ্র মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানোর অদম্য প্রয়াস, দায়িত্বশীল ও মানবিক মানুষ হয়ে দেশ গঠনের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে তরুণদের। বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃত্তি পেয়ে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হাজারো তরুণপ্রাণ এখন নিজেকে সৃষ্টিশীল করে তুলতে ব্যস্ত।

তাঁরা জানিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি। বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এই অনুভূতিগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরবেন জাকারিয়া জামান। তৃতীয় পর্ব ছাপা হলো আজ

বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের সেবা করব

মোত্তাকিনা আক্তার, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ

রংপুরের প্রত্যন্ত এক সাধারণ গ্রামে আমার জন্ম, যেখানে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল সংগ্রামের। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি।

তখন থেকে আমাদের দরিদ্র পরিবার হয়ে ওঠে আরো অসহায়। বাবা দরিদ্র কৃষক, তাঁর সামান্য আয় দিয়েই চার বোন ও এক ভাইয়ের সংসার এবং লেখাপড়ার খরচ সামলাতে হয়।

একার আয়ে সন্তানের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা বাবার জন্য নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। শৈশব থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিল আমার গভীর ভালোবাসা। অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী হলেও আমি কখনো হার মানিনি।

নিজের প্রচেষ্টা আর দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিই আমাকে আজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। একসময় মনে হতো স্বপ্নগুলো বুঝি থেমে যাবে। বসুন্ধরা শুভসংঘ তা হতে দেয়নি। তারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছে। ইমদাদুল হক মিলন স্যার অফিসে ডেকে নিয়ে টাকা দিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন।

বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আমার জীবনে আশার আলো হয়ে এসেছে। এই বৃত্তি কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, আমাকে দিয়েছে সাহস, আত্মবিশ্বাস ও নতুন উদ্দীপনা। পাঠ্যবই, নোট, প্র্যাকটিক্যাল উপকরণ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমি সংগ্রহ করতে পারছি, যা হয়তো আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। পড়াশোনায় মনোযোগ বেড়েছে বহুগুণে। আজ আমি শুধু একজন শিক্ষার্থী নই, বরং একজন স্বপ্নবাজ তরুণী, যার লক্ষ্য বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের সেবা করা।

বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি সেই স্বপ্নপূরণের পথে আমাকে এগিয়ে নিচ্ছে। আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি। তারা অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। ভবিষ্যতে আমিও অন্যের পাশে দাঁড়াতে চাই। বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আমার কাছে কেবল সহায়তা নয়, এটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একটি আশীর্বাদ। সারা জীবন বসুন্ধরা শুভসংঘকে কৃতজ্ঞতা ও গর্বের সঙ্গে হৃদয়ে ধারণ করে রাখব।

লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্নের সারথি বসুন্ধরা শুভসংঘ

আফসানা আক্তার, সমাজকল্যাণ বিভাগ

নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি, যেখানে জন্মে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা স্বপ্নের মতোই মনে হতো। ছোটবেলায়ই ভাবতাম, আমি কি কলেজে ভর্তি হতে পারব? পরিবারের সামর্থ্য ছিল না পড়াশোনার খরচ বহনের। তবু এসএসসিতে জিপিএ ৫ অর্জন এবং শিক্ষকদের সহায়তায় কলেজে ভর্তি হই। এরপর ধীরে ধীরে স্বপ্ন বুনতে থাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।

আল্লাহর অসীম রহমত আর কঠোর পরিশ্রমে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও খাবার খরচ জোগানো সব সময় সহজ ছিল না। টিউশন পেলে কিছুটা স্বস্তি মিলত, কিন্তু টিউশন পাওয়া যেত না। চতুর্থ বর্ষে এসে পড়াশোনার চাপ, শারীরিক অসুস্থতা এবং আর্থিক দুরবস্থা—সব মিলিয়ে আমি হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলাম।

ঠিক সেই সময়ে আমার জীবনে দেবদূত হয়ে আবির্ভূত হলো বসুন্ধরা শুভসংঘ। দুশ্চিন্তার রেখা মুছে দিয়ে অভিভাবকের মতো পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। এই বৃত্তিই এখন আমার প্রতি মাসের খরচ চালাতে সাহায্য করছে। বাবার মৃত্যুর পর যে হতাশা আমাকে গ্রাস করেছিল, সেই হতাশা কমেছে বৃত্তি পাওয়ার পর।

আমি এখন মনোযোগী হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার জীবনের সব সংকটে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে তাদের অপরিমেয় অবদান কখনো ভুলতে পারব না। চোখ ভিজে আসে কৃতজ্ঞতায়। আমার মতো আরো লাখো শিক্ষার্থীর স্বপ্নের সারথি হোক প্রাণের সংগঠন বসুন্ধরা শুভসংঘ।

স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ সহজ করে দেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ

মাসুমা আক্তার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

দরিদ্র পরিবারের মেয়ে আমি। বাবা একজন জেলে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় যেখানে, সেখানে আমার পড়াশোনার স্বপ্ন লালন করা সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই নানা প্রতিকূলতার মাঝে সংগ্রাম করেছি, আর সেই সংগ্রামের মাঝেই বসুন্ধরা শুভসংঘের সহায়তা পেয়েছি।
সেই সহযোগিতার হাত ধরে আজ আমি দেশের অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। ঢাকা শহরে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, ভাড়া, খাওয়ার খরচ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে দুঃসহ। টিউশনি পাই না, বৃত্তিও ছিল না, দিন দিন হতাশায় ভুগছিলাম।

মনে হচ্ছিল, এত দিনের লালিত স্বপ্ন হয়তো অর্থের অভাবে থেমে যাবে। স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করা, কিন্তু বাস্তবতার কঠিন দেয়ালে এসে তা যেন আছড়ে ভেঙে পড়ছিল। বসুন্ধরা শুভসংঘ বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে আমার পাশে দাঁড়ায়। তাদের দেওয়া শিক্ষাবৃত্তি শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, আমার জীবনে আশার আলো।
যখন মনে হচ্ছিল সব পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শুভসংঘ তখনই স্বপ্ন দেখিয়েছে, শক্ত হাতে সাহস জুগিয়েছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তি আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যে ভরসা দিয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই সহায়তা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে স্বপ্নপূরণে অর্থের অভাব বাধা হতে পারে না, যদি পাশে থাকে সহমর্মিতা, সাহস আর ভালোবাসার হাত। আজ আমি গর্বিত যে আমি বসুন্ধরা শুভসংঘ পরিবারের একজন সদস্য। তাদের এই মহৎ উদ্যোগ শুধু আমার জীবন নয়, অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন বদলে দিচ্ছে।

তারা স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্ন সাজায়, আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথও খুলে দেয়। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি আমার হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। একদিন আমিও অসহায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে চাই, যেমন বসুন্ধরা শুভসংঘ আজ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।

আমাকে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে

বৈশাখী রানী গোপ, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ

জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। স্বপ্ন ছিল অনেক বড়, কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা কখনোই সচ্ছল ছিল না। বাবা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

সংসার চালানোই যেখানে কষ্টকর, সেখানে মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ বহন করাটা ছিল প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই হিসাব-নিকাশে দিন কাটত, কোথায় কম খরচ করা যায়, কিভাবে চলা সম্ভব। সেই সঙ্গে মেসে থাকার খরচ, যাতায়াত, বাজার সদাই ও আনুষঙ্গিক খরচের চাপ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে অথচ কোনো টিউশনও পাওয়া যাচ্ছিল না।

আগে শুনতাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে টিউশনির অভাব হয় না, কিন্তু বাস্তবতা সেটা ভুল প্রমাণ করে দিল। আর্থিক চাপে একসময় মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, ঠিক সেই সময়ে একজন সিনিয়র ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃত্তির কথা। তাঁর উৎসাহে আবেদন করি। ভাইভা বোর্ডে ইমদাদুল হক মিলন স্যার আমাদের কথা মন দিয়ে শোনেন।

তিনি শুধু শোনেননি, অনুভবও করেছেন। যখন জানলাম আমি নির্বাচিত, মনে হয়েছিল, কেউ সত্যি আমার কাঁধে হাত রেখেছেন। এই বৃত্তির ফলে বাবার ওপর থেকে আর্থিক চাপ অনেকটাই কমেছে। এখন নিজের পড়াশোনা ও ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছি অনেক বেশি। আগে যেসব দুশ্চিন্তা মাথার ভেতর ঘুরত, তা অনেকটাই কমেছে।

শুভসংঘ শুধু অর্থ সাহায্য করেনি, সাহস আর ভালোবাসাও দিয়েছে। আমার মা এখন ভয়ে ভয়ে থাকেন না। এই সহযোগিতা আমাকে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। আমি চাই নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে, যাতে একদিন আমিও কারো পাশে দাঁড়াতে পারি, ঠিক যেমন বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে।

আমার লক্ষ্য মৎস্য গবেষক হওয়া

শান্তা ইসলাম, ফিশারিজ বিভাগ

চার ভাই-বোন আর মা-বাবা মিলিয়ে আমাদের ছয় সদস্যের পরিবার। বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সীমিত আয়ের মধ্যেও আমাদের পরিবার মোটামুটি ভালোভাবেই চলছিল। হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় বাবার চাকরি হারানোতে নেমে আসে চরম আর্থিক সংকট।

পরিবারের সেই বিপর্যয় আমার পড়াশোনাকেও অনিশ্চিত করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত, বই-খাতা কেনা, প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ—সবকিছুই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল। অর্থের অভাবে আমাকে অনেক দিন ক্লাস মিস করতে হয়েছে। কখনো কখনো হতাশা আর মানসিক চাপে মনে হয়েছে, পড়াশোনা বাদ দিয়ে হয়তো কাজ শুরু করতে হবে।

চোখের সামনেই স্বপ্ন ভেঙে পড়ছিল, ঠিক তখনই বসুন্ধরা শুভসংঘ আমার জীবনে আলোর দিশা হয়ে আসে। বৃত্তি দিয়ে আমাকে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখায়। এখন আমি নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে পারি, বই-খাতা কিনতে পারি, নোট ফটোকপি বা অ্যাসাইনমেন্ট প্রিন্ট করতে পারি, যা আগে অসম্ভব মনে হতো। পরিবারের চাপও কমেছে।

মা-বাবার চোখে স্বস্তির ঝিলিক দেখতে পাই। আমার স্বপ্ন ভবিষ্যতে একজন মৎস্য গবেষক হওয়া। বাংলাদেশে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি, জলজ প্রাণীর সংরক্ষণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে চাই। গবেষণার পথ সহজ নয়। ল্যাবরেটরির কাজ, ফিল্ড ট্রিপ, সরঞ্জাম কেনা সবই ব্যয়বহুল। কিন্তু বসুন্ধরা শুভসংঘের সহায়তা আমাকে সাহস জুগিয়েছে, আত্মবিশ্বাসী করেছে। আমিও একদিন আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। আজ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সমাজে এখনো কিছু মহৎ মানুষ আছেন, যাঁরা নিঃস্বার্থভাবে অন্যের মুখে হাসি ফোটান।

অভিভাবক হয়ে পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ

মিম আকতার, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একদিকে আনন্দের সীমা থাকেনি, অন্যদিকে নতুন চিন্তায় মনে প্রশ্ন উঠেছিল, কিভাবে ভর্তি হব? কোথা থেকে এত খরচ জোগাড় করব? কলেজ থেকে প্রাপ্ত সহায়তায় ঢাকায় ভর্তি হতে পারি। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে আনন্দ ছিল, কিন্তু সঙ্গে চিন্তা কোথায় থাকব, খরচ কোথা থেকে আসবে, খাওয়ার ব্যবস্থা কেমন হবে? বাবা ফুটপাতে দোকান করেন, মা গৃহিণী। ঝড়বৃষ্টি ও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বাবার দোকান সব সময় খোলা থাকে না। পরিবার চালানোও খুব কষ্টসাধ্য।

ছোট ভাই তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। পরিবারের সামর্থ্য সীমিত। আমাকে ঢাকায় রেখে পড়াশোনা করানো ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রথম এক মাস উত্তরায় আত্মীয়র বাসায় থাকি।

দৈনিক যাতায়াতের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারিনি। তখনই বসুন্ধরা শুভসংঘ অভিভাবক হয়ে পাশে দাঁড়ায়। বন্ধুদের মাধ্যমে বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃত্তির খবর জানতে পারি। সব কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করি।

ইমদাদুল হক মিলন স্যার আমাদের আশ্বাস দেন। পরের মাস থেকে বৃত্তি পাওয়া শুরু করি। এখন আর বাবার কাছে টাকা চাওয়ার প্রয়োজন নেই। বসুন্ধরা শুভসংঘ শুধু একটি সংগঠন নয়, বরং অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণার বাতিঘর। চেষ্টা যেখানে থেমে যায়, বসুন্ধরা শুভসংঘ সেখানে নতুনভাবে স্বপ্ন বুনতে শেখায়। তাদের অনুপ্রেরণায় আমি নতুন উদ্যমে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে এগিয়ে যেতে পারছি।

বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব

ইসরাত জাহান ঈশিতা, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ

লালমনিরহাট জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে আমি। আমার এত দিনের পথচলা কখনোই সহজ ছিল না। ছোটবেলায়ই মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। সেই থেকে বাবা আমাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি, খোঁজখবর নেওয়া তো দূরের কথা।

আমার কিংবা মায়ের খরচও তিনি কখনোই দেননি। মা ছিলেন আমার একমাত্র ভরসা। তিনি একা হাতে আমাকে বড় করেছেন। কখনো স্বাস্থ্যকর্মী, কখনো আবার কোনো ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কাজ করেছেন। আমার পড়াশোনার খরচ জোগাতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। করোনা মহামারির সময় মায়ের চাকরিও চলে যায়। তখন আমাদের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা। সংসার চালানোই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে ঢাকায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া আমার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

মা পরে একটি স্থানীয় ফার্নিচারের দোকানে কাজ পান, কিন্তু বেতন এতটাই কম ছিল যে থাকা-খাওয়া, পড়াশোনার খরচ কোনোটাই ঠিকমতো মেটানো যেত না। আমি অনেক চেষ্টা করেও কোনো টিউশনি পাইনি। মনে হচ্ছিল, হয়তো আমার স্বপ্ন এখানেই থেমে যাবে, ঠিক সেই অন্ধকার সময়েই আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ। ইমদাদুল হক মিলন স্যার আমাকে সাহস দেন, বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন। শুভসংঘ থেকে আমি যে মাসিক বৃত্তি পাই, তা দিয়ে আমার থাকার খরচ, খাওয়াদাওয়া এবং পড়াশোনার ব্যয় মেটাতে পারি।

আমার জীবনে মানসিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। আমি নতুন উদ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। আমার স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে ভবিষ্যতে একজন সমাজসেবী হওয়া, যাতে আমার মতো স্বপ্ন দেখা কিন্তু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়তে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারি। বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ ও ঋণী থাকব।

এখন আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাতে ঘুম ভেঙে যায় না
আশামনি, দর্শন বিভাগ
মা পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম হওয়ায় অভাব ছিল আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তারপর আমি ঢাকায় চলে আসায় মায়ের ওপর চাপটা যেন আরো বেড়ে গেল। আমি, ছোট দুই বোন সব মিলিয়ে সংসারটা চালানো খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছিল। মাসে মাসে যখন মায়ের কাছে খাওয়ার জন্য টাকা চাইতাম, এর থেকে কষ্টের আর কিছু ছিল না।

বুঝতাম মায়ের কাছে হয়তো এই টাকাটাও নেই যে কাল চাল কিনবেন কী দিয়ে, তবু মা ৩০০ থেকে ৪০০ করে টাকা পাঠাতেন। স্যারদের কাছে বসুন্ধরা শুভসংঘের ব্যাপারে জানতে পারলাম এবং আবেদন করলাম। এখন আর আগের মতো প্রতি মাসে খাওয়া-পরা নিয়ে আমার মায়ের দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় না। বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃত্তি পেয়ে নিশ্চিন্তে নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারছি।

কান্নাভরা গলায় মাকে আর বলতে হয় না, মা খাইনি। আগে সকালে খেতাম না। দুপুরে ভাত কিনতাম, ওটাই অর্ধেক করে রেখে দিতাম রাতের জন্য। মা শুঁটকি গুঁড়া করে দিতেন, ১০ টাকায় পাঁচটা পেঁয়াজ কিনে প্রতিদিন রাতে অর্ধেক পেঁয়াজ কেটে শুঁটকি গুঁড়া দিয়ে ভাত খেতাম।

একটু ভাত খেয়ে পানি খেয়ে পেট ভরতাম। শেষ কবে পেট ভরে ভাত খেয়েছিলাম বলতে পারতাম না। এখন তিন বেলা অন্তত ভাতটা খাই। একটু শান্তিতে পড়াশোনা করতে পারি। মা ও বোনদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা থেকে দূরে আছি।

বসুন্ধরা শুভসংঘকে কোটি কোটি শুকরিয়া মাসের শুরুতে টাকাটা দিয়ে আমার সারা মাসের দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য। এখন আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাতে ঘুম ভেঙে যায় না। আমাকে নিয়ে মায়ের দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছি। আমি ও আমার পরিবার বসুন্ধরা শুভসংঘের ওপর চিরকৃতজ্ঞ থাকব। ধন্যবাদ বসুন্ধরা গ্রুপ।

অসহায় শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের আলোকবর্তিকা
সিরাজুম মুনিরা, ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগ
জয়পুরহাট জেলার এক ছোট্ট মফস্বল গ্রামে আমার বাড়ি। শৈশব থেকেই মেধাবী হিসেবে পরিচিত ছিলাম, যা স্বপ্ন জাগিয়েছে একদিন পড়াশোনার মাধ্যমে জীবনে অনেক বড় কিছু করার। আমি জানতাম দরিদ্র পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমার পরিবার ছিল একেবারেই অসচ্ছল।

বাবা মসজিদে ইমামতি করে সংসার চালাতেন। বর্তমানে বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে মা-বাবা দুজনই প্রায় অক্ষম হয়ে পড়েছেন। আমাদের কোনো আবাদি জমি নেই, আর বাবার পক্ষে আমার উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করা ছিল অসম্ভব। তবু সাহস করে আমি ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অর্থাভাবে ভর্তি হওয়ায় প্রথমে পড়াশোনা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ঠিক এমন সময়ে বসুন্ধরা শুভসংঘের শিক্ষাবৃত্তির ব্যাপারে জানতে পারলাম। ইমদাদুল হক মিলন স্যার বরাবর আবেদন করি এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে নির্বাচিত হই। বর্তমানে শুভসংঘ থেকে প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট আর্থিক সহায়তা পাই, তা আমার জীবনে এক বিরাট স্বস্তি এনে দিয়েছে।

এখন আমি নির্বিঘ্নে আমার পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারি। আজ আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, বসুন্ধরা শুভসংঘ কেবল একটি সংগঠন নয়, বরং অসহায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্নপূরণের এক আলোকবর্তিকা। আমি ও আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থী বসুন্ধরা শুভসংঘের সহায়তায় নতুন আশার আলো খুঁজে পাচ্ছি।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।