গত কয়েক বছরে সাঁতার ফেডারেশনের অকেজো ইলেকট্রনিক বোর্ড নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। বিশেষ করে জাতীয় সাঁতারের সময় এলেই শুরু হয় সেই পুরোনো গল্প।
এমন আনন্দের দিনেও বাবা না থাকার আক্ষেপটা কাঁদায় যুথীকে। চার বছর আগে বাবাকে হারান তিনি। তবে বাবার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টায় অটল আছেন এই সাঁতারু।
বাংলানিউজটোয়েন্টিরের সঙ্গে আলাপচারিতায় যুথী বলেন, ‘প্রথম যখন সাঁতার জগতে আসি। তিনি অনেক বেশি খুশি ছিলেন। ধীরে ধীরে যখন আমার আরও উন্নতি হতে লাগল, তিনি আরও বেশি খুশি হন এবং আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট করতে থাকেন। কখনো কখনো এরকম হয়েছে যে, দিনে চার-পাঁচবার করে ফোন করেছেন। ’
‘প্র্যাকটিস কেমন হয়েছে, শরীরের কী অবস্থা— এসব খোঁজ নিতেন। প্রেরণা দিতেন ভালো করে প্র্যাকটিস করার। বলতেন ভালো কিছু করতে হবে, দেশের জন্য হোক বা আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য হোক। কষ্ট না করলে কখনো কিছুই পাবে না। বাবার সাপোর্টটা সবচেয়ে বেশি ছিল আমার। বাবা না থাকার কারণে সাপোর্টটা কম পাই। কিন্তু বাবাকে অনেক বেশি মিস করি। বাবা থাকলে আজকের দিনে অনেক বেশি খুশি হতেন। বেঁচে থাকলে আমার জন্য হলেও তিনি এখানে আসতেন। ’
গতকাল ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে ৩২.৭৪ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে জাতীয় রেকর্ড গড়েন যুথী। আজ ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে সোনা জেতেন ২.৪১:২৭ মিনিট টাইমিংয়ে। তার সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছে পুরো পরিবার।
যুথী বলেন, ‘পরিবারের সবাই অনেক বেশি খুশি। খেলাধুলা আসার পর থেকে পরিবার পুরো সময় আমার পাশে ছিল, কোনো বাধা পাইনি। গতকাল রেকর্ডের কথা শুনে সবাই অনেক খুশি এবং আমার জন্য দোয়া করছে। ’
মাদারীপুরের আসমত আলী খান পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়া যুথীর উঠে আসা ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সেরা সাঁতারু প্রতিযোগিতার মধ্যে। পুলে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়ে প্রস্তাব পান নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার।
যুথী বলেন, ‘আমার ফুফাতো বোন নাহিদার মাধ্যমেই সাঁতার জগতে পা রাখি আমি। আমার কখনো ধারণা ছিল না, সাঁতার নামে কোনো খেলা আছে বাংলাদেশে। ২০১৬’তে সেরা সাঁতারু বাংলাদেশে আমি প্রথম হয়েছিলাম। একটি ক্যাম্প হয়েছিল সেখান থেকে নৌবাহিনীতে ডাক পাই। ’
‘তারপর বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাবার স্বপ্নপূরণ করার জন্য এই পর্যায়ে আছি। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দেশ ও নৌবাহিনীর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে হয়তো আরও ভালো টাইমিং করব। ’
যুথীর মনে ইলেক্ট্রনিক বোর্ড না থাকার আক্ষেপও ঝরল। একইসঙ্গে বিদেশি কোচের প্রয়োজনীয়তাও সামনে তুলে ধরলেন এই সাঁতারু।
তিনি বলেন, ‘ইলেকট্রনিক বোর্ড না থাকাটা তো অবশ্যই সমস্যা। বাংলাদেশে যদি এমন ব্যবস্থা হতো বা করা হয় ভবিষ্যতে তাহলে আমাদের জন্য অনেক বেশি ভালো হবে। কারণ হ্যান্ড টাইমিং আর টাচ বোর্ডের টাইমিং তো এক হয় না। ’
‘আমাদের বিদেশি কোনো কোচ দিয়ে যদি প্র্যাকটিস করানো হতো বা আরও একটু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হতো তাহলে হয়তো আমরা আরও ভালো কিছু করে দেখাতে পারতাম। কারণ আমাদের বাংলাদেশি কোচের চেয়ে বিদেশি কোচের মেথড— সবকিছুই বলতে গেলে আলাদা হয়। উনারা যতটুকু সাপোর্ট দিয়ে প্র্যাকটিস করান, সেটা আমাদের খুব দরকার। ’
দেশের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের ছাপ রাখতে মুখিয়ে আছেন যুথী, ’এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ইভেন্টে যাওয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। ইনশাল্লাহ ভালো রেজাল্ট নিয়ে আসব। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২৪
এআর/এএইচএস