ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

নেইমার জাদুতে অ্যাতলেতিকোকে বিদায় জানাল বার্সা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫
নেইমার জাদুতে অ্যাতলেতিকোকে বিদায় জানাল বার্সা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: নতুন বছরের আরেকটি হাইভোল্টেজ ম্যাচ দেখার আশায় বিশ্বফুটবলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীরা গভীর রাতে চোখ রেখেছিল কোপা দেল রে’র কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনা আর অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের ম্যাচে। মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ, ইনিয়েস্তারা ৪-২ এগ্রিগেডে জয় নিয়ে অ্যাতলেতিকোকে এ আসর থেকে বিদায় করে সেমিফাইনালের টিকিট করে নেয়।



কোপা দেল রে’তে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ এগ্রিগেটে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল দিয়েগো সিমিওনের অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ। প্রথম লেগের ম্যাচে বার্সার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুতে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসির একমাত্র গোলে জয় পেয়েছিল কাতালানরা। তবে, ফিরতি লেগে স্বাগতিক অ্যাতলেতিকোর মাঠে আতিথ্য নেয় লুইস এনরিকের বার্সা।

অ্যাতলেতিকোর ঘরের মাঠ ভিসেন্তে কালদেরনে ম্যাচের শুরতেই ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মাথায় লিড নেয় অ্যাতলেতিকো। বার্সার আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার জাভিয়ের মাসচেরানো নিজেদের রক্ষন থেকে লম্বা পাসে বল বাড়ান সতীর্থের উদ্দেশ্যে। তবে, সেখান থেকে বল পেয়ে অ্যাতলেতিকোর সিকুইরা পাস দেন এ বছর নতুন করে আবারো অ্যাতলেতিকোয় ফেরা ফার্নান্দো তোরেসকে। আর বার্সার গোলরক্ষক টার স্টেগেনকে ফাঁকি দিতে ভুল করেন নি তোরেস।

বার্সার এ মুহূর্তের সেরা ফরোয়ার্ড লাইনআপ অ্যাতলেতিকোকে লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে দেয়নি। এ দিন ফুটবল বিশ্ব আবারো দেখলো বিশ্বসেরা লাইনআপের (মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার) জাদু। ম্যাচের নবম মিনিটে মেসির পায়ের জাদুতে বল পান উরুগুয়ের তারকা স্ট্রাইকার সুয়ারেজ আর লিভারপুলের সাবেক এ তারকা বল পেয়ে তা বাড়িয়ে দেন ব্রাজিল অধিনায়ক নেইমারকে। প্রায় অর্ধমাঠ থেকে একাই বল নিয়ে অ্যাতলেতিকোর জালে শট নিয়ে বল জড়িয়ে দেন নেইমার। ফলে, ম্যাচের ফল দাঁড়ায় ১-১।

ম্যাচের ১৮তম মিনিটে আবারো নেইমার অ্যাতলেতিকোর জালে বল জড়ান। তবে, অফসাইটের কারণে এ গোলটি বাতিল হয়ে যায়। ২৭ মিনিটের মাথায় কাউন্টার অ্যাটাকে অ্যাতলেতিকোর অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান বার্সার ডি বক্সে বল পেয়েও গোল আদায় করে নিতে পারেননি।

পরের মিনিটে বার্সার শিবিরে আবারো হানা দেয় অ্যাতলেতিকো। ডি বক্সের বাইরে জুয়ানফ্রানকে বার্সার ডিফেন্ডার মাসচেরানো অবৈধভাবে বাধা দিলে জুয়ানফ্রান কাতালানদের ডি বক্সে পড়ে যান। এতে ম্যাচের দায়িত্বে থাকা রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাউল গার্সিয়া গোল আদায় করে আবারো দলকে লিড পাইয়ে দেন।

২৭ মিনিটের মাথায় বার্সার তারকা ইভান রেকিটিকের একটি জোড়ালো শট রুখে দেন অ্যাতলেতিকোর ডিফেন্ডার। ফলে, কর্নার লাভ করে কাতালানরা। রেকিটিকের তুলে মারা কর্নার কিক ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই জড়িয়ে দেন মিরান্ডা। ফলে, ২-২ গোলে সমতা ফিরে আসে ম্যাচে।

তবে, হাইভোল্টেজ ম্যাচ বলতে যা বুঝায় তাই যেন একের পর এক দেখেছে ফুটবল প্রেমীরা। ম্যাচের ৪১তম মিনিটে বার্সার ডি বক্সে দাঁড়িয়ে জোড়ালো শট নেন অ্যাতলেতিকোর তারকা স্ট্রাইকার গ্রিজম্যান। তবে, সেটি জরদি আলবার হাতে লেগে ফিরে এলে রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। এবারে পেনাল্টি ভাগ্য সহায় হয়নি স্বাগতিকদের। পাল্টা আক্রমণে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন নেইমার। তবে, তার আগে বলের জোগানদাতা ছিলেন সেই আলবাই। মেসির আরেকটি দারুণ পাস থেকে গোলবারের বামদিকে বল পান আলবা। সেখান থেকে তিনি অনেকটা ডাইভ দিয়ে বল বাড়ান নেইমারকে। আর বলের অসাধারণ নিয়ন্ত্রন নিয়ে গোল করেন ব্রাজিল তারকা।

প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ৩-২ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সা। তবে, দুই দল বিরতিতে যাবার আগে উভয় দলের কোচিং স্টাফ আর খেলোয়াড়রা ম্যাচের উত্তেজনায় ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে। তবে, তার আগেই বার্সার মেসি হলুদ কার্ড এবং অ্যাতলেতিকোর গাবি লাল কার্ড দেখেন।

বিরতি থেকে ফিরেও ম্যাচের উত্তেজনা কমেনি বরং আরও বেড়ে যায়। ৪৮ মিনিটের মাথায় সাইড লাইনে দায়িত্বে থাকা লাইন্সম্যানকে নিজের বুট দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে হলুদ কার্ড দেখেন অ্যাতলেতিকোর আরদা তুরান।

ম্যাচের ৫৮ মিনিটের মাথায় মেসির পাস থেকে সুয়ারেজ শট নিলেও অ্যাতলেতিকোর মিরান্ডা তা প্রতিহত করেন। কয়েক সেকেন্ড পর উরুগুয়ের এ তারকার একটি আলতো শট গোলবারের উপর গিয়ে পড়ে। ৭১ মিনিটের মাথায় আরদা তুরানের বদলি হিসেবে মাঠে আসা কানির একটি জোড়ালো শট প্রতিহত করেন বার্সার গোলরক্ষক টার স্টেগেন। পরের মিনিটে নেইমারের অসাধারণ একটি পাস থেকে শট নিলেও অ্যাতলেতিকোর গোলরক্ষক ওব্লাককে ফাঁকি দিতে পারেননি মেসি।

দ্বিতীয়ার্ধের কিছুক্ষণ পর পর হলুদ কার্ড দেখতে থাকে অ্যাতলেতিকোর খেলোয়াড়রা। এরই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ৮৪তম মিনিটে লাল কার্ড (দ্বিতীয় হলুদ) দেখে মাঠ ছাড়েন অ্যাতলেতিকোর মারিও সুয়ারেজ। মেসিকে পিছন থেকে বিপদজ্জনক অবস্থায় ফেলে দেওয়ার দরুণ তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি।

ম্যাচের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ৩-২ গোলের জয় পায় বার্সেলোনা। আর প্রথম লেগে ১-০ এবং দ্বিতীয় লেগে ৩-২ গোলের ব্যবধান ধরে রাখায় ৪-২ এগ্রিগেডে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে লুইস এনরিকের বার্সা। আর এ আসর থেকে বিদায় নিল দিয়েগো সিমিওনের অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, ২৯ জানুয়ারি ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।