ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

‘কিংব্যাক’ খ্যাত বাংলার ফুটবল জাদুকর

ইয়াসির উবাইদ, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫
‘কিংব্যাক’ খ্যাত বাংলার ফুটবল জাদুকর মোনেম মুন্না

ঢাকা: ‘কিংব্যাক’ নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই হালকা-পাতলা গড়নের এক ফুটবলারের প্রতিচ্ছবি। যার নাম মোনেম মুন্না।

তাকে বলা হতো বাংলাদেশ ফুটবল টিমের ‘প্রাচীর’। ছিল দেশের সবচেয়ে দামী ফুটবলারও।

২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন মোনেম মুন্না। তাঁর অকালে চলে যাওয়াটা সে সময় দেশের ক্রীড়াঙ্গনের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল।

একজন প্র‌য়াত বাংলাদেশি এ ফুটবল তারকাকে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সেরা ডিফেন্ডারদের মধ্যে তাকে গণ্য করা হয়। এক যুগ ধরে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলেছেন। আবাহনী ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৯২ সালে আবাহনীর জন্য ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে নতুন দেশীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। কোলকাতার ইস্ট বেঙ্গল দলেও খেলেছেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে আবাহনীর ম্যানেজারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, তিনি ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার এক সেরা ফুটবলার। স্টপার পজিশনে খেলেও সর্বসাধারণের মাঝে তুমুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। মাঠে শুধু চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য নয়, বরাবরই দলের নেতৃত্ব এবং ফুটবলে দুর্দান্ত পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেন তিনি। আর এ কারণেই 'কিংব্যাক' উপাধী হয়ে যায় তার। আশির দশকের শেষ লগ্ন এবং নব্বই দশক জুড়ে যে দেশের ফুটবলাঙ্গন ছিল মুন্নাময়।

১৯৬৮ সালের ৯ জুন নারায়ণগঞ্জ  জেলায় মোনেম মুন্না জন্মগ্রহণ করেন। মোনেম মুন্না ঢাকায় ১৯৮১ সালে পাইওনিয়ার ডিভিশনের দল গুলশান ক্লাবে খেলা শুরু করেন। পরবর্তী বছর দ্বিতীয় বিভাগের দল শান্তিনগরে যোগ দেন। সেই বছর ১৯৮২ সালে নারায়নগঞ্জ জেলা দলের সাথে জাতীয় দলের এক প্রদর্শনী খেলায় কিশোর মোনেম মুন্না সবার নজরে আসেন। দ্বিতীয় বিভাগের দল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ১৯৮৩ সালে মুন্নাকে দলে নেয় এবং দ্বিতীয় বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উঠে।

১৯৮৬ সালে মুন্না ব্রাদার্স ইউনিয়নে যোগ দেন এবং সে বছরই মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান, ১৯৯৭ সালে খেলা ছেড়ে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলের অপরিহার্য অংশ ছিলেন।

১৯৮৭ সালে মুন্না আবাহনীতে যোগ দেন এবং আমৃত্যু আবাহনী ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন। মাঝখানে ৯১/৯২ সালে কলকাতার ইস্টবেঙ্গলের হয়েও ফুটবল খেলেন।

বাংলাদেশে জাতীয় দলের হয়ে মুন্না প্রথম খেলার সুযোগ পান ১৯৮৬ সালে। সে বছর সিউলে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের জন্য নির্বাচিত দলে তিনি প্রথমবারের মতো ডাক পান। একটানা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৫ সালে তারই নেতৃত্বে মায়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতি কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের বাইরে প্রথম বাংলাদেশ কোন ট্রফি জেতার অনন্য কৃতিত্ব দেখায়।

মুন্না ছিলেন সত্যিই বৈচিত্রময় খেলোয়াড়। আবাহনীর হয়ে যেমন দাপটের সাথে খেলেছেন, তেমনি কলকাতা ফুটবল লীগেও টানা তিন বছর খেলে সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ৯১ সালে ইস্ট বেঙ্গলের কোচ নাইমুদ্দিনই প্রথম মুন্নাকে প্রস্তাব দেন কলকাতা লীগে খেলার । কলকাতা লীগে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মুন্না দারুণ আলোড়ন তোলেন। কলকাতাতেও তুমুল জনপ্রিয় একটি নাম হয়ে ওঠে 'মুন্না'।

মুন্নার নামে স্মৃতি‍:
২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ মোনেম মুন্নার স্মরণে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সেতুটির নামকরণ করে 'মোনেম মুন্না সেতু'।

এক নজরে মোনেম মুন্না:
জন্ম : ৯ জুন ১৯৬৮, নারায়ণগঞ্জ
মৃত্যু : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, ঢাকা

ফুটবল ক্যারিয়ার:
১৯৮০-৮১ : পাইওনিয়ার ফুটবল পোস্ট অফিস
১৯৮২ : দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল শান্তিনগর
১৯৮৩ : দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
১৯৮৪-৮৫ : প্রথম বিভাগ ফুটবল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
১৯৮৬ : প্রথম বিভাগ ফুটবল ব্রাদার্স ইউনিয়ন
১৯৮৭-৯৮ : প্রথম বিভাগ ফুটবল আবাহনী
১৯৯১-৯৩ : ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কলকাতা

জাতীয় দল:
১৯৮৬-১৯৯৭ সাল

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।