ঢাকা: দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ম্যাচ ও বিশ্বকাপ আসরের চলতি ধারাবিবরণী প্রচার করে থাকে বাংলাদেশ বেতার। ধারাভাষ্যের প্যানেলে থাকেন ৫-৭ জন ভাষ্যকার।
বেতারের ‘এ’ গ্রেডের ধারাভাষ্যকার মাত্র তিনজন-আলফাজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাত ও ড. সাইদুর রহমান। বেতারে ২০ থেকে ২২ জন ধারাভাষ্যকার রয়েছেন যারা ‘বি’ গ্রেডের। দুটির বেশি গ্রেড না থাকায় তদবিরের সুযোগটাও তৈরি হয়ে যায়।
ফলে ‘বি’ গ্রেডে থাকা শামসুর রহমান ও কাজল সরকারের মতো অভিজ্ঞ ভাষ্যকারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করেন নবীনরা। মানের দিকে না গিয়ে অনেকেই প্রতিযোগিতার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন তদবির। তদবিরের মাধ্যমে নবীন ধারাভাষ্যকারটির নাম উঠে যায় ‘এ’ গ্রেডের তিনজনের সঙ্গে ভাষ্যকারের প্যানেলে। এটির ফলে ভালো মানের ধারাভাষ্যকাররা চলে যাচ্ছেন আড়ালে।
ফলে তদবিরে আসা ভাষ্যকারদের মান নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। এসব বন্ধে অন্তত তিনটি গ্রেড থাকা উচিত বলে মনে করেন গুনী ধারাভাষ্যকার আলফাজউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও ধারাভাষ্যের নীতিমালা প্রনয়নে মত দেন অভিজ্ঞ এ ভাষ্যকার, ‘নতুন যারা ধারাভাষ্যে আসছেন তারা তদবির করে বিশ্বকাপেও চলে যাচ্ছেন। অথচ তাদের অনেকেরই ধারাভাষ্য নিম্নমানের। আজ যদি বাংলাদেশ থেকে দু’জন শিল্পীকে বিদেশে পারফর্ম করতে পাঠাতে বলা হয় আপনি নিশ্চয়ই সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লাকেই পাঠাবেন। নতুন কাউকে পাঠাবেন না। তেমনি যখন বিশ্বকাপ কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়, যারা সেরা তাদেরকেই পাঠানো উচিত। ’
ধারাভাষ্যকারদের তিনটি গ্রেড হলে অচিরেই বাংলাদেশ বেতার এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে বলে মত দেন আলফাজউদ্দিন, ‘এটি আসলে হচ্ছে না আরেকটি গ্রেড না থাকায়। তিনটি গ্রেড হলে নতুনরা ‘সি’ গ্রেড থেকে শুরু করতো। ‘বি’ গ্রেডে ধারাভাষ্যকার পাওয়া না গেলে ‘সি’ গ্রেড থেকে সুযোগ দেয়া হতো। গত বিশ্বকাপে নবীন একজনকে পাঠানো হয়েছে আমি নাম বলতে চাই না। অত্যন্ত নিম্নমানের ধারাবর্ননা করেছেন, আমরা শুনতে বাধ্য হয়েছি। এই জায়গায় অনেক অন্যায়-অবিচার হচ্ছে। এখানে তো আরও আগেই পেশাদারিত্ব আসা উচিত ছিল। সেই পেশাদারিত্ব আমরা এখনও আনতে পারিনি। ’
পেশাদারিত্ব না আসায় ধারাবিবরণীর মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন আলফাজউদ্দিন, ‘ধারাবিবরণীর মানটা খারাপ হয়ে গেছে। নতুন যারা আসছেন ‘ধর-পাকড়’ জিনিসটা খুব বেশি করছেন, তদবির করছেন। সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা না বুঝেই তদবিরটা করেন-যা তাদের করা মোটেও উচিত নয়। শুরু করেই সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছাতে হবে-এমন প্রতিযোগিতা ভালো নয়। তদবির ও নেতিবাচক প্রতিযোগিতার ফলে পরিবেশটা নষ্ট হচ্ছে। আসলেই যারা ভালো মানের তারা চাপা পড়ে যাচ্ছেন। ’
‘একটা ধারাবর্ননার বোর্ড কিভাবে গঠিত হবে এটা কিন্তু একটা সংবিধানের মতো লিপিবদ্ধ করা উচিত। এখানে একজন ডিরেক্টর থাকবেন, অফিসার থাকবেন, উচ্চারণের একজন পন্ডিত থাকবেন, খেলা বোঝেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ থাকবেন, তা কিন্তু নেই। যাকে যখন ইচ্ছা করছে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। ’-যোগ করেন আলফাজউদ্দিন।
তিন যুগ ধরে কাজের অভিজ্ঞতায় ধারাভাষ্যের অডিশন বোর্ডেও রাখা হয় আলফাজউদ্দিন আহমেদকে। অডিশনেও যে স্বচ্ছতা থাকে না সেটি বোঝা গেল তার কথায়, ‘অডিশন বোর্ডে থাকার সৌভাগ্য হয় আমার। অনেক সময় দেখি যে আমি ফেল করিয়ে দিয়ে আসলাম, পরে জানলাম তারা পাশ করে গেছে। আমি ফেল করালে কি হবে, অন্য যারা অডিশন বোর্ডে ছিলেন তারা পাশ করিয়ে দিয়ে গেছেন। এভাবেও আজকাল ভাষ্যকাররা ঢুকে পড়ছেন। ১০ জনের মধ্যে দুই-একজন খারাপ ঢুকে পরিবেশটা নষ্ট করছে। যোগ্যতা, দক্ষতা অর্জন না করে তদবির করে এ শিল্পটাকেই নষ্ট করছে তারা। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, ১৪ আগস্ট ২০১৬
এসকে/এমআরপি
** বাংলা ধারাভাষ্যের আদ্যোপান্ত জানাবে বাংলানিউজ
** প্রয়াত ধারাভাষ্যকারদের স্মৃতিচারণ করবে কমেন্টেটরস ফোরাম
** তিন যুগ পেরিয়ে ধারাভাষ্যে আলফাজউদ্দিন