ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্টের (ডব্লিউডব্লিউই) প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়েছেন আগেই। তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠার পর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
গত মাসে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে ম্যাকমোহনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতে থাকার অভিযোগ উঠে আসে। সেই অভিযোগ থেকে বাঁচতে তিনি নাকি ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষও দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতেই প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে হয় তাকে। আর এবার নিজের প্রতিষ্ঠিত বিশাল এই প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে অবসরে যাচ্ছেন তিনি। এক বিবৃতিতে তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অবসরের ঘোষণা দিলেও ডব্লিউডব্লিউই-এর বেশিরভাগ শেয়ারের মালিকানা থাকছে ৭৬ বছর বয়সী ম্যাকমোহনের হাতেই। আর তার মেয়ে স্টেফানি হচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন চেয়ারপার্সন এবং কো-সিইও।
গত জুনে, 'দ্য ওয়াল স্ট্রিট জারনাল'-এর এক রিপোর্টে দাবি করা হয়, সাবেক এক নারী রেসলারকে যৌন নিপীড়ন করেছিলেন ম্যাকমোহন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি ওই নারীকে ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতেও রাজি হয়েছিলেন। এরপর তার বিরুদ্ধে আরও কিছু মারাত্মক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। জানা যায়, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গোপন রাখার জন্য আরও চার নারীকে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছেন। ওই চার নারীও তার সংস্থায় কাজ করতেন। অর্থের বিনিময়ে তাদের চুপ করিয়ে দেন তিনি।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরও তার কোম্পানির সিইও এবং চেয়ারম্যান বদে বহাল থাকার কথা শোনা গেলেও পরে ডব্লিউডব্লিউই বোর্ড তদন্তের ঘোষণা দেয়। তার মেয়ে স্টেফানিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত কয়েক যুগ ধরে ডব্লিউডব্লিউই-এর নেতৃত্বে ছিলেন ম্যাকমোহন। পাশাপাশি রেসলিং রিংয়েও পারফর্ম করতে দেখা গেছে তাকে। ডব্লিউডব্লিউই-কে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তোলার পেছনে তার অবদান অনেক। তার হাত ধরেই ডব্লিউডব্লিউই ১৪০টির বেশি দেশে এবং ৩০টি ভাষায় সম্প্রচারিত হয়। পুরো বিষয়টা সাজানো জেনেও কোটি কোটি মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েন রিংয়ের লড়াই উপভোগ করতে।
১৯৮২ সালে নিজের বাবার কাছ থেকে ওয়ার্ল্ড রেসলিং ফেডারেশন কিনে নেন ম্যাকমোহন। তখন রেসলিংয়ের ম্যাচগুলো ছোট পরিসরে আয়োজিত হতো এবং শুধু যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় ক্যাবল চ্যানেলেই সম্প্রচারিত হতো। কিন্তু ম্যাকমোহনের হাত ধরে আমুল বদলে যায় সবকিছু। রেসলমেনিয়ার মতো ইভেন্ট চালু করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন। এই ইভেন্টের মাধ্যমে বড় বড় তারকা রেসলারের উত্থান ঘটে। যা কোটি কোটি মানুষকে আকৃষ্ট করে। ২০২১ সালে কোম্পানির আয় প্রথমবারের মতো ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
ডব্লিউডব্লিউই-এর অগ্রগতির পাশাপাশি ম্যাকমোহন নিজেও সারাবিশ্বে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। রিংয়ে নেমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পাশাপাশি দর্শকদের বাচনভঙ্গীর মাধ্যমেও বিনোদন দেন তিনি। এমনকি ২০০৭ সালে (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট) ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রেসলমেনিয়ায় তার এক রেসলিং ডুয়েল তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া সাবেক তারকা রেসলার স্টিভ অস্টিন এবং হাল্ক হোগানের সঙ্গে তার লড়াই কোটি দর্শককে আকৃষ্ট করে। কিন্তু নারীঘটিত কেলেঙ্কারি তার বহুদিনের রাজত্বের ইতি ঘটালো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
এমএইচএম