একটি বছর শেষ হতে চললো। কিন্তু চিত্রনায়িকা নিপুন নেই রূপালি পর্দায়! এমনটা হওয়ার কথা নয়।
‘শোভনের স্বাধীনতা’ মুক্তির মধ্য দিয়ে নয় মাসের বিরতি ভাঙলো নিপুনের। গত বছর তার শেষ ছবি ছিলো ‘কার্তুজ’। এ বছর ১১ ডিসেম্বর শিশুতোষ ছবি ‘শোভনের স্বাধীনতা’ আলোর মুখে দেখেছে। এ ধরনের ছবি জনপ্রিয় এই নায়িকার জন্য এবারই প্রথম। পরিচালক মানিক মানবিক ছোটপর্দার নির্মাতা হলেও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ঠিকঠাক তুলে ধরেছেন ছবিটিতে। নিপুন সেটা জানিয়ে শোনালেন, সাড়া মিলছে ‘শোভনের স্বাধীনতা’র জন্য।
দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী নিপুণের সঙ্গে ছবিটিতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস। তারা জুটি হয়ে এর আগেও কাজ করেছেন, পেয়েছেন প্রশংসা। ছবিটি নিয়ে নিপুন বলেন, ‘এর মূল চরিত্র একজন কিশোরের। অন্য চরিত্রগুলোও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ছবিতে কাজ করতে চাই নিয়মিতভাবে। এটা শিল্পী হিসেবে আমার দায়বদ্ধতা। ১৯৭১ সালে আমরা সফল হয়েছি যেসব মুক্তিযোদ্ধা বা বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগের কারণে, নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের গল্প তুলে ধরতে হবে। এজন্য সিনেমা হলো বড় একটি জায়গা। অভিনয়শিল্পী হিসেবে পর্দায় সে যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে চাই। ’
অভিনেত্রী নিপুন জানান, গত বছর স্বল্প পরিসরে মুক্তি পাওয়া দেশাত্ববোধক ছবি ‘একাত্তরের মা জননী’ এ বছরও দেখতে পাবেন দর্শক। শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ছবিটির জন্য অমানুষিক খেটেছিলেন তিনি। সে শ্রম সার্থক হয়েছে। চরিত্রটি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেকে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর চ্যানেল আইয়ে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে ‘একাত্তরের মা জননী’র। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন নিপুন, তার সহশিল্পী আগুন।
শিল্পী হিসেবে দায়বদ্ধতা- সেই জায়গা থেকে নিপুন আরেকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এটিও বছর শেষে মুক্তির প্রহর গুণছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর রূপালি পর্দায় দেখা মিলবে ‘স্বর্গ থেকে নরক’-এর। এতে নিপুনের সঙ্গে আছেন ফেরদৌস। এটি নিয়ে আশাবাদী নিপুন। তিনি সবাইকে হলে গিয়ে ছবিটি দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
ছবিটি নিয়ে নিপুন বলেন, ‘দেশের তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করাই ছবিটির মূল উদ্দেশ্য। এখানে আমাকে একজন র্যাম্প মডেলের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে। সে কীভাবে মাদকের দিকে হাত বাড়ায় সেটা দেখানো হয়। মানুষ জন্মের পরপরই মাদকদ্রব্য সেবন করে না, কোনো একটা সঙ্গদোষে পড়ে তরুণ প্রজন্ম নষ্ট করে ফেলে তাদের জীবন। এ বিষয়গুলো এ ছবিতে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এখানে দর্শকের জন্য রয়েছে বেশকিছু বলিষ্ঠ বক্তব্য। ’
সব মিলিয়ে বছর কেমন যাচ্ছে? এমন প্রশ্নে নিপুন জানান, বছরজুড়ে ভালো কিছু ছবির কাজ করেছেন। ব্যস্ত ছিলেন বিশেষ দিবসের নাটক-টেলিছবি নিয়েও। এদিকে নিপুনের একমাত্র মেয়ে তানিশা থাকে লন্ডনে। ওর সঙ্গে নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। ২০ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়তে পারেন নিপুন। ফিরবেন নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে।
নিপুন আবার ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন ছবির শুটিংয়ে। দেলোয়ার জাহান ঝণ্টুর 'বায়ান্ন থেকে একাত্তর' নামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিতে থাকছেন তিনি। এখানেও নিপুনের সহশিল্পী ফেরদৌস। থাকবেন অমিত হাসানও।
নিপুনের জীবনও অনেকটা চলচ্চিত্রের মতো। ১৯৯৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর চলে যান মস্কোতে। সেখানে ২০০৪ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। এর মাঝে বিয়েবন্ধনে জড়ান। এই সূত্রে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৬ সালে দেশে ফিরে এলে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পান। অনেকটা শখের বশেই অভিনয়ও করেন। তার প্রথম ছবি ‘রত্নগর্ভা মা’ এখনও মুক্তির আলো দেখেনি।
‘পিতার আসন’–এর মাধ্যমে রূপালি পর্দায় আসেন নিপুন। ২০০৮ সালে ‘সাজঘর’ এবং ২০০৯ সালে ‘চাদের মতো বউ’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। এরপরই বদলে যায় চেনা চিত্র। একের পর এক ছবিতে নায়িকা হিসেবে হাজির হন নিপুন। তার এই চলচ্চিত্রযাত্রায় দর্শকের ভালোবাসাই একমাত্র চালিকাশক্তি। তাদের মন জুগিয়েই চলছেন তিনি। সময়ই বলে দেবে নিপুন সফল নাকি ব্যর্থ…
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এসও/জেএইচ