ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

আইরিন আফরোজের লক্ষ্য এবার বড় পর্দা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৬
আইরিন আফরোজের লক্ষ্য এবার বড় পর্দা আইরিন আফরোজ/ছবি : নূর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আইরিন আফরোজকে সামনাসামনি দেখলে অতো পরিণত মনে হয় না, যতোটা তাকে পর্দায় দেখা যায়। সামনে থেকে তিনি কেমন পিচ্চি পিচ্চি! একমাত্র ভাইয়ের মুখে এখনও শোনেন ‘পিচ্চি’ ডাক।

মা আদর করে বলেন বুড়ি! তিনি হলেন খাঁটি ঢাকাইয়া মেয়ে। দাদা ও নানাবাড়ি দুটোই ঢাকায়। শৈশব কেটেছে এখানেই।

ঘরের বাইরে আইরিন মোটামুটি চুপচাপ আর শান্ত। জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীদের কাজ, কথা বলা, চালচলনসহ নানান কিছু খেয়াল করেন মনোযোগী ছাত্রীর মতো। কিন্তু ঘরে কিংবা বন্ধুদের কাছে তিনি ঠিক উল্টো। দুরন্ত! বন্ধুদের কাছে আইরিন মধ্যমণি। ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা তিনিই সাজান। পুরোপুরি আড্ডাপ্রিয় মেয়ে বলা যায় তাকে। ঘরে থাকলে টিভিতে জোরে গান বাজিয়ে সবকিছু করেন। মা তো প্রায়ই বলেন, ‘ঘরে থাকলে মাথায় নিয়ে রাখিস, না থাকলে খালি খালি লাগে!’

টিভিতে মডেলদের দেখলে আইরিনের মনে হতো- ‘ইস, আমাকেও যদি টিভিতে দেখাতো!’ তার এই স্বপ্নপূরণের সিঁড়িটা গড়ে দিয়েছে ফেসবুক! সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমে তার ছবি দেখে পরিচিত এক আলোকচিত্রী একটি ফটোশুট করেন। এর কিছুদিন পর বান্ধবী জানায়, বনানীতে একটি বিলবোর্ডে আইরিনের ছবি দেখেছে। বান্ধবী মজা করছে মনে করে তখন উড়িয়ে দেন এই বলে- ‘ফাপড় নিস না!’ পরে নিজে গিয়ে স্বচক্ষে দেখেছেন সিটিসেল জুম আলট্রার বিলবোর্ডে সত্যিই স্থান পেয়েছে তার ছবি। তিন বছরেরও কম সময়ের কথা এটা।

এরপর মিউজিক ভিডিও সারাদেশে পরিচিতি এনে দিয়েছে আইরিন আফরোজকে। শহীদ ও শুভমিতার ‘অবুঝ রাত’ গানে প্রথম মডেল হন, এরপর তাকে দেখা গেছে প্রীতমের গাওয়া ‘ভোট ফর ঠোঁট’-এ। এরপর একের পর এক কাজের প্রস্তাব আসতে থাকে।

শুরুর দিকে আইরিনের মনে হতো মডেল সবাই হতে পারে, কিন্তু অভিনয় কঠিন কাজ। এ কারণে অভিনয়ে আসবেন কি আসবেন না তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। গোল্ডমার্ক বিস্কুট, প্রাণ পিনাট বার, প্রাণ ঝালমুড়ি, মেন্টস, মেরিল পেট্রোলিয়াম জেল, বিকাশ, হ্যালো বাংলাদেশ ট্যুরিজমের বিজ্ঞাপনে কাজ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্মাতাদের উৎসাহ পেয়েছেন। ফারুকী তাকে বলেছেন, ‘তুমি কাজ করো, অভিনয়ে ভালো করবে। ’

এখন আইরিন পুরোদস্তুর অভিনয়শিল্পী। এরই মধ্যে অভিনয় করে ফেলেছেন বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে। প্রথমটা ছিলো ‘গপ্পো’, প্রথম টেকেই এর পরিচালক হিমেশ আশরাফের মুখে শুনেছেন, ‘ভালো করেছো। ’ এরপর নজরুল ইসলাম রাজুর ‘লেক ড্রাইভ লেন’, রেদওয়ান রনির ‘ঝালমুড়ি’ (আরটিভি), ইমরাউল রাফাতের ‘কলিং বেল’ (দেশ টিভি)। এর মধ্যে ‘কলিং বেল’-এর কাজ করতে হয় মাসের আটদিন। ‘আমি এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এ নাটকে মূল চরিত্রগুলোর মধ্যে আমারটা অন্যতম। এতে আমি পাঁচ নায়কের নায়িকা হয়েছি। ’

নতুন বছরে নতুন দুটি ধারাবাহিকের কাজে হাত দিয়েছেন। এগুলো হলো সকাল আহমেদের ‘একটি বাবুই পাখির বাসা’ (এফএস নাঈম) এবং অম্লান বিশ্বাসের ‘শুন্যতা’ (আফরান নিশো)। নিজের করা একক নাটকের মধ্যে আইরিন উল্লেখ করলেন ‘বায়োস্কোপ’ (রিচি সোলায়মান), ‘তুমি বলেছিলেন তাই’ (ইমন) এবং তাহসান ও মিথিলার সঙ্গে একটি কাজ।  

ক্লাস এইটে পড়ার সময় চেয়েছিলেন সাংবাদিক হবেন। নাইনে ওঠার পর মনে হলো গান গাইবেন। কিন্তু বাবা চাইতেন মেয়ে ডাক্তার হোক। এ কারণে মেয়ের বিনোদন অঙ্গনে কাজ করাটা মোটেই মেনে নেননি তিনি। তাই পত্রিকায় নিজের ছবি ছাপা হলে আইরিন লুকিয়ে রাখতেন বাবা যেন না দেখে! টিভিতে তাকে দেখালে রিমোট চেপে শব্দ কমিয়ে দিতেন বাবা যেন বুঝতে না পারে!

তবে এখন চিত্রটা বদলেছে। বাইরে থেকে মেয়ের অভিনয়ের প্রশংসা আসছে বাবার কানে। তাই এখন মানসিকতা পাল্টেছেন তিনি। ‘মা আমাকে সবসময় সমর্থন দিয়ে এসেছেন। এখন তারা দু’জনই আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। আমার কাছে তারাই সব। ’

ছোটপর্দার গন্ডি পেরিয়ে চলচ্চিত্রে কাজ করার খুব ইচ্ছা আইরিন আফরোজের। ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’-এ তিশা অভিনীত চরিত্রটি তার স্বপ্নের। ছবিটি যদি আবার রিমেক হয় তাহলে এ চরিত্রে কাজ করতে মুখিয়ে থাকবেন বলেও জানালেন। প্রিয় চরিত্র জেনে বোঝা যাচ্ছে, গতানুগতিক নাচ-গান-অ্যাকশনে ভরপুর ছবিতে কাজ করার খুব একটা ইচ্ছা নেই তার।

আইরিন আফরোজ বললেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি ফিল্মে নাম লেখানোর ইচ্ছা আছে। আমি মানসিকভাবে প্রস্তুতও আছি। মনের মতো গল্প, চরিত্র, পরিচালক হলে এখনই মুভি করবো। ’

গ্রিন ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স শেষ করেছেন আইরিন আফরোজ। শুধু অভিনয়ই নয়, একটু একটু গান গাইতে পারেন, নাচতেও পারেন। ছোটবেলা গান-নাচ দুটোই কিছুদিন শিখেছিলেন। কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন। কিন্তু ধৈর্য কম বলে চর্চাটা ধরে রাখেননি। এসবের বাইরে তিনি ভালো রাঁধুনিও। ‘অনেকে ভাবে আমি শুধু সাজুগুজুই পারি, কিন্তু আমার রান্না যারা খেয়েছেন তারা জানেন আমি পাকা রাঁধুনি। মনেপ্রাণে কিন্তু আমি সাংসারিক মেয়ে। ’

* প্রীতমের ‘ভোট ফর ঠোঁট’ গানের ভিডিও :


* শহীদ ও শুভমিতার ‘অবুঝ রাত’ গানের ভিডিও :

বাংলাদেশ সময় : ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ