সিদ্ধার্থ সুদর্শন এবং তার হাবভাব-আচরণ আকর্ষণীয়। সেসঙ্গে শিল্পের প্রতি তার তীব্র অনুরাগ দেখেই করণ জোহরের মতো বিখ্যাত নির্মাতা ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’র মাধ্যমে সিনেমায় অভিষিক্ত করেন তাকে।
সর্বশেষ ‘জবরিয়া জোড়ি’ সিনেমায় দারুণ সাফল্য পেয়েছেন সিদ্ধার্থ মালহোত্রা। কেউ বলেন কিয়ারা আদবানি, আবার কেউ বলেন তারা সুতরিয়ার সঙ্গে তার প্রেম চলছে। তবে লোকমুখে যা-ই প্রচার হোক না কেন, তিনি তার সবটুকু সময় সিনেমাতেই বিনিয়োগ করছেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা জানালেন এরকম অনেক কথা। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
পরিণীতি চোপড়ার সঙ্গে আপনি কেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন…
পর্দার বাইরে পরিণীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ ভাল। এটা একদিক থেকে বেশ সুবিধাজনক। যখন আপনি কারও সঙ্গে আবারও অভিনয় করতে যাবেন (‘হাসি তো ফাসি’র পরে), তখন তার সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করতে আপনাকে কোন কাঠখড় পোড়াতে হয় না। বেশ স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে থাকে সম্পর্ক। পরিণীতি দারুণ অভিনেত্রী। ‘জবরিয়া জোড়ি’ সিনেমার অভিনয় আমরা অনেক উপভোগ করেছি।
বলিউডে বেশ সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আপনি সংগ্রাম, সাফল্য ও অনিশ্চয়তার অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আপনার অর্ন্তদৃষ্টি কেমন?
আমার মনে হয়, বৃহত্তর কোন কিছুর জন্যই পৃথিবী আমাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’র মধ্য দিয়ে আমার অভিষেক সত্যিই সেরা ছিল। এরপর কিছু ভালো ও মন্দ সিনেমা পেয়েছি… বলা যায় একটা রোলার কোস্টার চলেছে আমার ওপর দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে আমি আরও শক্তিশালী ও বিচক্ষণ হয়ে উঠেছি। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। প্রথম যে সত্যটি আমি শিখেছি তা হলো, যদি একটি সিনেমার সাফল্য ও ব্যর্থতা আমার ওপর নির্ভর করে থাকে, তাহলে একজন অভিনেতা হিসেবে আমাকে সিনেমাটির সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হতে হবে, আরও নিজের করে নিতে হবে, আর অবশ্যই অপরের ওপর নির্ভরশীলতা বাদ দিতে হবে।
আপনাকে এমনটা অনুভব করতে হবে যে, আপনি আপনার সেরাটাই দিয়েছ্নে। আমি সিনেমা মুক্তির দিনে কোন পরিতাপ করতে চাই না, যখন আমার আর কিছুই করার থাকে না।
আর কোন উপলব্ধি?
এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি হলো কয়েক মাস পরপর নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার ব্যাপার। প্রবহমান নদীর মতো এটি কখনো শেষ হয় না। আমি আশাবাদী, আমি এগিয়ে চলেছি। ভারতে প্রত্যেক প্রজন্মে মাত্র কয়েকজন অভিনেতা দর্শকদের কাছে গৃহীত নায়ক বা নায়িকা হিসেবে স্বীকৃতি পান। আমি সেরকমই একজন হতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করি। এমন কোন মহাতারকা নেই যিনি কোন ব্যর্থ সিনেমা করেননি। এটা অগ্রযাত্রারই একটি অংশ।
আপনার পরিষ্কার ভাবমূর্তি আছে। এজন্য আপনি কি বিশেষ গুরুত্ব দেন?
আমার সহজাত প্রকৃতি হলো, সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা। আমি সিনেমাসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র থেকে উঠে আসিনি। আমি দিল্লিতে বড় হয়েছি। এই শিল্পে কাজ করার কোন ধারণাই ছিল না আমার। এটা বুঝে উঠতে আমার বেশ সময় লেগেছে। কিন্তু আমি সবসময়ই সৎ থেকেছি। আমি আমার অনুভবের কথা মানুষের মুখের সামনে অকপটে বলতেই পছন্দ করি। যদিও ইন্ডাস্ট্রিতে এটা কঠিন কাজ, তবুও আমি আমার সব লেনদেন ও সম্পর্কের জায়গা পরিষ্কার রাখতে সচেষ্ট থাকি।
তারা সুতরিয়া এবং কিয়ারা আদবানির সঙ্গে আপনার রোমান্স চলছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে…
এসব গুজব। আমি একটা উত্তরই দিতে পারি, আমার কাজের প্রতিই আমি পুরোপুরি নিবেদিত।
অর্থাৎ প্রেমের জন্য আপনার কোন সময় নেই?
আমি প্রেমের অভাববোধ করি না। আমার সবটুকু আবেগ ঘিরে শুধুই সিনেমা। আমি জীবনের এমন একটা পর্যায়ে রয়েছি যখন আমার অধিকাংশ শক্তি সিনেমাতেই ব্যয় করা প্রয়োজন। সম্ভবত, অবচেতন মনে আমি প্রেমকে ব্লক করেছি। আমি দর্শকের ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই মুখিয়ে থাকি। আমি এই প্রেমই চাই। আগামী বছরগুলোতে আরও বহু দর্শক আমাকে ভালোবাসুক, আমি এটাই চাই।
‘জবরিয়া জোড়ি’, ‘মর্যাবান’, ‘শের শাহ’... এরকম বাণিজ্যিক সিনেমাতেই আপনাকে বেশি গুরুত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে…
আমি বিষয়ভিত্তিক সিনেমার ওপর গুরুত্ব দিই যা অধিকতর দর্শকদের কাছে আবেদন রাখে। এটা আমার সচেতন সিদ্ধান্ত। কিন্তু সিনেমাতে একটি এক্স-ফ্যাক্টর থাকা দরকার। ‘জবরিয়া জোড়ি’ সিনেমায় জোরপূর্বক বিবাহ দেওয়ার ঘটনা ছিল চমকপ্রদ। ‘মর্যাবান’ সিনেমায় এমন কিছু কার্যকলাপ রয়েছে যা জীবনের চেয়েও বড় আবেদন রাখে। আর বিক্রম বাতরার বায়োপিক ‘শের শাহ’ হলো কারগিল যুদ্ধের সত্যিকার নায়কের কাহিনী।
আপনি নিজের কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
কিছু বিষয়ে আমি সহজাতভাবেই সতর্ক। বড় পর্দায় একবার যা দেখানো হয়, সেটা নিয়েই কিন্তু আপনাকে বাকিটা জীবন বাঁচতে হবে। অতএব আপনার কাজের জন্য আপনাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। ভারতের অধিকাংশ মানুষই বিনোদন চায়। আমরা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করি। এজন্য আপনার আবেগ ও দায়বদ্ধতা থাকা জরুরী।
ভক্তদের নিয়ে কোন মজার ঘটনা আছে?
সম্প্রতি আমি ‘জবরিয়া জোড়ি’ সিনেমার প্রচারণায় কাজ করছিলাম। একটি অনুষ্ঠানে দর্শকদের মধ্যে ছয়জন মেয়ে এসেছিল সাদা টি-শার্ট পরে। তাতে লেখা ছিল, ‘আমরা তোমাকে ভালোবাসি, সিদ’। তারা সবাই বোন ছিল। তাদের একজন প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে এবং আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে। এটা খুব মধুর মুহূর্ত ছিল। এটা এমনই এক মুহূর্ত যা আজ পর্যন্ত আমার অর্জিত সবকিছুকেই অর্থবহ করে তোলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
এমকেআর