ঢাকা: দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে প্রায়ই নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ভ্রমণ পিপাসুদের। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল বা এমপি প্লেয়ারে চার্জ দেওয়া যায় না।
এসব সমস্যার নিরসনে কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে ই-ক্যাপ।
ই-ক্যাপ মিলছে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার টেক্সটেক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো’তে।
ই-ক্যাপটি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পর্যটনকে সামনে রেখেই তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেক্স হ্যাকের সিএমও ও কো-ফাউন্ডার মো. মাসুদুর রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ মূলত গ্রীষ্মকালীন দেশ। প্রায় সময়ই অল্প বিস্তর রোদ থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। পর্যটকদের পোশাকের মধ্যে একটি বিশেষ অংশ হচ্ছে ক্যাপ। আর তাই আমরা এই ই-ক্যাপ তৈরি করেছি’।
‘আমাদের তৈরি ক্যাপে সোলার লাগানো আছে। ফলে ক্যাপটি মাথায় দিলে তা অটো চার্জ নিয়ে নেবে। ক্যাপটিতে রয়েছে মোবাইল চার্জ দেওয়ার পোর্টও, যেন পর্যটকরা মোবাইলে চার্জ দিয়ে নিতে পারেন। সঙ্গে রয়েছে একটি স্মার্ট এমপি থ্রি প্লেয়ার সিস্টেম, যার মাধ্যমে মোবাইল সংযোগ করে গান শোনা যাবে। আরো রয়েছে মোমোরি কার্ড সংযোগের পোর্ট’।
‘পর্যটকরা রাতে ঘুরতে বের হলেও সহায়তা করবে এই ই-ক্যাপ’।
টেক্সটেকের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল রুমন বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু দিনে রোদ থেকে সোলারটি চার্জ হচ্ছে তাই রাতে এর মাধ্যমে আলো পাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ই-ক্যাপটির সামনে আছে লাইট। বাটন চাপলেই লাইটটি জ্বলে উঠবে। শুধু যে রোদ থেকেই ই-ক্যাপে চার্জ দেওয়া যাবে এমনটি নয়। ইলেকট্রিসিটির মাধ্যমেও প্রয়োজনীয় চার্জ দিয়ে নিতে পারবেন ব্যবহারকারীরা’।
ই-ক্যাপের পাশাপাশি এই তরুণরা তৈরি করেছেন ই-মোজাও। এ মোজা পড়ে হাঁটলে কতো কিলোমিটার হাঁটা হয়েছে, কতোটা ক্যালোরি খরচ হয়েছে তা সহজেই জানা যাবে মোবাইল সফ্টওয়ারের মাধ্যমে।
অন্যদিকে সাইকেলের দুর্ঘটনা কমাতে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ই-ব্যাগপ্যাক। এ ব্যাগপ্যাকে আছে সার্কিট ও সুইচ। সাইকেল চালানোর সময় ব্যাগপ্যাকটি কাঁধে রেখে প্রয়োজন অনুসারে সুইচ টিপলেই সেটি করবে ইন্ডিকেটরের কাজ।
বাংলাদেশি তরুণদের এমন অভিনব উদ্ভাবন দেখে খুশি বিদেশি ইউলু টেক্সাটাইলের সেলস ম্যানেজার এলেক্স হুয়াং।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের পণ্য এর আগে অন্য কোনো দেশে তৈরি হয়েছে বলে আমি এখনো জানি না। সম্ভবত বাংলাদেশই প্রথম এ ধরনের ই-ক্যাপ ও ব্যাগপ্যাক তৈরি করছে। সত্যি ভালো লাগছে এসব দেখে’।
তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন অত্যাধুনিক উপাদান ও প্রযুক্তি নিয়ে ২৩টি দেশের সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠান হাজির হয়েছে ‘টেক্সটেক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো’তে।
কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সিবিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড-সেমস গ্লোবাল আয়োজিত ১৭তম এ এক্সপো উপলক্ষে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এক ছাদের নিচে এসেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
পোশাক খাতের অত্যাধুনিক সব মেশিনারিজ, কেমিক্যাল, এক্সেসরিজ, ফেব্রিক্সসহ সব ধরনের প্রযুক্তি ও উপাদানের সম্ভার নিয়ে বুধবার (৩১ আগস্ট) শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে আগামী শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সবার জন্য প্রদর্শনী উন্মুক্ত (১২ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে)।
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এক হাজার ৫০টি কোম্পানি প্রদর্শনীতে তাদের পণ্য সাজিয়েছে। আইসিসিবি’র চারটি হল ছাড়াও আরো নয়টি প্যাভেলিয়ন তৈরি করা হয়েছে। মনোমুগ্ধকর এসব স্টলে সাজানো আন্তর্জাতিক পণ্যগুলো ভোক্তা, দর্শক ও উদ্যোক্তাদের জন্য একটি যুগোপযোগী প্লাটফর্ম। যেখানে তারা কার্যকরী যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।
আয়োজকরা জানান, প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভোক্তা, আমদানিকারক ও সরবরাহকারীদের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে তুলবে, যা বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেমস গ্লোবাল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বহুজাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে আসছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৬
ইউএম/এএসআর