ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় ঘোরাঘুরি

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় ঘোরাঘুরি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। ছবি: বাংলানিউজ

পটুয়াখালী: সাগরজলে লালচে রঙের আভা ছড়িয়ে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত, বালুতটে লাল কাঁকড়ার নৃত্য অথবা সাগরের ঢেউয়ের গর্জন করে তীরে আছড়ে পড়ার মতো মনোরম দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়।

আর এই ঈদের ছুটিতে তাই যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন কেওড়া, ছৈলা, বাবলা, নারিকেল গাছে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়।

যদিও ভ্রমণ পিপাসুরা এরই মধ্যে ঈদের পরের দিন থেকে কুয়াকাটার বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে রুমের জন্য অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরিফ বলেন, ঈদের ছুটিতে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটকদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত কুয়াকাটা। বিশেষ করে কুয়াকাটার হোটেল মোটেলগুলো সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে আগতদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য। ঈদের ছুটিতে আসা পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। সাগরকন্যা কুয়াকাটা।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারেও রমজান মাসে কুয়াকাটায় তেমনভাবে কোনো পর্যটকের দেখা মেলেনি। তবে ঈদের পরের দিন থেকে এই পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সৈকত লাগোয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান জানান, রোজায় পর্যটক কম থাকায় বেচা-বিক্রিও কম হচ্ছে। তবে ঈদের ছুটিকে ঘিরে পর্যটকদের জন্য সব ব্যবসায়ীরাই আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। নতুন নতুন পসরা সাজিয়েছেন নিজ নিজ বিক্রয়কেন্দ্রে।

পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ঘুরতে আসাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান।

এদিকে পর্যটকদের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সৈকত এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা।

তিনি বলেন, পর্যটকদের যাতে কুয়াকাটায় এসে কোনো ধরনের সমস্যা বা বিড়াম্বনায় পড়তে না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।

পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণে কলাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত লতাচাপালী ইউনিয়নে অসাধারণ ভ্রমণ স্বর্গ খ্যাত সমুদ্র সৈকতটির অবস্থান। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকেই রয়েছে গঙ্গামতির বা গজমতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও আগুনমুখা নদীর মোহনা, পশ্চিমে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও আন্ধারমানিক নদের মোহনা, উত্তরে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের বাণিজ্যকেন্দ্র আলীপুর।

কুয়াকাটায় বেড়াতে গেলে যেগুলো না দেখলেই নয়, তারমধ্যে রয়েছে, সৈকতের পূর্ব প্রান্তের চারগঙ্গামতী থেকে লাল কাঁকড়া ও সূর্যোদয় দেখা, পশ্চিম প্রান্তের লেম্বুরচর থেকে সূর্যাস্ত দেখা। ঘুরে দেখা যাবে নারিকেল বীথি, ফয়েজ মিয়ার বাগান, ইকোপার্কসহ কয়েকটি স্থান।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ইঞ্জিনচালিত বোটে চরে ফাতরা, লালদিয়া, হরিণবাড়িয়া, সোনাকাটা ইকোপার্কসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলও ঘুরে দেখা যায় এখান থেকে।

কুয়াকাটায় বিভিন্ন স্থানে দেখা যাবে রাখাইনদের ছোট ছোট পল্লিতে থাকা তাত শিল্প ও রাখাইন নারীদের সংগ্রামী জীবন। দেখা যাবে শুঁটকি ও জেলে পল্লির কর্মব্যস্ত জীবন।

বেড়িবাঁধ ঘেষে কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে সীমা বৌদ্ধ মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি। পাশাপাশি কুয়াকাটার রাখাইন আদিবাসীদের আরেকটি বাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। সেখান থেকে কিছু দূরে আমখোলা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি।

কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে আলীপুর-মহিপুরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম মাছ বিক্রয়কেন্দ্র । যেখান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রলার বঙ্গোপসাগরে যায় মাছ ধরতে। এসব জায়গায় ঘুরতে হলে ভাড়ায় মোটরসাইকেল কিংবা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে চরে ঘুরতে পারেন যে কেউ। সাগরকন্যা কুয়াকাটা।  ছবি: বাংলানিউজএছাড়া ঘোড়ায় চরে সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ কিংবা সূর্যস্নান করে দিব্যি সময় কাটানো যায় এই সৈকতে। পাশাপাশি সমুদ্রস্নানের জন্য রয়েছে বয়া, লাইফজ্যাকেটসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা। কেনাকাটা করতে চাইলে সৈকতপারের মার্কেট, রাখাইন নারী মার্কেটসহ বেশ কিছু দোকান রয়েছে কুয়াকাটায়।

নিয়মিত খাবারের জন্য বেশ কিছু হোটেল, রেস্টুরেন্ট থাকলেও তাজা সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়া ভেজে কিংবা বারবিকিউ করে খেতে চাইলে সৈকত সংলগ্ন অস্থায়ী মার্কেটে রয়েছে তার ব্যবস্থা।

নদী ও সড়ক দু’পথেই কুয়াকাটা যাওয়া যায়। তবে বিমানে করে বরিশাল হয়েও কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বরিশাল ও পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চযোগে পটুয়াখালী নেমে পটুয়াখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়া যায়।

এছাড়া লঞ্চযোগে কিংবা বিমানে করে বরিশাল নেমে নগরের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে কুয়াকাটায় যাওয়া যাবে। আর সড়কপথে ঢাকা থেকে সরাসরি যেতে চাইলে ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাসে যাওয়া যাবে। সাদামাটা ছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসও এই পথে চলাচল করে।

কুয়াকাটায় গিয়ে রাত্রি যাপন করতে হলে সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাস, গ্র্যান্ড হোটেলের মতো নামিদামি হোটেল ছাড়ায় রয়েছে স্বল্পখরচে থাকার সু-ব্যবস্থাসম্পন্ন বেশকিছু দেড়শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। যেসব হোটেলে কক্ষের আকার ও আকৃতি ভেদে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলা‌দেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।