ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

প্রত্নপর্যটনের সম্ভাবনাময় স্থান রাজনগরের ‘কমলা রাণীর দিঘি’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
প্রত্নপর্যটনের সম্ভাবনাময় স্থান রাজনগরের ‘কমলা রাণীর দিঘি’ রাজনগরের কমলা রাণীর দিঘি। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: প্রত্নতত্ত্ব নির্দশনের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হতে পারে ‘কমলা রাণীর দিঘি’। প্রায় হাজার বছরের পুরানো এ জলাধারটি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের অবস্থিত।


এ দিঘিটির চারপাশে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দিঘিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচেনা করে এখানে অনায়াসে গড়ে তোলা যেতে পারে  আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র।

মৌলভীবাজারের প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান অনুসন্ধানে আসেন প্রত্নতত্ত্ব প্রতিনিধি দল। তারা ২৫ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত জেলার কুলাউড়া, জুড়ি এবং রাজনগর উপজেলায় অনুসন্ধান চালায়। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় হাজার বছর আগে রাজনগরের কমলা রাণীর দিঘি খনন করা হয়। আমদের গবেষক দলের ধারণা, এটি মোগল আমলেরও আরো আগের। ফলে এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ দিঘিটা কালচারালি (সাংস্কৃতিকভাবে) অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ দিঘিই হতে পারে মৌলভীবাজারের পর্যটনের বড় একটি সম্ভাবনাময় কেন্দ্র। অন্যগুলো দখল করে ফেলছে; এটা এখনও দখল ওইভাবে হয়নি।
 
তিনি আরো বলেন, কুলাউড়ার ভাটেরাটিলায় আমরা প্রথমে অনুসন্ধান চালাই। সেখানে দেখা যায় যে মাটির নিচে অনেক সাংস্কৃতিক নির্দশন আছে। সেটা হয়তো আমাদের আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। দু’টি টিলার মাটির নিচ প্রাচীন মৃৎশিল্পের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে ভরা। পঞ্চম থেকে অষ্টম শতকের সময়কার এ স্থানটি অনেক সমৃদ্ধ।  রাজনগরের কমলা রাণীর দিঘি।  ছবি: বাংলানিউজ

অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, অনুসন্ধান শুরুর দ্বিতীয় দিন আমরা গিয়েছিলাম জুড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর সাগরনালে। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম শুধু ধানক্ষেত, পানি আর পাশে হচ্ছে সাগরনাল চা বাগান এবং পাহাড়। তৃতীয় দিন গেলাম রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামের পরেশ পালের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে তাম্রলিপি উদ্ধারের বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছি।

এগুলো খুঁজতে গিয়ে বোনাস (অতিরিক্ত অর্জন) হিসেবে আমরা কমলা রাণীর দিঘি এবং কুতুব শাহের মাজারের সন্ধান পেয়ে যাই। তবে কাঙ্ক্ষিত প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। খনন কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নির্দশন পাওয়া যেতে পারে। সেই লক্ষ্যে কুলাউড়ার ভাটেরাটিলা এবং রাজনগরের কমলারাণীর দিঘিসহ এর আশপাশে আগামী শুষ্ক মৌসুমে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে খনন করা হবে বলেও জানান ড. মো. আতাউর রহমান।

প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভাটেরাটিলা, পশ্চিমভাগ গ্রামসহ অন্যান্য স্থান থেকে মাটির পাতিলের কিছু পুরনো ভাঙ্গা অংশ সংগ্রহ করেছেন। প্রত্নতত্ত্ব দলের অপর সদস্যরা হলেন-ফিল্ড অফিসার শাহীন আলম, সহকারী কাস্টোডিয়ান হাফিজুর রহমান, গবেষণা সহকারী ওমর ফারুক ও সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা।

মৌলভীবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল ইসলাম এ দিঘি সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, জনশ্রুতি আছে যে রাজনগর উপজেলায় বহু বছর আগে এক রাজপরিবারের বসবাস ছিল। প্রায় দুইশ’ বিঘা জমিতে খনন করা এ দিঘিটির নামকরণ করা হয়েছে জমিদার সুবিদ নারায়ণের স্ত্রী কমলা রাণীর নামানুসারে। কমলা রাণীর দীঘির ঘাটটিও হাজার বছরের পুরনো।

এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা পাল বাংলানিউজকে বলেন, কমলা রাণীর দিঘির ঐতিহাসিক নিদর্শনের কথা আমি শুনেছি। এ দিঘির সরকারি যতটুকু জায়গা এখানে আছে, সেটুকু প্রতি বছরই লিজ দেওয়া হবে। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার পরিমাণও সেখানে রয়েছে।
    
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
বিবিবি/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।