ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

১৪৮১ সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়চূড়ার ‘দেবতা পুকুর’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
১৪৮১ সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়চূড়ার ‘দেবতা পুকুর’

খাগড়াছড়ি: পাহাড়ি ভাষায় মাতাই পুখুরী। বাংলায় দেবতা পুকুর।

পাহাড়চূড়ার অপরূপ এক প্রাকৃতিক পুকুর। পর্যটকদের কাছে এটি যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি তীর্থযাত্রীদের কাছে ধর্মীয় বিশ্বাসের পবিত্র জায়গা। সেখানে গেলে মনের চাওয়া পূর্ণ হয়। এমনটাই বিশ্বাস করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
 
স্থানীয় আদিবাসী ত্রিপুরাদের মতে, পাহাড়ের উপরের এই পুকুরের পানি কখনো কমে না এবং পানি পরিষ্কারও করতে হয় না। তাই স্থানীয় নাম মাতাই পুকুরী বা দেবতা পুকুর। বছরের অধিকাংশ সময় পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায় এ পুকুরে কেন্দ্র করে।
 
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাইসছড়ির নুনছড়িতে প্রায় এক হাজার ফুট উপরে অবস্থিত স্বচ্ছ পানির অপূর্ব প্রাকৃতিক পুকুর। ত্রিপুরা অধ্যুষিত নুনছড়ি গ্রামের কিছুটা মাটির পথ যাওয়ার পর শুরু হয় সিঁড়িপথের যাত্রা। এই পুরো যাত্রা পাহাড় দেখার ষোলআনা পূর্ণ করে। পাহাড়ের বুকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে দেখা যাবে সুবজ পাহাড়ের ভাঁজ, মেঘ-পাহাড়ের মিতালি। স্থানীয়দের সংগ্রামী জীবনও দেখা যাবে এখানে।
 
...সচরাচর পাহাড় বেয়ে উঠতে কষ্ট হলেও এখানে কিছুটা ব্যতিক্রম। কারণ আগে একাধিক পাহাড়ের মাটির পথ বেয়ে পুকুরে যেতে হতো। বৃষ্টিতে পিচ্ছিল পথ ধরে যাতায়াত ছিল কষ্টের। তবে ২০১৫ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নুনছড়ি থেকে দেবতা পুকুর পর্যন্ত তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের সুবিধার জন্য সিঁড়িসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে দেয়। সেখানে একটি শিবমন্দিরও নির্মাণ করা হয়।
 
সারা বছর কমবেশি তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের উপস্থিতি থাকলেও বিশেষ করে নববর্ষ বা বৈসাবীর দিনগুলোতে হাজারো তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকের দেখা মেলে এখানে। কথিত আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য জল দেবতা স্বয়ং এ পুকুর খনন করেন। পুকুরের পানিকে স্থানীয় লোকজন দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করেন। প্রচলিত আছে যে, এ পুকুরের পানি কখনো কমে না।
 
...স্থানীয় পর্যটক জয় দে ও সুম্প্রীতি ত্রিপুরা বলেন, সুযোগ পেলেই আমরা দেবতা পুকুরে ঘুরতে যাই। আগে পুকুরে পৌঁছাতে দেড় থেকে দু ঘণ্টা সময় লাগতো। কিন্তু এখন সিঁড়ি বেয়ে ৪৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যায়। এছাড়া বিশ্রামের জন্য সিঁড়িপথের বিভিন্ন স্থানে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বয়স্করাও সহজে যেতে পারবেন।  

দেবতা পুকুর পৌঁছাতে ১৪৮১টি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় বলেও জানান তারা।
 
ঢাকার ট্র্যাভেল গ্রুপ ‘আমার টাকায় আমি ঘুরি গ্রুপ’র অ্যাডমিন কুমু নেসা ও পার্থ দাশ বলেন, দেবতা পুকুরের পুরো যাত্রাপথ এক কথায় অসাধারণ। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে যতদূর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। তারপর সবুজ পাহাড়ে ঘেরার মাঝখানে স্বচ্ছ পানির পুকুরটি দেখতে মনোমুগ্ধকর।  
 
..অপর পর্যটক নুরুজ্জামান তালুকদার ও মো. টিটু বলেন, যতটুকু জানি পাহাড়ে পানির সমস্যা। বাঁধ দিয়ে পানি সংরক্ষণ করতে হয়। সেখানে পাহাড়ের উপরে পানির এমন উৎসব সত্যিই অবিশ্বাস্য।
 
বর্তমানে খাগড়াছড়ির অন্যতম দু’টি পর্যটন স্পটের মধ্যে একটি দেবতা পুকুর ও অপরটি মায়ূং কপাল সিঁড়ি বা হাতির মাথা সিঁড়ি। দুটোতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পর্যটকসহ সবার সুবিধার্থে সিঁড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। হাতির মাথা লোহার সিঁড়ির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩শ ২০ ফুট এবং দেবতা পুকুরের সিঁড়ির দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ৫শ ফুটেরও বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
এডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।