ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাণিজ্যমেলা

বাণিজ্যমেলার প্রবেশদ্বার হচ্ছে মেট্রোরেল-স্টেশনের আদলে

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
বাণিজ্যমেলার প্রবেশদ্বার হচ্ছে মেট্রোরেল-স্টেশনের আদলে

ঢাকা: দ্বিতীয়বারের মতো পূর্বাচলের স্থায়ী ভবনে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ অ্যাক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০২৩। এরইমধ্যে মেলার ৮০ শতাংশ কাজ প্রায় সম্পন্ন।

মেলা প্রাঙ্গণজুড়েই চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। তবে দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণে থাকছে বাণিজ্যমেলার প্রধান ফটক নিয়ে।

প্রতিবছরই প্রবেশদারের ভিন্নতা দর্শনার্থীদের চমক দিয়ে থাকে বাণিজ্যমেলা। এবছর প্রবেশদারে ভিন্নতা আনতে দুই পাশে মেট্রোরেল ও মাঝে মেট্রোরেল স্টেশনের ডামির দিয়ে তৈরি করা হবে। এছাড়া পুরোমেলায় ইকোনোমিকজোন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃর্তি, প্যাভিলিয়ন, শিশুপার্ক, বর্তমান সরকারের ফাস্টট্রাক প্রকল্প ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ সাজানো হবে বলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে।  

এ বিষয়ে ইপিবি সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পহেলা জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যমেলা শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন সকালে এ মেলার উদ্বোধন করবেন। বাণিজ্যমেলার প্রবেশদারের প্রতি সবার আকর্ষণ থাকে। এবার বাণিজ্যমেলার প্রবেশদারে ভিন্নতা আনতে মেট্রোরেল, মেগা প্রকল্প ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃর্তি দিয়ে তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে মেলা প্রাঙ্গণের ৮০ শতাংশ কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি, মেলা শুরুর আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বাণিজ্যমেলার প্রধান আকর্ষণ হবে প্রবেশ গেইট। এবছর গেইটের থিম হিসেবে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল, ইকোনোমিকজোন ও বর্তমান সরকারের ফাস্টট্রাক প্রকল্প। এবছর গেইট অনেক সুদৃশ্য ও আকর্ষণীয় হবে। আশা করছি, অন্যান্য বছরের থেকে ভালো হবে। এবছর গেইটের দুই পাশে রেলগাড়ি ও মাঝে মেট্রোরেল স্টেশনের আদলে গেইট করা হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে গেইটের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ তারিখের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া উন্নত বিশ্বের যেভাবে মেলার আয়োজন করা হয়। আমরা তাই করার চেষ্টা করছি। সেইল স্ক্রিন দিয়ে আন্তর্জাতিক মেলাগুলোর মতো ছোট ছোট স্টলগুলো সীমানা দিয়ে দেওয়া হবে। ভেতরে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতো করে প্রয়োজন অনুযায়ী ডেকোরেশন করবে।

বাণিজ্যমেলার পরিচালক বলেন, গতবছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবছর মেলা আরও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। গতবছর কোভিড-১৯ নিয়ে মানুষ একটু ভয়ে থাকলেও এবছর সে ভয় নেই। তাই আশা করছি, এবছর মেলা অনেক বেশি জাঁকালো হবে। দর্শনার্থীও বাড়বে। এবার প্রত্যেকটি বিষয় সুন্দরভাবে করা হচ্ছে। তবে নতুন জায়গা কিছুটা চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই মেলার কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মো. ইফতেখার আহমেদ বলেন, এবারের মেলায় প্রবেশ ফি গতবারের মতো। বড়দের জন্য ৪০ টাকা শিশুদের ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ সার্ভিস থাকবে। বিআরটিসির বাস সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত চলাচল করবে। ৩০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে যে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে আসতে পারবেন। তবে এবার ভাড়া একটু কম বেশি হতে পারে। যেহেতু জ্বালানি তেলার দাম বেশি। এবছরও বিকাশে বাণিজ্যমেলার প্রবেশের টিকিট ও বাসের টিকিট কাটলে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। গতবছর বিকাশ এ সুবিধা দিয়েছিল। এবারও তাদের ইজারাদারদের কথা হয়েছে। এবছরও তারা একই সুবিধা দেবে।

দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য এবারও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসি বাস রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে বাস সার্ভিস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলাচল করবে। এখানে ন্যূনতম একটা ভাড়া থাকবেই। সম্ভবত ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা হবে ১২ কিলোমিটার রাস্তার জন্য। ফ্রি সার্ভিস দিলে আশেপাশের স্থানীয় লোকজনই বেশি চলাচল করবে। তখন দর্শনার্থীদের চলাচল কঠিন হবে। এজন্য মিনিমাম একটা ভাড়া নেওয়া হবে।

মেলাকেন্দ্রে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫শ’টি গাড়ি রাখা যাবে। তবে মেলার শৃঙ্খলার স্বার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানেই ১ হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। ১৫শ গাড়ির বেশি একই সঙ্গে থাকে না। এছাড়া অ্যাক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ আছে।

এবছর বাণিজ্যমেলায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ও স্টল অনেক বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরাসরি অংশ গ্রহণ করেছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, তুরস্ক, কোরিয়াসহ ৮টি দেশ। এছাড়া চীন,পাকিস্তান, ইরান, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ ইনডাইরেক্ট মেলায় অংশ নিচ্ছে ৫/৬টি দেশ। অনেকের আগ্রহ ছিল কিন্তু ডলার সংকটে একটু সমস্যা হচ্ছে।

গত বছরের থেকে ১০৫টি স্টল বেশি। গতবছর ২২৫টি স্টল ছিল। হলের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলে এবছর ৩৩১টি স্টল থাকছে। এর মধ্যে প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে ৫৪টি, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ২৩০টি। বিদেশি প্যাভিলিয়ন আছে ১৭টি, ফুডকর্নার রয়েছে ২৩টি। গতবছর ১৭টি মেগা প্যাভিলিন ছিল এবছর ৪৫টি হয়েছে৷ হলের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবে। ফুডজোনের মাঝখানের স্থানে একটি শিশুপার্ক করা হয়েছে। মেলায় দৃষ্টিনন্দন করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিন করা হচ্ছে, কাজ প্রায় শেষের দিকে। ডার্চ বাংলা, ইসলামী, জনতা ও মার্কেন্টাইলসহ ৪টি ব্যাংক সরাসরি মেলায় সেবা দেবে এবং আরও ৪/৫টি ব্যাংকের সঙ্গে কথা চলছে।

এছাড়া মেলার বামপাশে বিশাল খোলা জায়গা রাখা হয়েছে যাতে দর্শনার্থীরা রিলাক্সে একটু সময় কাটাতে পারে। গতবছর এটা ছিল না। গতবছর মেলার মাঠ পেছনে নেওয়া যায়নি এবছর আরো অনেক বড় পরিসরে মেলা আয়োজন করা হচ্ছে।

ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তারাদের নিয়ে ৪টি টিম সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন। নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে থাকছে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যমেরা। মেলার একটি শিশুপার্ক, দুইটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, একটি মা ও শিশুকেন্দ্র, একটি বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন এবং একটি ইপিবির তথ্য সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।  

থাকছে ডিজিটাল অ্যাক্সপেরিয়েন্স সেন্টার (ডিজিটাল টাচ স্ক্রিন প্রযুক্তি), যার মাধ্যমে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট স্টল ও প্যাভিলিয়ন অতি সহজে খুঁজে বের করতে পারেন। এছাড়াও পর্যাপ্ত এটিএম বুথ, রেডিমেড গার্মেন্ট পণ্য, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালী ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আরও থাকছে তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী ও ফার্নিচার সামগ্রী।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানু্যায়ী, দ্বিতীয়বারের মতো স্থায়ী ভবনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এ মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলার গেট ও বিভিন্ন স্টল প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারও মেলার টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে। এবারও ইপিবি যৌথভাবে থাকছে বাণিজ্যমেলার আয়োজনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।