সকাল থেকে মেলার গোসলখানায় পানি নেই। কিছুক্ষণের জন্য পানি এলেও বন্ধ হয়ে যায় পানির কল।
রোববার (০৮ জানুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পশ্চিম প্রান্তের গেটের পাশের গোসলাখানার চিত্র এটি। ভিআইপি গেটের অবস্থা আরও বেহাল। পুরুষদের বাথরুমে পানি না থাকায় তারা ঢুকে গিয়েছেন মেয়েদের বাথরুমে।
বাথরুম ইনচার্জ রোকসানা চেঁচিয়ে চেচিয়ে বলছেন, এখানে ঢোকা নিষেধ। এটা মেয়েদের।
কে শোনে কার কথা। বিপদে পড়লে যা হয়।
মেয়েদের বাথরুমের সামনে ব্রাশ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক স্টল কর্মচারী মানিক মিয়া। মেয়েদের বাথরুমে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরটায় পানি নাই। পশ্চিমপাশে পুরুষদের গোসলাখানায় গেলাম, সেখানেও পানি বন্ধ করে দিয়েছে। ব্রাশ না করলে তো কাস্টমারের সঙ্গে কথেই বলতে পারবো না।
মুসলিম বিরিয়ানি স্টলের দোকানে উস্কখুস্ক চুলে খাবারের হাঁড়ি মুছছেন রিপন। তিনি বলেন, কালও গোসল করতে পারি নাই। সকালে গিয়ে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চলে এসেছি। আজও সম্ভবত গোসল হবে না।
পানির সঙ্কট কতোদিন থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরুর দিন থেকেই। প্রতিদিনই আমাদের পানির কষ্ট হচ্ছে। অথচ এই দোকানের ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
রেশমি চাদরের স্টল কর্মচারী ফয়সালেরও একই অভিযোগ, একটু বেলা করে গোসল করতে গেলেই পানি পাওয়া যায় না। দুপুরের দিকে পানির কল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
পাশে দাঁড়ানো আরেক কর্মচারী সোহাগ বললেন, আমাদের দোকান ভাড়া সাত লাখ টাকা। অথচ সে হিসেবে আমাদের কোনো সুযোগ-সুবিধাও দেয় না কর্তৃপক্ষ। কাল রাতে যখন দোকান বন্ধের সময়, সেসময় বিদ্যুৎ চলে যায়। অনেকক্ষণ চেচামেচির পর বিদ্যুৎ এসেছে। এভাবে চললে তো আমরা বিপদে পড়ে যাবো যেকোনো সময়।
এদিকে টাকা দিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পানির লাইন থেকে সরাসরি পানি নিচ্ছেন এখানকার অনেক ব্যবসায়ীরা। এমন অভিযোগও করলেন এক স্টলের কর্মচারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফার্টফুডের ওই স্টল কর্মচারী বললেন, আমরা পানি পাই না আবার অনেক দোকানে দেখি সারাদিনেও পানির অভাব হয় না। আসলে টাকা হলে সব হয়।
মেলার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় গিয়ে দেখা গেলো, জিয়া উদ্যান পার্কের সঙ্গে সংযোগ করে যে পানির ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে সেটিতে পানি নেই।
পাম্প ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম জানালেন, জিয়া উদ্যানের সঙ্গে সংযুক্ত করে যে পানির লাইন দেওয়া হয়েছে সেই পাইপ ফেটে গেছে। এর ফলে এই গোসলখানায় পানি নেই।
মেরামতের জন্য মিস্ত্রিরা কাজ করছেন করছেন বলেও জানান শহিদুল।
তবে টাকা দিয়ে সরাসরি পানির লাইন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে শহীদুল আরও জানান, কেউ যদি বলতে পারে টাকার বিনিময়ে আমি তাকে পানি দিয়েছি, তাহলে মুখে জুতার বাড়ি খাবো।
শুরু থেকে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে, তাহলে কি আপনি অবগত ছিলেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই তো আপনার কাছ থেকে জানলাম। এখন ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭
জেডএফ/এসএনএস