শনিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্যমেলার মেলা শেষ দিন সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীর পরিমাণ অন্যদিনের তুলনায় কম লক্ষ্য করা গেছে। ফলে ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রিও কম হয়েছে।
মেলার সময় বাড়ানোর খবর ভালোভাবে প্রচার না হওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও হাঁকডাক দিয়েও ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
এদিন বাণিজ্যমেলার গেট সকাল ৯টায় সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু অন্যদিনের মতো এদিন গেটের বাইরে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি। সকাল থেকে দর্শনার্থী কম দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীকে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে অনেক স্টলে বেচাবিক্রি না হওয়ায় বিকেলের পর স্টল গোছাতে দেখা গেছে।
এছাড়া মেলার ভেতরে ও বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তৎপরতা দেখা যায়। তারা দর্শনার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করছেন। এছাড়া মাইকে প্রচার করা হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের ছাড়ের খবর।
বিক্রেতারা বলেন, আসলে গতকাল শুক্রবার ছিল মেলার শেষ দিন। আমাদের আবেদনের কারণে মেলার সময় একদিন বাড়ানো হয়। অন্যদিনের তুলনায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ার পরও আজ দর্শনার্থী কম। মেলার শেষ দিন সাধারণত আমাদের বেচাবিক্রি দ্বিগুণ হয়। এবার গতবারের থেকেও খারাপ অবস্থা। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে দর্শনার্থীর পাশাপাশি কম-বেশি বিক্রি থাকে। আজ বিক্রি একেবারে নেই বললেই চলে। সবাই শুধু ঘুরে যায়। পণ্য দেখে কিন্তু দাম বলে না। তবে পুরো মাস হিসাব করলে আমাদের চালান উঠে আসবে।
বাড্ডা থেকে সপরিবারে মেলায় আসা রাজু বাংলানিউজকে বলেন, আজ মেলাতে ঘুরে ভালো লাগলো। কারণ, অন্যদিনের তুলনায় ভিড় কম ছিলো। ইচ্ছা থাকলেও কাজের চাপে অন্যদিন আসতে পারিনি। মেলার শেষ দিন জিনিসপত্রের দাম কম ও বিভিন্ন ছাড় পাওয়া যায় তাই আজ এসেছি। কিন্তু আমার ধারণা ভুল, মেলার শেষে ভালো পণ্য পাওয়া যায় না। শেষ দিনে বিক্রি না হওয়া পণ্যগুলোই রয়ে যায়। এছাড়া শেষের দিনে স্টল মালিকরা স্টল বন্ধ করে ব্যাগ গোছাতেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যার আগেই বেশিরভাগ খাবারের স্টল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শনিবার সকালে মেলার সমাপনী ঘোষণা ও সেরা প্যাভিলিয়ন মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সমাপনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি বছর বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো প্রায় ২০০ কোটি টাকার রফতানি আদেশ পেয়েছে। গত বছর ২৩তম আসরে ১৬৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকার রফতানি আদেশ পেয়েছিলো। সে হিসেবে এ বছর রফতানি আদেশ বেড়েছে ৩৫ কোটি টাকা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, মেলায় অনন্য সন্মাননা পুরস্কার, সেরা প্যাভিলিয়ন, সেরা স্টল, সেরা রেস্তোরাঁ ও সেরা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে ৪২ প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃতি করা হয়। অনন্য সন্মাননা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। ১৩ প্রতিষ্ঠানকে গোল্ড কালার ট্রফি, ১৪ প্রতিষ্ঠানকে সিলভার ট্রফি এবং ১৫ প্রতিষ্ঠানকে ব্রাস ট্রফি দেওয়া হয়।
ভ্যাট দেওয়াকে উৎসায়িত করতে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে তিন প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী হিসেবে ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো, হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেড, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং এসকোয়ার ইলেক্ট্রনিক্স লিমিটেড।
গত ৯ জানুয়ারি বিকেলে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে রয়েছে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল ৪১২টি।
বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে। দেশগুলো হলো— থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৯
জিসিজি/এমজেএফ