ঢাকা: পূর্বাচলে স্থায়ী ঠিকানায় প্রথমবারের মত শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২। শনিবার (১ জানুয়ারি) মেলা উদ্বোধন হলেও এখনও চলছে স্টল-প্যাভিলিয়নের অবকাঠামো নির্মাণ ও সাজসজ্জার কাজ।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে এখনও চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এছাড়া গোডাউন না থাকায় পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকরা।
এর আগে শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মেলারআনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভিসি এ এইচ এম আহসান, দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী দিন সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলার মূল আকর্ষণ প্রধান ফটক ও ভেতরে প্রবেশদ্বারে ৫টি মেগা প্রকল্পের কাঠামো, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরির কাজ শেষ হলেও এখনও সাজসজ্জার কাজ চলছে। এছাড়া মেলার ভেতরের রাস্তার নির্মাণ, সেন্টারের ভেতরে কিছু স্টলের নির্মাণ ও সাজসজ্জার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলেও বেশিরভাগ স্টলের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। কোনো স্টলে রঙ দেওয়া হচ্ছে, কোনটিতে বোর্ড লাগানো হচ্ছে, আবার কোনো স্টল শুধু কাঠামোটাই দাঁড় করিয়েছে। এসব স্টলের কাজ পুরোপুরিভাবে শেষ হতে আরও তিন চার দিন সময় লেগে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে মাই ওয়ান। তাদের স্টল মিনিস্টার। মিনিস্টারের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন কে এম জি কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের স্টল সম্পূর্ণ রেডি। স্টল বরাদ্দ পেতে দেরি হয়েছে। ফলে নির্মাণে সময় কম পেয়েছি। তবে গত এক সপ্তাহে অনেক কষ্টে রেডি করতে পেরেছি। নগরী থেকে অনেক দূরে হওয়ায় একদিনের কাজ দুই দিনে করতে হয়। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো না, ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এখানে কাজের লোকেরও অনেক সঙ্কট রয়েছে। ফলে চাইলেই দ্রুত কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, শনিবার মেলা শুরু তাই আমাদের সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য আনতে হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ডিসপ্লেতে যেগুলো দিয়েছি তার বাইরে পণ্য রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। গোডাউন থাকলে ভালো হতো। তাহলে স্পট বিক্রিটা বেশি করতে পারতাম। গত বছর আমরা প্রায় ২ কোটি টাকার স্পষ্ট বিক্রি করেছি। এছাড়া অর্ডারতো রয়েছেই। এজন্য ইপিবির কাছে আমাদের আবেদন তারা যেন এই এক্সিবিশন সেন্টারের পণ্য সংক্ষণের জন্য গোডাউনের ব্যবস্থা করে। একই সঙ্গে ইপিবির একটি নিজস্ব ইন্ট্রোরিয়ার বা ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কাজ করার টিম থাকলে ভালো হতো। তাহলে আমাদের হয়রানি অনেকাংশে কমতো।
মেলায় অংশ নেওয়া ফেয়ার গ্রুপের আউটার ম্যানেজার সাজ্জাদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার সকালে আমাদের স্টলের নির্মাণ কাজ শেষ করছি। এখনও পণ্য সাজানো হয়নি। রাস্তা ভালো না, তাই পণ্য আনতে দেরি হচ্ছে। আমরাতো কাজ শেষ করছি, কিন্তু এখনও অনেক স্টল নির্মাণ হয়নি। দেখে মনে হচ্ছে আরও দুই-তিন দিন লেগে যাবে।
ঢাকা থেকে মেলায় কাজ করতে আসা কাঠমিস্ত্রী নূর আলম বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত টানা কাজ করছি। তারপরও শেষ করতে পারছি না। আমরা ১২ জন ২৬ ডিসেম্বর থেকে টানা কাজ করে ৩টি স্টল নির্মাণ করেছি। যেগুলো নির্মাণ করেছি সেগুলোর এখনও রঙ করা শেষ হয়নি। রঙ করা হলেও পণ্য সাজায়নি। যেটা তৈরি করছি সেটা আরও দুই দিন লাগবে, তারপর রঙ, সাজসজ্জা সব মিলিয়ে ৪ থেকে ৫ দিনের আগে এ স্টল চালু করতে পারবে না।
এক্সিবিশন সেন্টারের অন্যান্য স্টলে ও প্যাভিলিয়নে কাজ করা কাঠমিস্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্টলগুলো বরাদ্দ দিতে দেরি করেছে। তারপর ডিজাইন সিলেক্ট করতে সময় লেগেছে। এরপর শহর থেকে এত দূরে হওয়ায় কাজের লোকেরও সঙ্কট আছে। এছাড়া যাতায়াত, পরিবহন ও খাদ্যের সমস্যা রয়েছে। কাজ করতে গিয়ে কোনো পণ্যের সমস্যা হলে, কাজ থামিয়ে দিতে হচ্ছে। পণ্য আসলে তারপর কাজ করতে হচ্ছে। এভাবে দুই দিনের কাজ করতে তিন দিন লেগে যাচ্ছে।
এক্সিবিশন সেন্টারের সামনের ফাঁকা জায়গায় মেগা প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন সোহেল মিয়া ও জব্বার। তারা বলেন, ১ জানুয়ারি কাজ কোনো ভাবেই শেষ করতে পারব না। কারণ ইট-সিমেন্ট জোড়া না লাগলে তার ওপর নতুন করে কাজ করা যায় না। জোড়া লাগতে কিছুটা সময় নেয়। তাই আমরা অনেক চেষ্টা করলেও চারদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব না।
ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। প্রতিবারই মেলা উদ্বোধনের পরও কিছু কাজ বাকি থাকে। তবে এবার একটু বেশি রয়েছে। কারণ আমরা প্রথমে যেভাবে স্টল নির্মাণ করে দিয়েছিলাম সেটা ভেঙে ফেলে স্টল মালিকরা নতুন করে আবার নির্মাণ করছে। এজন্য একটু সময় বেশি লাগছে। নতুন জায়গা, চ্যালেঞ্জতো একটু থাকবেই। তারপরও আমরা আশা করছি দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন। এবার মেলায় প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা এন্ট্রি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাস সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এ সার্ভিস চলবে।
জানা গেছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় ১১টি দেশের ২২৭ টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি খাবারের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে মুজিব বর্ষ, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা বিনির্মাণের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৫৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ২টি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ বিবেচনায় নিয়ে মেলা চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত বারের মতো এবারও মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এছাড়া বীরমুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রি। এক্সিবিশন সেন্টারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২২০টি সিসি বসানো হয়েছে এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মেলা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর ছুটির দিন খোলা থাকবে রাত ১০ টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড