ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পাহাড়-পর্বত আর বরফের দেশে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
পাহাড়-পর্বত আর বরফের দেশে বরফের দেশে

সত্যি অবাক করার মতো একটা অঞ্চল জাপানের নাগানো। যত দূর চোখ যায় কেবল পাহাড় আর পর্বত। শীতকালে পাহাড়-পর্বত একাকার হয়ে সাদা বরফে রূপ নেয়। মনে হয় এ যেন সাদা পাহাড়ের দেশ।

নাগানো অঞ্চলে রয়েছে ডজন খানেক পর্বতমালা। পুরো নাগানোই যেন পাহাড়ে ঢাকা।

এ যাত্রায় উদ্দেশ্য বরফের দেশটাকে ঘুরে দেখা। প্রতিটা পর্বতের ভাঁজে-ভাঁজে বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে রকমারি স্কি পার্ক।

যে সব পার্কে শীতের সময় হাজারো মানুষ আসে বরফের মধ্যে স্নো বোটিং করতে। কেউ আসে স্নো স্কি খেলতে। বিশাল পর্বতের উঁচু ভাঁজ থেকে সাই করে নিচের দিকে পড়ছে স্কেটিং করতে আসা স্কি প্রেমীরা।

টেলিভিশনে বরফের মধ্যে এসব খেলা দেখেছি। কিন্তু এবার বাস্তবে দেখলাম, মনের ভেতরে ভীষণ আন‍ন্দ লাগছিলো। বাইরে হিম-হিম বাতাসে মাইনাস ১৩ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে শরীর যেন পুরোটাই বরফ হয়ে যাচ্ছে।

নিঃশ্বাসটাও যেন বরফের এক একটা খণ্ড। এ সময়টাতে জাপানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রফেশনাল স্কি খেলোয়াড়রাও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকেন।
 
টোকিও থেকে নাগানোর বিভিন্ন শহর ঘুরে চলে গেলাম চিনো সিটির স্কাই পার্কে। নাম কুরোমাইয়ামা স্কাই পার্ক। এ এক বিশাল পর্বতের ভাঁজে গড়ে তোলা হয়েছে। কিরিগামিনে পর্বতের ১২টি ভাঁজ কেটে তৈরি করা হয়েছে এটি।

বিশাল এক অঞ্চলজুড়ে তুষারের আবরণ হাজারো মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলছে। পাশে রয়েছে একাধিক রিসোর্ট। এ যেন বরফের রাজ্যে বিনোদনের আয়োজন।

পাহাড়-পর্বতের দেশেপাহাড়ের বুক চিড়ে আঁকাবাঁকা পথে টোকিও থেকে প্রায় ৩শ’ কিলোমিটার দূরে নাগানোর চিনো সিটির স্কাই পার্ক রিসোর্টে উঠলাম। যাত্রা পথে কখনও মাইলের পর মাইল বিশাল পাহাড়ের নিচ দিয়ে চলে গেছে হাইওয়ে রোড।

বিশাল-বিশাল এসব রাস্তা তৈরিতে কত বছরের কত অর্থ ব্যয় যে তারা করেছে তা ভাবতেও অবাক লাগে। জীবনে কখনও বরফ পড়া দেখিনি। সেখানে বরফে স্নো বোটিং বা স্কি খেলবো কীভাবে?

শরীরে গরম পোশাক থাকলেও পায়ে তো জাপানিদের মতো এতা শক্তি নেই। কী আর করা? অনেক চেষ্টা করেছি। কোনোটাই ঠিক মতো খেলতে পারিনি। তীব্র ঠান্ডায় মোবাইলটা বের করে ছবি তোলার মতো অবস্থা ছিলো না। তারপরও কষ্ট করে কিছু স্মৃতি সঙ্গে করে নিয়ে আসলাম।    

নাগানো কেন হলো জাপানের মূলদ্বীপ। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, নাগানো অঞ্চল শিনানো প্রদেশ নামে পরিচিত। সেগোকু যুগে শিনানো প্রদেশকে একাধিকবার বিভিন্ন সামন্ত প্রভু ‍ও দূর্গ নগর রক্ষকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এ দূর্গ নগরগুলির মধ্যে ছিলো কোমোরো, ইনা ও উয়েদ।

১৮৭১ সালে পুনর্গঠনের সময় হান ব্যবস্থার লোপ এবং প্রশাসনিক অঞ্চল ব্যবস্থার প্রবর্তনের সময় শিনানো প্রদেশকে নাগানো ও চিকুমা প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়। ১৮৭৬ সালে আবার এই দুই অঞ্চলকে একত্র করে নাগানো প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে গঠন করা হয়।
 
পাহাড়-পর্বত, পার্বত্য হ্রদ অধ্যুষিত নাগানো প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভিন্ন মনোরম প্রাকৃতিক স্থানকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম উচ্চতম গিজার বা প্রাকৃতিক উষ্ণ ফোয়ারা সুওয়ায় অবস্থিত। এখানে আছে কিরিগামিনে পর্বত একটি তুষারাবৃত সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।

অঞ্চলটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। সুওয়া তাইশা জাপানের প্রাচীনতম তীর্থস্থানগুলির অন্যতম।

মাৎসুমোতো দুর্গ জাপানের অন্যতম জাতীয় সম্পদ। রয়েছে জিগোকুদানি বানর উদ্যান, জাপানি ম্যাকাক জাতীয় বানরদের প্রায়ই এখানে স্নানরত দেখা যায়।

নাগানোজুড়ে রয়েছে হরিণের বিশাল বিচরণ ক্ষেত্র। নাগানো নগরে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ শীতকালীন অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারাবছরই এ এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।

লেখক: মাহবুব মাসুম, প্রবাসী সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।