ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

বিপন্ন গাছপালা বাঁচাতে ত্রিপুরায় ‘পবিত্র বন’

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
বিপন্ন গাছপালা বাঁচাতে ত্রিপুরায় ‘পবিত্র বন’ পূজার মাধ্যমে বনের সীমানা এঁকে দিয়েছেন পুরোহিত। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা: যথেচ্ছভাবে বন ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, তেমনি বিপন্ন হয়ে পড়ছে ফল ও তৃণভোজী প্রাণীকুলের জীবনও। একদিকে তারা খাবার পাচ্ছে না, আবার নষ্ট হচ্ছে তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ধর্মীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ‘স্যাক্রেড ফরেস্ট’ বা ‘পবিত্র বন’ গড়ার কাজ চলছে ত্রিপুরায়।

ভারত সরকারের ফরেস্ট রিসার্চ ফর লাইভলিহুড এক্সটেনশনের ত্রিপুরা শাখা, ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ফর সাস্টেইনেবল অ্যাডভান্সমেন্ট (দিশা) ও খুম্পই বুরিবদল নামে একটি এনজিও মিলে পশ্চিম জেলার শিপাহীপাড়া গ্রামে তৈরি করছে একটি  ‘স্যাক্রেড ফরেস্ট’।

ফরেস্ট রিসার্চ ফর লাইভলিহুড এক্সটেনশনের ত্রিপুরা শাখার পরিচালক পবন কুমার কৌশিক বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের অনেক এলাকাতেই ‘স্যাক্রেড ফরেস্ট’ রয়েছে।

আশপাশের এলাকার জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এ বন গড়ে তোলা হয়। এতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালাসহ পশুপাখি সংরক্ষিত থাকে।

তিনি বলেন, ত্রিপুরার জনজাতিদের বিশ্বাস- কেরপূজার এলাকা থেকে কোনো কিছু নিতে হয় না। এ ধর্মীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে ‘পবিত্র বন’ গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে প্রথমে পুরোহিত কেরপূজা করে বনের সীমানা এঁকে দিয়েছেন। এরপর সে জায়গায় আগর, মেহগনি, বিভিন্ন ধরনের ফলজ ও বিপন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে। এসব গাছে ফল ও বীজ ধরলে পাখি, বাতাস ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। এ বন নানা প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্মের সংরক্ষক হবে ও তা পাশের এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করবে।

আড়াই বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘পবিত্র বন’।  ছবি: বাংলানিউজ

দিশা’র সভাপতি দেবাশিষ চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে এ বন থেকে মানুষ কোনো কিছু নেবে না। ফলে, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সংরক্ষিত থাকবে, যা একদিন জাতীয় সম্পদে পরিণত হবে।

তিনি বলেন, বনে এমনভাবে গাছ লাগানো হচ্ছে, যাতে বেড়ে উঠতে কোনো সমস্যা না হয়। যেমন- বড় গাছের পাশে ছোট গুল্ম, যে গাছের ডালপালা বেশি, তার পাশে সরু ও লম্বা হয়ে ওঠে- এমন গাছ লাগানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে এ বন গভীর জঙ্গলে পরিণত হবে ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বীজ ভাণ্ডার হয়ে উঠবে।

খুম্পই বুরিবদল এনজিওর সম্পাদিকা দীপালি দেববর্মা বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে এ ‘পবিত্র বন’ গড়ে তোলা হচ্ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যেও ধীরে ধীরে সচেতনতা গড়ে উঠছে। তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন এ ধরনের বন সংরক্ষণে, স্বেচ্ছায় সহায়তাও করছেন অনেকে। এ কার্যক্রম সফল হলে রাজ্যের অন্য জায়গাতেও এমন ‘পবিত্র বন’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

উত্তরপূর্ব ভারতের মেঘালয়ে আগে থেকেই ‘স্যাক্রেড ফরেস্ট’ রয়েছে। সেখান থেকে গাছের একটা পাতাও কেউ তোলেন না। গাছের আয়ু ফুরিয়ে গেলে সেখানেই পচে সার হয়। এ বন দেখতে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ যান। তবে, নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না। কারণ, বনটি এত ঘন যে, ভেতরে গেল পথ হারিয়ে ফেলার শঙ্কা থাকে। এজন্য, এটিকে ‘মায়া বন’ বলেও ডাকেন কেউ কেউ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
এসসিএন/এক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।