ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ড্যান্সিং বাসে কক্সবাজার টু টেকনাফ

আসিফ আজিজ ও সাব্বির আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
ড্যান্সিং বাসে কক্সবাজার টু টেকনাফ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

টেকনাফ জাহাজ ঘাট থেকে: টেকনাফের কেয়ারি ঘাটে পৌঁছে স্পেশাল সার্ভিসের ট্যুরিস্ট বাসটি থেমে থাকলো বেশ কিছুক্ষণ। থেমে থাকার হেতু জানতে চাইলে ট্যুর অপারেটর জানালেন একজন যাত্রী নামতে পারছেন না, পায়ে ব্যথা।

তার সিট একেবারে পেছনে। অনেকদিন পর বেশ বেশি মাত্রায় নাচানাচিতেই এ হাল! অবাক হওয়ার কিছু নেই, দেশের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ সেন্টমার্টিনে যেতে এ বাসে চড়তেই হবে। আর একবার চড়ে বসলে না নেচে উপায় নেই।
 
কক্সবাজার থেকে প্রায় ৮৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা এতোই বেহাল যে, যাত্রীদের মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো ‘এটা তো দেখি ড্যান্সিং বাস!’
 
কথা হচ্ছিলো মাদারীপুর থেকে সেন্টমার্টিন ঘুরতে আসা নাসরিন বেগম প্রসঙ্গে। যখন দুই ঘণ্টার জার্নি শেষে টেকনাফ পৌঁছালেন তখন তার 'গিরায় গিরায়' ব্যথা। উঠতে পারছিলেন না। বিশেষ করে বাসের মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত যারা বসেছিলেন তাদের সবার অবস্থাই নাসরিন বেগমের মতো। সবে ধন নীল মণির মতো, যে যার সামনের সিট আঁকড়ে ধরে রাখাই যেন হয়ে উঠেছিলো প্রধান কাজ। কারও মাথায় এ রুটের সৌন্দর্য উপভোগ কিংবা ভোরে ওঠার ধকল সামলে একটু ঘুমের কথা মনেও এলো না। শখের এবং প্রয়োজনের মোবাইলের কথাও মনে ছিলো না কারও।
পেছনের আরেক যাত্রী তো বলেই ফেললেন ‘চালক জানেন না বাসের পেছনে যে যাত্রী আছে’। অবশ্য চালকের দোষ দিয়ে লাভ কি, তাদের তো সময়মতো পৌঁছানো চাই। ভাঙাচোরা, এবড়ো-থেবড়ো রাস্তায় এর চেয়ে ভালোভাবে তিনি কীভাবে আনবেন!
 
স্থানীয়দের মতে মৌসুমে প্রতিদিন নাকি ৪-৫ হাজার পর্যটক যাতায়াত করেন এ পথে। বিদেশিদেরও যাতায়াত আছে এ স্পটটিতে। সম্ভাবনার পর্যটনের প্রধান শর্ত ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। অথচ বেহাল কক্সাবাজার-টেকনাফ সড়কের। সেখানে মেরিন ড্রাইভের স্বপ্ন!
 
পেছনের সিটে শামীম আধঘণ্টা বসে পরে আর বসতেই পারলেন না। সামনে কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে কোনোমতে পৌঁছুলেন।
বাস একেবারে পেছনের সিটের আরেকজন যাত্রী বললেন, ‘জেলখানা হয়তো এর চেয়ে ভালো। এতো কষ্ট নেই জেলে। হাঁটু ধরে গেছে সামনের সিটে। এরমধ্যে যখন ঝাক্কি আসে তখন শরীর ছিঁড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
 
বাংলানিউজের কক্সাবজার পর্যটন টিম যখন বুধবার (৬ এপ্রিল) ভোরে রওয়ানা দিয়েছে সেন্টমার্টিনের পথে তখন মুখোমুখি এ পরিস্থিতির।
 
যারা সুদূর থেকে অপ্সরী সেন্টমার্টিন পাড়ে ছুটছেন কিন্তু টেকনাফ জাহাজ ঘাটে এসে হোঁচট তাদের। তিক্ততা আছে আরও। সড়কের পাশাপাশি ঠিক নেই বাসের আসন বিন্যাসও। অতিরিক্ত সিট বসিয়ে বাস মালিকরা বেশি মুনাফা নিচ্ছেন। পর্যটকরা হাঁটু ঢুকছে না ভেতরের সিটে। এর মধ্যে যখন জোরে ঝাঁকি দেয় তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
পর্যটকবাহী বাসের সহকারী আলাউদ্দিন ১৫ বছর থেকে এই সড়কে সেবা দিচ্ছেন। কয়েক বছরের মধ্যে কাজ হতে দেখেননি আলাউদ্দিন।
 
এই সড়কে সবচেয়ে দুর্ভোগময় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে টেকনাফের থ্যাংকালিতে। এখানে বাসের যাত্রীদের চিৎকারে বোঝা গেছে রাস্তায় কত শত গর্ত।
 
বাসের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি পেয়ে যখন টেকনাফে পৌঁছানো গেলো তখন কথা হয় কক্সবাজার জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আর পি বড়ুয়ার সঙ্গে।
 
এ সড়কের বেহাল দশার চিত্র অস্বীকার করেননি তিনি। বলেন, ‘উখিয়া থ্যাংখালী এলাকায় প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়ক আসলেই খুব খারাপ। এজন্য কাজ চলছে। ’

আগামী পাঁচ সাত দিনের মধ্যে ঠিক হওয়ার আশাবাদ তার। আদতে এই সময়ে কতটুকু ঠিক হবে সেটাই দেখার বিষয়।




বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এসএ/এএ

** ‘পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ