ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

স্থানীয়রা যেখানে রেড ইন্ডিয়ান!

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
স্থানীয়রা যেখানে রেড ইন্ডিয়ান! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার: ইট পাথরের অট্টালিকা করলেই পর্যটনখাত সমৃদ্ধ হয় না। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে দরকার হাসিমুখের সুন্দর ও মার্জিত ব্যবহার।

বিশ্ব পর্যটনের ইতিহাস বলে, স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ছাড়া পর্যটনের বিকাশ ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। অথচ সমুদ্র নগরী কক্সবাজারের চিত্র ভিন্ন। এখানকার পর্যটনের সঙ্গে স্থানীয়দের সংশ্লিষ্টতা তেমন নেই বললেই চলে। কাজেই কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে হলে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মেগা বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে মোটেল শৈবালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছিলেন বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

এর একদিন পরেই চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি মেগা বিচ কার্নিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পর্যটন সচিব খোরেশদ আলম চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেওয়ার জন্য হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান।

তারপর চলে গেছে ৩ মাস ১০ দিন। কিন্তু পাল্টায়নি পরিস্থিতি। বরং সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের মতো বেকায়দায় কক্সবাজারের স্থানীয়রা। আধুনিক আমেরিকার বিনির্মতা স্প্যানিশরা। কিন্তু সেই সভ্যতা নির্মাণে উপেক্ষিত ছিলেন আমেরিকান রেড ইন্ডিয়ানরা। একইভাবে পর্যটনে কক্সবাজার এগিয়ে গেলেও রেড ইন্ডিয়ানদের মতো অবহেলিত থেকে যাচ্ছেন স্থানীয়রা।

এসব অভিযোগ নিয়ে বিগত সময়ে কক্সবাজারের যুব সমাজ দফায় দফায় স্মারকলিপি পেশ ও মানববন্ধন করলেও ঘরে ওঠেনি লাভের ফসল।
 
কক্সবাজারে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ রয়েছে। যার মধ্যে ১০টির বেশি তারকা মানের। এতে প্রায় অর্ধ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হলেও জেলা থেকে সুযোগ পেয়েছে পাঁচ শ’র কিছু বেশি লোক।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের হিন্দু পাড়ার মৃত রনজিত চন্দ্র ধরের ছেলে প্রকাশ চন্দ্র ধর বাংলানিউজকে জানান, তিনি ২০১২ সালে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে দুই ডজন আবাসিক হোটেলে রিসিপশনিস্ট পদে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি হয়নি।

তিনি আরো জানান, তার সাথে পরীক্ষা দেওয়া অনেক কম শিক্ষিত যুবকের চাকরি হয়েছে এবং তারা সবার বাড়ি অন্য জেলায়।

কক্সবাজার হোটেল ম্যানেজার ইউনিয়নের সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, পর্যটন শিল্পে কক্সবাজারের ৫ শতাংশ লোকেরও অংশগ্রহণ নেই। আর স্থানীয়রা অংশীদার না হওয়ায় পদে পদে হয়রানি হচ্ছে পর্যটকরা।

যে হারে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হচ্ছে, সে হারে জেলার জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে দিনে দিনে পর্যটনের উপর বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে।

কক্সবাজার যুব ইউনিয়নের সভাপতি শংকর বড়ুয়া রুমি বাংলানিউজকে জানান, কয়েক বছর আগে থেকেই তারা হোটেল-মোটেলে শতকরা ৭৫ শতাংশ স্থানীয় লোকজন নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সেই দাবি এখনো উপেক্ষিত রয়ে গেছে।

তবে ভিন্ন মত পোষণ করেন হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, বর্তমানে আবাসিক হোটেলে প্রায় হাজারখানেক স্থানীয় যুবক কর্মরত রয়েছে। পাশাপাশি ৩০ শতাংশ স্থানীয় শিক্ষিত যুবকদের চাকরি দিতে তাদের  পক্ষ থেকে প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় যুবকদের ভাষাজ্ঞানও সমৃদ্ধ না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই চাকরি হচ্ছে না তাদের।

এ নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) কক্সবাজার জেলা শাখার আহ্বায়ক অনিল দত্তের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, ভাষার বৈষম্যের কারণে স্থানীয় শিক্ষিত যুবকরা পিছিয়ে রয়েছে এমনটা হতে পারে। কিন্তু হোটেল-মোটেল মালিকরা চাইলেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে স্থানীয়দের নিয়োগ দিতে পারে।

কিন্তু হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান কোম্পানি বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয় যুবকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ রয়েছে। সমস্যা হলো তারা প্রশিক্ষিত নয়, তারা এখনো পর্যটনের সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারেনি। এখানে আয়ের অনেক উৎস থাকায় স্থানীয়রা পর্যটন খাতে চাকরি করতেও চায় না। অথচ উন্নতবিশ্বের মতো এখনেও কক্সবাজারের শিক্ষার্থীরা এই সেক্টরে পার্টটাইম চাকরি করতে পারতো।

এদিকে কক্সবাজার পর্যটন করপোরেশনের মোটেল শৈবালের ম্যানেজার শ্রীজান বিকাশ বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়াতে পর্যটন করপোরেশন অনেকগুলো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। শিগগিরি স্থানীয়দের এই শিল্পে কক্সবাজারের স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়বে।

আশার কথা শোনালেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। কক্সবাজার জেলার যুব সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ শিল্পে সংশ্লিষ্ট করতে শহরের মোটেল প্রবালের জমিতে নির্মিত হবে পর্যটন ইনস্টিটিউট। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল মালিকদের সাথে প্রশাসনের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
এটি

** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ