কক্সবাজার থেকে: কক্সবাজার যাওয়ার পর সাগরের বুকে ঝাঁপ দেননি এমন একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে অসাবধানবশত ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
সাগরে নামার আগে জোয়ার-ভাটা জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মেনে চলা উচিত ফ্ল্যাগের (পতাকার) নির্দেশনা। মনে রাখতে হবে, সাগরপাড়ে হলুদ পতাকা টাঙানো থাকলেই কেবল সাগরে নামার উপযোগী। যদি লাল ফ্ল্যাগ থাকে তাহলে সাগরে নামতে মানা। এমনিভাবে যদি সাগরপাড়ে কমলা রঙের বেলুন ওড়ানো থাকে তাহলে বুঝতে হবে, ভাসমান কোনো কিছু নিয়ে নামা যাবে না। কারণ, এসময়ে ভাসমান বস্তুটি (টায়ার বা অন্য কিছু) সাগর গ্রাস করে নিতে পারে।
সাগরে কোনো অবস্থাতেই কোমর পানির নিচে নামা ঠিক হবে না। কারণ, এরচেয়ে বেশি পানিতে নামলে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। তাই কোমর পানির নিচে নামতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বরষাকালে যখন সমুদ্রের অনেক দূর পর্যন্ত সাদা ঢেউ দেখা যায় তখন বুঝতে হবে সাগর উত্তাল ও খারাপ। এর মধ্যে সাগরে নামা যাবে না।
কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললেই সাগরের জলে গোসল করা বা খেলা করা নিরাপদ। নিয়ম না মেনে উত্তাল সাগরে নামা মানেই নিশ্চিত ঝুঁকির মুখে পড়া। এ ঝুঁকি থেকে মৃত্যুর মুখে পড়েন অনেক পর্যটক। বিশেষ করে কক্সবাজারের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী বিচের আশেপাশে বেশকয়েকটি চ্যানেল রয়েছে যেখানে ঢেউ নামার সঙ্গে সঙ্গে খাদে পরিণত হয়। অনেকেই হয়তো গোসল করতে করতে একটু দূরে চলে যান। তাদের কাছে ভাটার সময় তখনও অজানা। এমন মুহূর্তে ভাটার টানে ওই চ্যানেল দিয়ে সাগরের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এটিকে গুপ্তখালও বলে। সাগরের সবচাইতে বিপদজনক এ খাল।
এমনকি সাঁতার জানা কেউ এ খাদে পড়লেও আবার তীরে ওঠা সহজ হবে না। তবে এখানেও রয়েছে কিছু করণীয়। যখন স্রোত সাগরে টেনে নিয়ে যাবে তখন আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত হয়ে ভাসতে হবে। এসময় হাত দিয়ে লাইফগার্ডদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। এতে নিজেকে রক্ষা করা যাবে।
কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে সি-সেইফ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার সিনিয়র লাইফগার্ড জয়নাল আবেদিন ভুট্টো বাংলানিউজকে বলেন, সাগরে নামা সহজ কাজ তবে জানা থাকতে হবে প্রয়োজনীয় তথ্য। আমাদের নির্দেশনামূলক পতাকা দেখে নামলেই নিরাপদে সাগরে গোসল করা যাবে।
সিনিয়র এ লাইফ গার্ড বলেন, সাগরের সবচাইতে বিপদজনক হচ্ছে গুপ্তখাল, যেটা কারোরই জানা নেই। যখন যে বিপদ ঘটেছে, এ গুপ্তখালেই ঘটেছে। তাছাড়া পর্যটকরা অনেক সময় নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গিয়েও সাঁতার কাটতে কাটতে দূরে চলে যান। এজন্য যারা সাগরে নামেন তাদের আগে থেকেই নির্দেশনাগুলো ভালো করে যেনে নেওয়া উচিত।
সরকারিভাবে কিছু ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড থাকলে টুরিস্টদের জন্য আরও বেশি সর্তকতা দেখানো যেতো। এজন্য যেসব পয়েন্টে ট্যুরিস্ট নেমে থাকেন সেসব জায়গায় কয়েকটি ডিসপ্লে বোর্ড দরকার বলে মনে করেন সার্ফাররা।
মনে রাখতে হবে, যেখানে গভীর পানি, সেখানে ঢেউ কম। তাই ঢেউ কম দেখে অনেকেই ভুলবশত নেমে যান গভীর পানিতে, এটিও সাগরে নামার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
বিচে লাইফগার্ডের আরেক সদস্য সার্ফার জহির বলেন, আমাদের প্রতি মুহূর্তে অস্থায়ী উঁচু টাওয়ার থেকে দৃষ্টি রাখতে হয়, যেনো কেউ গুপ্তখালে ঢুকে না যায়।
সমুদ্র পাড়ে বিচ ম্যানেজমেন্ট নামে একটি কমিটি রয়েছে। এ সংগঠন বিচভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয় দিয়ে চলে। সংগঠনের সদস্য লাইফগার্ড মিলন পাল বলেন, ট্যুরিস্টরা আমাদের কাছে এসে তথ্য চাইলে আমরা দিয়ে থাকি। আমাদের এখানে ফেরতযোগ্য জামানত দিয়ে লাইফ জ্যাকেট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ লাইফ জ্যাকেট দিয়ে নিরাপদে সাগরে সাঁতার কাটা যাবে।
বেসরকারিভাবে তিন সংস্থা কক্সবাজারের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্টে ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তায় কাজ করলেও নেই সরকারি কোনো বিশেষ ব্যবস্থা। বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, সি-সেফ লাইফগার্ড, ইয়াছির লাইফগার্ড ও রবি লাইফগার্ড- এ সংস্থাগুলো আবহাওয়া অফিস থেকে একবারে দু’তিন মাসের বুলেটিন নিয়ে সাগরে বসে থাকেন।
সরকারিভাবে শুধু জেলা পরিষদের কার্যালয় থেকে একটি নোটিশ বোর্ড দেওয়া রয়েছে। এ নোটিশ বোর্ডের নির্দেশনায় লেখা রয়েছে, সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিন।
এখানে জোয়ার ও ভাটার সময় প্রতিদিন সকাল ১০টায় লিখে দেওয়া হয়। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশরা মাইক দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর বলছেন, সাগরে নামার আগে জোয়ার-ভাটার তথ্য জেনে নিন। এর বাইরে সরকারিভাবে ট্যুরিস্টদের কোনো তথ্য দেওয়ার সুব্যবস্থা নেই।
সাগরে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় দু’টি জোয়ার এবং দু’টি ভাটা হয়। এক একটির স্থায়িত্ব ছয় ঘণ্টার মতো। তবে জোয়ার-ভাটার সময় পরিবর্তনশীল। পূর্ণ জোয়ারের পর পানি কিছুটা স্থির হয়ে ঘণ্টাখানেক থাকার পর ভাটা শুরু হয়। এ স্থির সময়ে সাগরে না নামাই ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
এসএম/জেডএস/এসএনএস
** শাহেন শাহ-হিমপরির ভালোবাসার নিদর্শন দরিয়ানগর
** মেঘ এলেই মাটি লবণ খেত
** কি করে হয় লবণ চাষ
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-সুন্দরবন ঘিরে নানা পরিকল্পনা
** প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ‘জেট স্কি’
** লাবনী-সুগন্ধা নয়, পুরো সৈকতে উপযোগী পরিবেশ দরকার
** বয়া ছাড়াই জাহাজ চলছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে
** প্রবাল পাথরের ভাঁজে ভাঁজে মাছের খেলা
** পঁচা মাছে নষ্ট হচ্ছে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য
** দূর থেকে ভাসমান, কাছে গেলেই দৃশ্যমান ছেঁড়া দ্বীপ
** ছেঁড়া দ্বীপে যেতে অবশ্য করণীয়|
** পর্যটন নগরীতে বাংলা ভাষার বেহাল দশা