ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পর্যটন নগরীতেই নেই শিশু পার্ক, প্রকল্প ঘুরছেই

তুষার তুহিন, স্টাফ করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
পর্যটন নগরীতেই নেই শিশু পার্ক, প্রকল্প ঘুরছেই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সকবাজার: পর্যটক টানতে যেখানে যাবতীয় সবরকমের বিনোদন কেন্দ্র থাকার কথা, সেখানে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে শিশু পার্কই নেই। বছরের পর বছর ধরে ঘুরছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পাড়ের শহরটিতে শিশু পার্কের প্রকল্প।

ঘুরছে আশ্বাস আর ঘোষণায়। আর শিশু পার্ক না থাকার মতো ‘বড় ব্যর্থতার’ খেসারতও দিতে হচ্ছে কক্সবাজারকে। বিশ্বের অন্য সৈকত নগরীগুলোর সঙ্গে দৌঁড়ে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রকে।

 

স্থানীয় লোকজন, শিশু সংগঠক, বেসরকারি উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করলে এই ‘ব্যর্থতা’র ক্ষোভই উগরে দিলেন সবাই।

সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় কক্সবাজারে শিশু পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। কখনও জমির অভাব, কখনও অর্থাভাবে পথ হারিয়েছে শিশু পার্ক নির্মাণ প্রকল্প। কখনওবা লাল ফিতায় বন্দী ফাইলেই থমকে গেছে শিশু পার্ক নির্মাণ।

জানা যায়, ২০০০ সালে কক্সবাজার পৌরসভাকে সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিস পয়েন্টে শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। অনুমতি পাওয়ার পর শিশু পার্ক নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ডও টানানো হয়। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয় শিশুদের জন্য ৮টি রাইডস।

কিন্তু জেলা প্রশাসনের লিখিত অনুমোদন না পাওয়ায় ওই শিশু পার্কটি পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শিশু পার্ক তো হয়-ই নি, উল্টো জমিটিও বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে এখন ঝুলছে বিএম শাহীন কলেজের সাইনবোর্ড।

এরপর ২০১২ সালে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে কয়েকটি রাইডস নিয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ শিশুপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বরাদ্দ না পাওয়ায় সেই পার্কটিও স্থায়ী হয়নি। গুটিয়ে যায় পরের বছরই। বর্তমানে ওই জায়গা ক্যারাভ্যানের ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
 
প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এরপর আর সে কাজ এগোয়নি।

পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে পার্ক নির্মাণের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে কক্সবাজার পৌরসভা। কিন্তু এ বিষয়ে পরবর্তীতে আর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শহরে শিশু পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দেন  স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক। সেই ঘোষণারও ৮ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেই ঘোষণার দৃশ্যমান কোনো কাজ এখনও হয়নি।

‘এভাবে আশ্বাস আর ঘোষণার মধ্যেই শিশু পার্ক নির্মাণ প্রকল্পটি ঘুরছে। এখন সেই ফাইল কোথায় আছে তারও হদিস নেই,’ বলেন জেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা।

স্থানীয় জনগণ বলছেন, পর্যটন নগরীতে প্রতিদিনই আনাগোনা বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। কিন্তু শিশু-কিশোরদের জন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় বেশ হতাশ হচ্ছেন তারা। যার ফলে পরবর্তী সময়ে আসার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ কাজ করে তাদের মনে।

স্থানীয়রা জানান, শিশু পার্ক নির্মাণের দাবিতে স্কুলের শিশু ও অভিভাবকরা নানা দাবি জানিয়ে আসছেন। এমনকি রাস্তায় নেমে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনও করেছেন, স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে দুই ডজনেরও অধিক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

খেলাঘর আসরের কক্সবাজার জেলা শাখার সদস্য সচিব রিদুয়ান আলী বাংলানিউজকে বলেন, শিশু পার্ক নির্মাণের দাবিতে কয়েক দফায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষা‍ৎ করা হয়েছে। কিন্তু নানা সমস্যার কথা বলে বারবার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে প্রশাসন।

জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আহসানুল হক বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে শিশুপার্ক না থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

‘প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক আসেন সমুদ্র শহরে। সঙ্গে শিশু-কিশোররাও থাকে। অথচ এখানকার স্থানীয় শিশুদের পাশাপাশি বেড়াতে আসা শিশুদের জন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই,’ হতাশা ব্যক্ত করে বলেন পর্যটন মোটেল শৈবালের ম্যানেজার স্রীজান বিকাশ বড়ুয়া।

তবে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শিশু পার্কের জন্য জমি বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। ‘তাই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি বুঝিয়ে দিলেই শিশু পার্ক নির্মাণ শেষ হবে। ’

তবে এ কথা মানতে নারাজ বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার শহর কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কক্সবাজার শহরে খাস জমির অভাব নেই। নামে-বেনামে এখানকার জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রভাবশালীদের। অথচ শিশু পার্কের জমি পাচ্ছে না প্রশাসন। এটি হাস্যকর।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সর্বশেষ প্রকল্পটির জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। জমি পেলেই পার্কটি গড়ে তোলা হবে।

তবে এতে সময় কতো লাগবে এবং কবে নাগাদ এর কাজ শুরু করা যাবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৬
এমএ/এইচএ/

** স্থানীয়রা যেখানে রেড ইন্ডিয়ান!
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ