পারাবত ট্রেন থেকে: ঠাণ্ডা কাটলেট আর চিকেন ফ্রাইয়ে দাঁত বসানো দায়। ক্যারামের গুঁড়াঢাকা (বিস্কিটের গুঁড়া দিয়ে তৈরি) চিকেন যেনো ছোটবেলায় খাওয়া সেই ‘চিট খাবার’।
এই হচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেনের ক্যান্টিনে মেলা প্রধান খাবারের অবস্থা। সকাল-বিকেল-রাত যখনই চলুক, মেন্যুতে আসে না কোনো পরিবর্তন। আর মেন্যুতে পরিবর্তন এনে লাভই বা কী! ট্রেনে তো কোনো চুলা নেই। দেশের অন্যতম অভিজাত জেলা সিলেটে নিয়মিত চলাচল করা তিনটি ট্রেনের কোনোটিতেই নেই চুলার ব্যবস্থা। গরম খাবার তৈরি হবে কীভাবে? অথচ এই রুটে প্রতিদিন চলাচল করেন হাজার হাজার যাত্রী। পর্যটকদের ভিড়ও এ রুটে নিয়মিত বাড়ছে।
পারাবত এক্সপ্রেসের পরিচালক নিজাম উদ্দীন আহমেদ নোয়াখালীর মানুষ। চাকরি রয়েছে আর মাস ছয়েক। তিনি বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, এই ট্রেনের কথা বলে লাভ নেই। পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনেই চুলার ব্যবস্থা নেই। লোকজন খাবার খাবেন কেন? তারা তো গরম, ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবারই খেতে চাইবেন।
গল্পচ্ছলে বলছিলেন, সেই ১৯৭৮ সাল থেকে চাকরি করছি। কিন্তু রেলের খাবারের মান উন্নত হলো না। সবসময় একই রকম। খাবারে কোনো বৈচিত্র্যও নেই। তবে আগের চেয়ে এখন একটু উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয়।
এটাই উন্নতি!- বললে একটু মুচকি হাসলেন।
পারাবতের এ ক্যান্টিন গত তিন বছর ধরে পরিচালনা করছে ঢাকার মেসার্স ওবায়দুল হক অ্যান্ড সন্স ক্যাটার্স। টেন্ডারের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ভালো খাবার যারা পরিবেশনে সক্ষম, তাদেরই দেওয়া হয় ক্যান্টিন। অথচ সাত সকালে ট্রেনের অন্য ক্ষুধার্ত যাত্রীদের মতো বাংলানিউজ টিমের পেটে যে খাবার পড়লো, তাতে ভালোর সংজ্ঞা নতুন করে দিতে হবে!
ক্যাটার্সের মালিক ওবায়দুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছর তিন লাখ টাকার বেশি সরকারকে দিতে হয়। এরপর লাভ। তবে চুলা না থাকায় আমরা গরম খাবার খাওয়াতে পারি না। বেশিরভাগ খাবার তৈরি করতে হয় ঢাকা থেকে। আর গরম করার জন্য ওভেন থাকলেও রেলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় সমস্যা থাকায় সেটাও সম্ভব হয় না সবসময়।
অনেকবার চুলার জন্য আবেদন করেও পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের ট্রেনে চুলা আছে। কিন্তু আমাদের দিচ্ছে না। একবার আগুন লাগার পর থেকেই এটা বন্ধ। উত্তরাঞ্চলে অবৈধভাবে চলছে। অথচ যাত্রীদের স্বার্থে ও রেলসেবা বাড়াতে সরকার চুলা দিতেই পারে।
খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললে, তিনি চুলা দিলে ভালো খাবার খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
দুই-তিন বগির ভিড় ঠেলে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখা গেলো ভিড়-ভাট্টা নেহাৎ কম নয়। তার চেয়ে চেঁচামেচি বেশি। কারণ জিজ্ঞাসা করলে ম্যানেজার নুর উল্লাহ দুলাল কানে মুখ লাগিয়ে বললেন, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পর আজমপুর পার হোক, তারপর বলি। এখন বললে এই স্টেশন পার হতে পারবো না।
ম্যানেজার দুলাল জানালেন, তারা ১২ জনের মতো কাজ করেন। ক্যাটারদের বেতন পাঁচ হাজার টাকা। কাপ-পিরিচ ভাঙলে কেটে নেওয়া হয় টাকা।
তবে খাবার পরিবেশন করা ক্যাটার আবুল হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভাই আমাদের বেতন মাস শেষে ১২ থেকে ১৫শ’র বেশি থাকে না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাপ পিরিচ ভাঙে। টিপসের ওপরেই চলি।
ক্যান্টিনে টাঙানো মেন্যুতে হরেক লোভনীয় পদ থাকলেও চিকেন ফ্রাই (৪০ টাকা), কাটলেট (২৫ টাকা), বাটার বন (১৫ টাকা), বার্গার (৫০ টাকা) আর আট টাকার চা ছাড়া অন্যকিছু কমই পাওয়া যায়। আবার সব খাবারের সঙ্গে লেখা- গরম ও উন্নতমানের!
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
এএ/জেডএস/এএসআর/এসএনএস