শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে: পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কাহিনীটা খুবই চমকপ্রদ। ছোট বেলায় অনেক সিনেমা (মুভি) দেখতেন।
কিন্তু তার বাবা চেয়েছিলেন ছেলে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে। শুধু পুলিশ বাহিনীতে যোগই দেননি, পদে পদে সক্ষমতার ছাপ রেখে বাংলাদেশের চায়ের নগরী খ্যাত শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে আসীন তিনি।
কোন সিনেমা বা মুভি দেখে তিনি এমন পণ করেছিলেন? আর প্রিয় নায়কই বা কে? সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুচকি হাসি দিয়ে এড়িয়ে গেলেন তিনি। প্রিয় নায়ক পুলিশের কোন পদে ছিলেন তার শেষ পরিণতি কি হয়েছিল? সে বিষয়েও এড়িয়ে গেলেন।
বললেন, দেখেন- পুলিশ বাহিনীতে থেকে জনগণের জন্য ভালো-মন্দ দুটাই করার সুযোগ রয়েছে। আমি ভালোটা করতে চাই। এতে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব।
কেউ আইনি সহায়তার জন্য এলে দুই মিনিটের মধ্যে আমার কক্ষে নিয়ে আসা হয়। গুরুত্ব বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক সময় আমি নিজেই স্পটে চলে যাই। যে কেউ সহায়তা চাইলে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যে ফোর্স পাঠানো হয় সেখানে।
শ্রীমঙ্গলে আপনার চ্যালেঞ্জ কী? উত্তরে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ কিছুই মনে করি না। আমার টার্গেট ছিল এখান থেকে মাদক ও ছিনতাই বিতাড়িত করা। অনেকটা সফল হয়েছি। এখানে রেল স্টেশন ও লেবু এবং আনারসের বাজার কেন্দ্রিক ছিনতাই-ডাকাতি হতো। আমি যোগদানের পর থেকে দুইশ’র মতো মামলা দিয়েছি, শতাধিক ডাকাত আটক করেছি। এখন ডাকাতি নেই বললেই চলে।
‘ইয়াবা সেবন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এই অঞ্চলের অন্য যেকোনো থানার চেয়ে শ্রীমঙ্গল থানার অবস্থা ভালো,’ বলেও দাবি করেন তিনি।
এই প্যটার্নের থানা ভবনগুলোতে সাধারণত খানিকটা ভেতরের দিকের কক্ষে অফিস করতে দেখা যায় ওসিদের। আর প্রথম কক্ষটিত ডিউটি অফিসারের ও অথবা ওয়ারলেস অপারেটরদের বসতে দেখা যায়। ওইসব থানার গেটে কনস্টেবলের পর ডিউটি অফিসারের মেজাজ মর্জির উপর নির্ভর করে ওসির কক্ষ পর্যন্ত মানুষের যাওয়া না যাওয়া। কিন্তু এই থানায় প্রথম লক্ষ্য করা গেলো- মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই প্রথমেই রয়েছে ওসির কক্ষ। আর দরজার সামনে কোনো কনস্টেবলকে দেখা গেলো না। নেই দরজার পর্দা কিংবা দরজা ভেড়ানো। মূল ফটক দিয়ে ভবনে প্রবেশ করতেই চোখাচোখি হয় ওসির সঙ্গে।
এসব বিষয় নিয়ে মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বললেন, আমার দরজা সবসময় সবার জন্য খোলা। দরজার সামনে কোনো সিপাহী থাকেন না। কাজ ছাড়া থানার বাইরে থাকি না।
পুলিশের এই কর্তা অনুরোধ জানান, মিডিয়া (সংবাদমাধ্যম) যেন পুলিশের ভালো কাজগুলোকে তুলে ধরে। তাতে ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। তবে সমালোচনাও থাকতে হবে, আর হতে হবে গঠনমূলক।
তার প্রিয় নায়কের অর্জন অজ্ঞাত থাকলেও তার অর্জন কিন্তু এক অর্থে দারুণ। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে (সুদানে) দায়িত্ব পালনে সাহসী ভূমিকার জন্য নেলসন ম্যান্ডেলা পদকে ভূসিত হয়েছেন।
দেশের বাইরে গিয়ে শুধু নিজেকে উজাড় করে ধরেছেন এমনটি কিন্তু নয়। দেশের মধ্যেও অনেক সাহসী ও সফল অভিযানের কারণে ২০১৫ সালে পেয়েছেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ পদক। একাধিকবার সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনসমূহের সঙ্গে রয়েছে তার ভালো যোগাযোগ। তার কক্ষের সম্মাননা ক্রেস্টের লাইন এর সাক্ষ্য বহন করছে। নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
পুলিশের এই কর্তা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আকাখাজনা গ্রামের ছেলে। ১৯৯৮ সালে পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে যোগদান করেন। ধাপে ধাপে সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে আজ ওসির চেয়ারে। সততার কারণে স্থানীয়দের পরম আত্মার আত্মীয় হিসেবে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
***ভোরের স্নিগ্ধ লাউয়াছড়া-১
**লাউয়াছড়ার বুক চিরে ট্রেন ভেঙে দিয়ে যায় নির্জনতা
**হ-য-ব-র-ল বগিতে ভোগান্তির পারাবত!
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
এসআই/আইএ