শ্রীমঙ্গল থেকে: মাথার ওপরে সুনীল আকাশ। চারদিকে উঁচু-নিচু টিলা আর সবুজের সমারোহ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এ লেক চারদিকে টিলাবেষ্টিত। মনোরম লেকে টলটলে পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, পাড় ঘেঁষে লাল শাপলা আর শালুকের উপস্থিতি এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। যেন সবাইকে একবার ঘুরে আসার নিমন্ত্রণ জানাচ্ছে স্বচ্ছ পানির এ লেক।
লেকের পাড় ধরে আস্তে-আস্তে হেঁটে এগোতে থাকলে চোখে পড়বে সবুজাভ দৃশ্য। মাঝে-মধ্যে বানর ও হনুমানের লাফালাফির দৃশ্যও চোখে পড়ে।
নাম না জানা হাজারো পাখির কিচিরমিচির আর এ ডাল থেকে ওডালে যাওয়ার ‘নৃত্য’ পর্যটকদের মনকে আরও উদ্বেলিত করে তোলে।
শ্রীমঙ্গল-মাধবপুর সড়ক ধরে ১৫ কিলোমিটার এগোলেই হাতের ডান দিকে মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখলা চা বাগানে এ লেকের অবস্থান। মৌলভীবাজার শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রকৃতির এ সৌন্দর্যলীলা অবলোকন করতে ছুটে আসেন ভ্রমণপিয়াসুরা। কেউ বন্ধু-বান্ধব, কেউবা প্রিয়জনকে নিয়ে একটু সুন্দর সময় কাটাতে চলে আসেন এখানে।
তবে লেকের ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে পর্যটকদের মধ্যে। শুক্রবারই (১৫ জুলাই) পর্যটকদের নিরাপত্তায় এখানে মাত্র দু’জন পুলিশ সদস্যকে টহল দিতে দেখা যায়।
মুগ্ধতা আর অভিযোগ একইসঙ্গে প্রকাশ করেন নরসিংদী থেকে ঘুরতে আসা মতিন মিয়া। তিনি বলেন, লেকের সৌন্দর্য দারুণ। যে কাউকে মুগ্ধ করবে। তবে লেকের ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে পর্যটকদের জন্যে কোনো বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা নেই। অনেকেই যত্রতত্র চিপস, পানির বোতল ফেলে পরিবেশ দূষিত করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন।
এ নিয়ে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কাউকে পাওয়া যায়নি। টহলরত ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জামিরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিভিন্ন উৎসব ও ট্যুরিজম মৌসুমে এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টহল দেই। কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এখানে।
ঢাকা থেকে প্রায় ২০৭ কিলোমিটার দূরের এই পর্যটন স্পটে সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, রূপালী বাংলা, রূপসী বাংলা, টিআর ট্র্যাভেল, এনা পরিবহনের বাস যাওয়া-আসা করে। এসব পরিবহনে ভাড়া পড়বে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা। তবে কোনো এসি বাস সার্ভিস নেই শ্রীমঙ্গলে।
এছাড়া ঢাকা থেকে কালিনী এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করেও শ্রীমঙ্গল আসা যায়।
শ্রীমঙ্গলে যাত্রাবিরতি দিয়ে যাওয়া যাবে লেকটিতে। জেনে রাখা ভালো, ওই লেকে থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। শ্রীমঙ্গল অথবা মৌলভীবাজার থেকে অটোরিকশা অথবা ব্যক্তিগত পরিবহনে যেতে হবে লেকে।
মাধবপুর লেক থেকে ফেরার পথে কালীঘাট সড়কে নীলকণ্ঠ চা কেবিনে পর্যটকরা স্বাদ নিতে পারেন সাত রঙের চায়ের।
পথে পড়বে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ। যা কয়েক বছর আগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা হয়।
জীববৈচিত্র্যের আধার খ্যাত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়তে পারে বিরল কোনো প্রজাতির পশুপাখি।
একই পথে দেখা মিলবে মণিপুরী পল্লীর। কমলগঞ্জের আদমপুর ও মাধবপুরে বসবাস বিচিত্র সংস্কৃতির অধিকারী মণিপুরীদের। এখানে তাদের একটি সাংস্কৃতিক একাডেমিও রয়েছে।
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অগ্রহায়ণের শুরুতে মণিপুরী পল্লীতে বসে আকর্ষণীয় রাস মেলা। পথের ধারে রয়েছে অসংখ্য দোকান। সেখান থেকে মণিপুরী শাল, চাদর, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ব্যাগ, ফতুয়া, পাঞ্জাবিসহ নানান পণ্য কিনে নিতে পারেন পর্যটকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
এমএ/এসআর/এইচএ/