শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে: চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল। দেশের শীতলতম এ স্থানে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চা বাগান।
প্রকৃতির মেলে ধরা সৌন্দর্য আর বিশাল এলাকাজুড়ে ক্লান্তি দূর করার গরম পানীয়ের উৎস চা বাগান যেমন উপভোগ করেন তারা, পাশাপাশি চা শ্রমিকদের জীবনাচরণ নিয়েও তাদের আগ্রহ থাকে।
অনেকেই বাগানে গিয়ে কর্মরত শ্রমিকের ঝোলাটি নিজের কাঁধে নিয়ে ছবি তুলেন, কেউ গল্পের ছলে জেনে নেন তাদের কথা। শ্রমিকরাও বেশ উৎফুল্লভাবেই উত্তর দেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে।
তেমনি এক চা শ্রমিক রেণুবালা ভর (৪০)। বংশ পরম্পরায় এ চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। তার বাবা-মা, এক ভাই ও এক বোনও কাজ করেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাধবপুরে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি এস্টটে।
জানালেন, তার জন্ম বেড়ে ওঠা এ বাগানেই। বাবা মারা গেছেন, মা, ভাই আর বোন এখনও কাজ করেন। বিয়েও হয়েছে এ বাগানেরই এক শ্রমিকের সঙ্গে। তাদের ঘরে তিন ছেলে-মেয়ে আছে।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকেলে মাধবপুর লেকের টিলায় চা বাগানে যখন রেনু কথা বলছিলেন ঠিক তখনই তাকে ঘিরে ধরলেন বেশ কয়েকজন। তার সঙ্গে আলাপে জেনে নিচ্ছেন তাদের জীবন ধারা ও খাদ্য-পছন্দ ইত্যাদি। তিনিও সহাস্যে উত্তর দিচ্ছেন বাগানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের।
সেখানে কথা হয় ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের সঙ্গে, যিনি সস্ত্রীক শ্রীমঙ্গলসহ সিলেটের বিভিন্ন স্পটে ঘুরতে এসেছেন। বললেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) এসেছি শ্রীমঙ্গলে। চা বাগান আর শ্রমিকদের কথা শুনেছি অনেক, তাই এবার ছুটিতে চলে এলাম।
‘চা-শ্রমিকরাও আমাদের এ অঞ্চলের পর্যটনের অংশ। তাদের নানা ঢঙয়ে গাছের পাতা ছেড়া, পাতা বহন করে নিয়ে যাওয়া যে কোনো পর্যটককে আকর্ষণ করে,’ যোগ করেন রংপুরের পীরগাছার সাইদুল।
পাশ থেকেই আলাপে যোগ দিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্য রফিক। তিনি বললেন, প্রতিদিনই এখানে পর্যটকরা আসেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করেন, শ্রমিকদের পাতা ছেড়া দেখেন, সময় কাটান।
তবে নরসিংদী থেকে আসা কলেজ শিক্ষক আবদুল মতিন বলেন, চা একটি অর্থকারী ফসল। আবার পর্যটনেরও অনুষঙ্গ, এক্ষেত্রে এর অংশ চা শ্রমিকরাও। তাদের ছাড়া চা পর্যটন ভাবা যায় না।
ন্যাশনাল টি এস্টেটের শ্রমিক দেবু দে দাশ বলেন, প্রায় প্রতিদিনই অনেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। কী খাই তা জানতে চান, মজুরি কত পাই, কতদিন ধরে কাজ করি, এসব বিষয় জানতে চান।
এতো প্রশ্নে বিরক্ত হন না? আঞ্চলিক ভাষায় দেবু দে বললেন, ‘কী যে কন বাবু, আমরা রাগ হইতাম কিতার লাগি। ভালা লাগে আমরার। ’
তবে পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি অনেক কম পান বলে জানান বাগানের শ্রমিকরা। তারা জানান, দৈনিক ৮৫ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। যা খুবই কম। কিছু রেশন পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী বলেন, কষ্ট করে চা উৎপাদন করেন শ্রমিকরা। সে চা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। তাছাড়া শ্রীমঙ্গলে পর্যটক আকর্ষণেও চা-শ্রমিকদের ভূমিকা রয়েছে। তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। আর বিশ্বের ২৫টি দেশে চা রফতানি করে বাংলাদেশ, যার প্রায় সিংহভাগ উৎপাদন শ্রীমঙ্গলে।
**স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
এমএ/আইএ