ঢাকা: চিরহরিৎ এই বনের নীরবতা ভেঙে দিচ্ছে মানুষ। পিকনিক হৈ-হুল্লোড় বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের এখনকার অবস্থা এমনই। দিনভর সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে কয়েক চক্কর শেষেও দেখা মিলছে না বন্যপ্রাণির। দু’টি উল্লুক পরিবার এই চির হরিৎ বনে আছে এমন তথ্য বন বিভাগের থাকলেও দেখা মিললো না সারাদিনে।
শুরুতেই একঘণ্টার একটি একটি ট্রেইল হাঁটা শেষ হলেও বানর ও কয়েক প্রজাতির পাখি ছাড়া কিছুই দেখা মেলেনি। অথচ প্রতিদিন এসব বন্যপ্রাণি দেখার জন্য হাজারের বেশি পর্যটক এখানে ভিড় করেন।
পর্যটক বাড়ুক এটা চান না বন ও বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞরা। এমনকি গবেষণারত শিক্ষার্থীরাও বলছেন, মানুষের হাঁটাচলা বনে যত বাড়বে, বন থেকে বন্যপ্রাণি তত বিতাড়িত হবে।
সাতছড়িতে চারদিন হলো এসেছেন প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সুফিয়া আক্তার নেহা ও আশরাফুল হাসান সাজ্জাদ । তাদের চোখে উল্লুকের দু’টো পরিবার চোখে পড়েছে। এর একটিতে চারজন ও অন্য পরিবারে তিনজন দেখা গেছে। এসময় তারা ১০ মিনিটের একটি ভিডিও ধারণ করেছেন। সুফিয়া আক্তার নেহার আবার থিসিসের বিষয় উল্লুক। উল্লুক কতটি, কোথায় অবস্থান এবং কী তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের বাধা, সাতছড়িড়ে ঘুরে এসব ডাটা সংগ্রহ করছেন তিনি।
আলাপকালে নেহা জানান, উল্লুকরা মানুষের বাঁধা পেয়ে বনের গহীনে চলে যাচ্ছে। সচরাচর তারা সামনের দিকে বের হচ্ছে না।
তার সঙ্গে যোগ করে সাজ্জাদ বলেন, পর্যটকই এখানে বাঁধা। যত বেশি পিকনিক হবে, যত বেশি পর্যটক এখানে আসবেন, তত বেশি বিরক্ত হবে বন্যপ্রাণিরা।
নেহা আরও বলেন, উল্লুকের প্রিয় খাবার হলো ডুমুরের ফল। এই বনে ডুমুরের গাছ অনেক বেশি। এ কারণে দীর্ঘদিন এই প্রজাতি ভারত-বাংলাদেশের এই অঞ্চলে দেখা যায়। এছাড়া আর কোথাও উল্লুক দেখা যায় না।
নেহা তার কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ার পরও উল্লুকের দু’টো পরিবার এখনও আছে এই বনে।
আর শুধু দু’টো নয়, আরও বেশি উল্লুক পরিবার সাতছড়িতে থাকতে পরে বলে মনে হচ্ছে তার। তবে উপাত্ত সংগ্রহ শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে জানান তিনি।
আর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কান্তিও বললেন, প্রাকৃতিক ছড়াগুলো বালিতে ভরাট হয়ে যাবার কারণে শুকিয়ে গেছে। এটা বন্যপ্রাণির জন্য মারাত্মক হুমকি। এখন ছড়ার বিকল্প হিসেবে কয়েকটি পুকুর খনন করার পরিকল্পনা আছে বন বিভাগের।
বন বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, বৃহত্তর সিলেট এলাকার বন ছাড়াও ভারত (উত্তর-পূর্বাংশ), মিয়ানমার (পশ্চিমাংশ) এবং চীনেও (দক্ষিণাংশে) উল্লুক দেখা যায়। তবে একমাত্র শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক (Hoolock Gibbon)। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। লাউয়াছড়ার বনেও এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। দুই দশক আগে এই বনে কয়েক হাজার উল্লুক দেখা যেতো। এখন এ সংখ্যা একশোর নিচে এসে ঠেকেছে।
** ট্রেইলে নয় ওয়াচ টাওয়ারে সাতছড়ি দর্শন
** বাসে বিমানের ছোঁয়া!
**এসি বাস নেই সিলেট রুটে!
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এসএ/পিসি