ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পানি নয়, সাতছড়ির ছড়ায় এখন শুধুই বালু

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
পানি নয়, সাতছড়ির ছড়ায় এখন শুধুই বালু ছবি: ডিএইচ বাদল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হবিগঞ্জ থেকে: সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে বিশাল ছড়া। এক সময় পাহাড়ি ঝরনার পানি গড়াতো এই ছড়া দিয়ে।

এই ছড়ার পানিতে রুই, কাতলা, পুটি, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরতো স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এই লোকগুলো এই বনকেই ঘিরে বেঁচে আছে।

তাদেরই একজন সাতছড়ি বনের গার্ড চিত্ত রঞ্জন দেববার্মা, বয়স ৪৫ বছর। তিনি বলেন, সাতছড়ি পাহাড় থেকে মাধবপুর নদী পর্যন্ত একটা বিশাল ছড়া ছিলো। এই ছড়ার পানিতে বোয়াল, বাইন, রুই, কাতলা মাছ ধরেছি। মাছ ধরে পিকনিক করে খেতাম। সেই দিন আর নাই। সেই সুযোগ আর আসবেও না।

চিত্ত রঞ্জন জানান, সাতছড়ি বনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা এই ছড়ায় যখন পানি ছিলো, তখন বন্যপ্রাণির আধার ছিলো পুরো সাতছড়ি বন। এখন অনেক প্রাণীই চলে গেছে।

কী কারণে ছড়া ভরে গেছে? চিত্ত রঞ্জনের মতে, উদ্যানের ছড়া পাহাড়ি বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। পাহাড়ের লাল বালু দেখতে অনেকটাই স্বচ্ছ। বালু দেখলে মনে হবে কেউ জাল দিয়ে বালু ঝেড়ে রেখেছে। এই বালুর ওপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটলেও গায়ে লাগবে না।

এই ছড়ার পানিতেই একসময় চিতা বাঘ, মেছো বাঘ, হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, বন্য হাঁস, মাছরাঙা, শেয়াল গোসল করতো। মেটাতো তৃষ্ণাও। কিন্তু সেসব এখন শুধুই অতীত।

শনিবার (১৬  জুলাই) সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানের এই ছড়া এখন যেন বালুর স্তূপ। কোথাও এক ফোঁটা পানি নেই। আশাপাশে স্বল্প দূরত্বেও কোনো পানি নেই। বর্ষাকালে পানি না থাকলে শুষ্ক মৌসুমে তো পানির কথা চিন্তা করাই যায় না।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও- বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার) মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে জানান, বনের ভেতর ছড়া না থাকা প্রাণীকূলের জন্য মারাত্মক হুমকি। কোনো প্রাণী গোসল করতে পারে না, খেতেও পারে না। প্রাণীদের জন্য পানির ব্যবস্থা না করতে পারলে ওরা স্থান ত্যাগ করবে, যা বনের অস্তিত্বের জন্য হুমকি।

উদ্যানের বাইরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ছড়া মরে বালু চরে পরিণত হয়েছে। যে কারণে বনের ভেতর ছোট আকারে পুকুর করার পরিকল্পনা চলছে। একটি করাও হয়েছে। বাকিগুলো এই অর্থবছরেই হয়ে যাবে বলে জানান বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মোট আয়তন ২৪৩ দশমিক ১০ হেক্টর। ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর এই বনকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে এ বন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবল একেবারেই কম। মাত্র ৫ জন গার্ড ও একজন বিট অফিসার দিয়েই এই বনের তদারকি করা হচ্ছে।  

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশমূল্য বড়দের ২০ টাকা এবং ছোটদের জন্য ১০ টাকা। আর বিদেশিদের জন্য ২৫ টাকা। এখানে একটি পিকনিক স্পটও রয়েছে।

তাই যে কেউ পিকনিক করতে চাইলে চলে আসতে পারেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। উদ্যানটি ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ও শ্রীমঙ্গল থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। এ উদ্যান সাতছড়ি বিটের রঘুনন্দন পাহাড়ি সংরক্ষিত বনের একটি অংশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এসএম/এইচএ/

**প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য অনন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
** ভাড়াউড়া লেকের সৌন্দর্যে কালো মেঘ যোগাযোগ ব্যবস্থা
**লাউয়াছড়ায় ১৫ হেক্টরের মধ্যেই দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ
**লাউয়াছড়ায় অর্থকরী ফসলের আত্মকথা
**নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ