শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন ঘুরে: উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রেলওয়ে জংশন শায়েস্তাগঞ্জ। এখান থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করে বিভিন্ন ট্রেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে শাখা লাইনের দু’টি ট্রেন বন্ধ। আছে অব্যবস্থাপনা, টিকিট সংকটসহ নানা সমস্যাও। সব মিলিয়ে বর্তমানে ‘জংশন’ বিশেষণ বেমানান হয়ে পড়েছে শায়েস্তাগঞ্জের ক্ষেত্রে।
হবিগঞ্জ সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কালের স্মৃতি বহনকারী খোয়াই নদীর তীরের জনপদ শায়েস্তাগঞ্জ। এ জনপদের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার যোগাযোগ স্থাপন ও চা-পাথর রফতানির জন্য ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা শাখা লাইন নির্মাণ করে আসাম বেঙ্গল কোম্পানি।
৭ দশমিক ৫৫ বর্গকিলোমিটারের শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন হয়েই গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। এর পাশে মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি মেজর জেনারেল এম এ রবের নামাঙ্কিত গোলচত্বর।
চত্বরটি বেশ জমজমাট। শুক্রবারও (১৫ জুলাই) সেখানে গিয়ে দেখা গেলো একই চিত্র। শ্রাবণের মেঘলা আকাশের ভ্যাপসা গরম কিংবা কখনও বৃষ্টির ঝাপটাও তাতে বাগড়া দিতে পারে না।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সাঁই সাঁই গতিতে গন্তব্যে ছুটে চলছে বিভিন্ন পরিবহন। কোনোটি আবার যাত্রী ওঠা-নামায় ব্যস্ত। এর ঠিক কয়েশ’ গজ পূর্বে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে ভেজা সকালে ফুঁ ফুঁ হুইসেলে ছাড়ছে সিলেটগামী সুরমা মেইল ট্রেনটিও।
প্লার্টফর্মের বিভিন্ন চা স্টল কিংবা বুকস্টল না খুললেও দৌড়ে ট্রেন ধরতে ব্যস্ত ছিলেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। অনেক ছিন্নমূলকে গায়ের কাপড় মুড়ি দিয়ে ঘুমুতেও দেখা গেলো।
ফের যাওয়া যাক এমএ রব চত্বরে; যেখান থেকে দক্ষিণের সোজা রাস্তাটি চলে গেছে চুনারুঘাটের দিকে। আর পূর্বদিকে রুটটি মরা খোয়াই পেরিয়ে এগিয়ে গেছে সিলেট-মৌলভীবাজার, উত্তরেরটি সোজা হবিগঞ্জে। সেখান থেকে উত্তর পূর্বের এমএ রব গেট দিয়ে এগোলেই বল্লা রেলক্রসিং। যদিও এখন ক্রসিংয়ের চিহ্ন মাত্র নেই।
থাকবেই বা কেন? ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধের পর বিভিন্ন সময়ে সংস্কার-নির্মাণের পর সড়কে সমান হয়ে গেছে তা। তবে ট্রেন লাইন বন্ধ কেন? এর উত্তর জানা নেই স্টেশন মাস্টার তৌফিক আহমদেরও। তার ভাষ্য, ‘বলতে পারি না, সরকার জানে। ’
তবে গুরুত্বপূর্ণ এই রুট অচল হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগে স্থানীয়দের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ১৯৯৬ সালের পর এ লাইনে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সর্বশেষ চলে ২০০২ সালে। ওই বছরের ১৬ জুলাই ট্রেন চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরে ওই শাখা লাইনের বিভিন্ন স্টেশনে কর্মরত স্টেশন মাস্টারসহ কর্মচারীদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তখন এসব স্টেশনের ভবনের দরজা-জানালা, চেয়ার-টেবিলসহ মালামাল চুরি হয়ে যায়।
একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে বিভিন্ন স্টেশনের চালার কিছু টিন খুলে নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা সেকশনের স্টেশনগুলোর মালামাল অব্যাহতভাবে এখনও চুরি হচ্ছে। কয়েক জায়গায় লাইনের পাতও তুলে ফেলা হয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়েই দিনে-রাতে ১১টি ট্রেন চলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এরমধ্যে সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলে আন্তঃনগর উদয়ন ও পাহাড়িকা। চলাচল করে জালালাবাদ মেইল।
আর ঢাকা-সিলেট রুটে উপবন, কালনী, জয়ন্তিকা ও পারাবত এক্সপ্রেস। আসা-যাওয়া করে সুরমা মেইল, তবে এ ট্রেনের গতিকে পরিশ্রমী কচ্ছপের সঙ্গে তুলনা করতে ছাড়েন না ভ্রমণকারীরা। আখাউড়া-সিলেটেও রয়েছে ডেমু ট্রেন (সিলেট কমিউটার)। এ রুটে চলে কুশিয়ারা এক্সপ্রেসও।
বাল্লা লোকাল চলে শায়েস্তাগঞ্জ-ভৈরব রুটে। বাল্লা যাওয়ার কথা থাকলেও অচল লাইনের কারণে শায়েস্তাগঞ্জেই ক্ষান্তি দিতে হয় এটিকে।
স্টেশনে ছয় লাইনের মধ্যে তিনটি সচল। বাকিগুলোকে পুরনো-অকেজো বগির ভার বহন করেই কাটিয়ে দিতে হচ্ছে বছরের পর বছর।
অব্যবস্থাপনাসহ রয়েছে যাত্রী ভোগান্তির অভিযোগও। সম্প্রতি নতুন ভবন নির্মাণ হলেও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব রয়েছে।
স্টেশনে সিলেটগামী যাত্রী ওয়াহেদ মিয়া বলেন, এ অঞ্চলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জংশনে বিশ্রামাগারগুলোর অবস্থা করুণ। সর্বত্র দুর্গন্ধ।
‘এমনকি যাত্রীদের খাবারের জন্য কোনো মানসম্মত রেস্টুরেন্টও নেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিৎ। বন্ধ লাইনও চালু প্রয়োজন। ’ যোগ করেন তিনি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার তৌফিক আহমদ বলেন, ‘এখানে কোনো মাস্টারই নেই, গ্রেড-৩ এর তিনজন আছেন। তারাই সেই দায়িত্ব পালন করেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এমএ/এইচএ/
** সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে
** দু’টি পাতার একটি কুড়ির নিচেই অন্ধকার
** পর্যটনে আকর্ষণ তারাও
** স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’