ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হারিয়ে যাচ্ছেন হবিগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
হারিয়ে যাচ্ছেন হবিগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ছবি: আবু বকর সিদ্দিকী

হবিগঞ্জ ঘুরে: হারিয়ে যাচ্ছে হবিগঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ হবিব উল্লা’র নাম। জেলা শহরের দক্ষিণে সুলতানশি হাবেলিতে তার মাজারে এখন এপিটাফ তো দূরের কথা, কোনো সাইনবোর্ডও রাখা হয়নি।

উপরোন্তু তার মাজার ঘিরে তারই উত্তরসূরীদের বেশ ক’টি মাজার গড়ে মূল মাজারটির গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা গেলো, আশেপাশে মাত্র দু’তিন দশক আগে দেওয়া কবরগুলোতে নামফলক আর সাইনবোর্ড থাকলেও সৈয়দ হবিব উল্লার কবরে তেমন কিছুই রাখা হয়নি। স্থানীয়দের কাছেও তাই অপরিচিত হবিগঞ্জের জনক।

তিনি সিলেট জয়ী হযরত শাহজালালের অনুসারী ও সুলতানসি হাবেলির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের উত্তরসূরী। হবিগঞ্জের অন্যতম নদী খোয়াই তীরে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ফলে বাজার শব্দের পরিভাষা ‘গঞ্জ’ শব্দটি হবিব উল্লার নামের সঙ্গে মিলে হবিব গঞ্জ নামের উৎপত্তি হয়। কালের পরিক্রমায় মাঝের ‘ব’ অক্ষরটি বাদ পড়ে হবিগঞ্জ নামটি টিকে থাকে।  

হবিব উল্লা’র মাজারে যেতে শহর থেকে দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জের পথ ধরতে হলো। ধুলিয়াখাল বাজারে এসে পূর্ব দিকে কিছু দূর এগুতেই পাওয়া গেলো খোয়াই নদী। চুনারুঘাটের কাছে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এই খোয়াই নদীর এখানটায় ধুলিয়াখাল-মিরপুর রোডে যে ব্রিজটি পাওয়া গেলো তার গোড়ার বাজারটির নাম কৈতোয়া ফেরিঘাট। খোয়াই এখানে দক্ষিণ-থেকে উত্তরে এগিয়েছে।  

এক সময় যে নদীতে ফেরি চলতো তার এখন মরণ দশা। শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টের মতো এখানেও প্রবাহ কম চোখে পড়লো। রুগ্ন খোয়াই পেরিয়ে হাতের ডানে পড়লো মশাজানের দিঘি। বিশাল এই দিঘির নির্দিষ্ট মালিক নেই। যার যখন ইচ্ছা ছিপ বা জাল ফেলে মাছ ধরে খেতে পারে।  

মশাজান পেরিয়ে হাতের বাঁয়ের রাস্তা ধরে কিছু দূর এগুতে সুলতানসি হাবেলি পড়লো হাতের ডানে। বিশাল এক পুকুরের পাড়ে তিন তিনটি বিশাল ঘরে সারি সারি মাজার। হবিব উল্লা’র মাজার মাঝের ঘরটাতে। এক দল স্থানীয় বাসিন্দা বসে আড্ডা দিচ্ছেন হবিব উল্লা’র মাজার এর পাশে। তাদের কারো কাছে জিজ্ঞাসা করে হবিব উল্লা সম্পর্কে কোনো কিছু জানা গেলো না। এ নামে এখানে কেউ ছিলেন বলেই স্বীকার করলেন না তারা।  

অগত্যা পুকুর পাড়ের বাড়িতে বাড়িতে কিছু সময় খোঁজ-খবর করার পর পাওয়া গেলো হবিব উল্লা’র মাজারের সন্ধান। পুকুরের কোণায় তার মাজারের তিন দিক ঘিরে আরো অনেককে সমাহিত করা তো হয়েছেই, দু’পাশে গড়া হয়েছে আরো মাজার কমপ্লেক্স।  

হবিগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতার সমাধি খুঁজতে এমন গলদঘর্ম হওয়ার অভিজ্ঞতা শেষ পর‌্যন্ত বেদনাদায়কই হয়ে উঠলো। হবিগঞ্জে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি রক্ষায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়লো না। কেবল জেলা তথ্য বাতায়নে এই সুলতানসি হাবেলির আলোচনায় হবিব উল্লা’র নামটি উল্লেখ করে দায়সারা হয়েছে। উপরোন্তু এখানে আসতে হলে খোঁজ করতে হবে সুলতানসি হাবেলির। হবিব উল্লা’র কথা বলে এখানকার ঠিকানা খুঁজে বের করা কিছুতেই সম্ভব হবে না।

জেলা তথ্য বাতায়নে বলা আছে, হবিব উল্লা’র প্রতিষ্ঠা করা হবিবগঞ্জ থানা হয় ১৮৬৭ সালে। তবে হবিব উল্লা ঠিক কতো সালে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন তা উল্লেখ করা নেই। ১৮৭৮ সালে মহকুমায় রূপান্তরিত হয় হবিগঞ্জ। ১৯৬০ সালে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) এর অফিস স্থাপিত হয় এখানে।  ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ হবিগঞ্জ উন্নীত হয় জেলায়।  

বর্তমানে এ জেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলা , দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা।


বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
জেডএম/

**সাত শতাব্দীর সাক্ষী শঙ্করপাশা মসজিদ
**চুন ব্যবসায়ীর ঘাট থেকে মুক্তিযুদ্ধের সদর দপ্তরে
** চুরি গেছে মুড়ারবন্দরের শিলালিপি
**চেনা-অচেনা বন্য প্রাণীদের সঙ্গে লুকোচুরি
**বেটা-বেটির পুঞ্জি ঘুরে বীজহীন বাগানে
** রাত দুপুরে গভীর বনে ভয়ের সঙ্গে পাঞ্জা
** বন্যপ্রাণির বুনো গন্ধে মাতাল লাউয়াছড়ার রাত
**তপ্ত জলে মিশে আছে নির্মাইয়ের কান্না
** চায়ের রাজধানী সবুজ শীতল শ্রীমঙ্গলে
**৪ ঘণ্টায় চায়ের দেশে
**ট্রেন চলেছে চায়ের দেশে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ